পাবনার ঈশ্বরদীতে আবারো দিনদিন বেড়েই চলছে মরণ নেশা ইয়াবা, হেরোইন ও ফেন্সিডিলের ব্যবস্য। এই মাদকের ভয়াল থাবায় নষ্ঠ হচ্ছে যুব সমাজ। বাঘা চারঘাট হয়ে বিভিন্ন মাদক ফেন্সিডিল, গাঁজা, হেরোইন ও ইয়াবা আসছে। এছাড়াও ব্রিটিশ শাসনামল থেকে ঈশ্বরদীর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন এলাকার রেলপথ সংযোগ রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় দেশের কক্সবাজার, টেকনাফসহ মাদক স্পট থেকে ইয়াবা, হেরোইন, কোকেন আসছে ঈশ্বরদীতে। মাদক ব্যবসা করে ঈশ্বরদী শহরের পিয়ারাখালির কাচারিপাড়া (ব্লাকপাড়া), ফতেমোম্মাদপুর লোকোসেট, এমএস কলোনির তিন তলা মোড়, শেরশাহ রোড ও আলহাজ্ব রিফুজি ক্যাম্পের বেশ কিছু মাদক ব্যবসায়ী হয়েছেন কোটিপতি। বাস করছেন বিলাস বহুল বাড়িতে। চড়েন নামি দামী গাড়িতে। কয়েকজন আবার মাদক ব্যবসার পাশাপাশি অন্য ব্যবসাও খুলে বসেছেন। দুই একজন জনপ্রতিও নির্বাচিত হয়েছেন। এসব এলাকায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দেখা যায় মরণ নেশা ইয়াবা, হিরোইন, ফেন্সিডিল ও গাঁজা সেবনকারিদের আনাগোনা। এসব মাদক ব্যবসায়ী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ৭-৮ টি করে মাদক মামলাও রয়েছে। জেল হাজতেও গিয়েছেন। তারপরও থেমে নেই তাদের মাদক ব্যবসা। অনেক মাদকাসক্ত সেবিরা মাদকের টাকা যোগাড় করতে না পেরে লিপ্ত হতে চলেছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মত বিভিন্ন অপরাধ মুলক কাজে। এতে করে বাড়তে শুরু করেছে নানা অপরাধ প্রবনতা। মাদকের টাকার জন্য অনেকেই আবার মা-বাবার সাথে করছে অমানবিক ব্যবহার ও অত্যাচার। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈশ্বরদী শহরেই তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের সংখ্যা প্রায় ৩৪ জন। শহরেই প্রায় দেড় শতাধিক মাদকস্পট রয়েছে। এরমধ্যে অরণকোলা গরুহাট পাড়া, ভাঁটাপাড়া, মোকারামপুর, ফতেমোহম্মাদপুর, তিন তলা মোড়, বাইপাস ডবল রেল লাইন মোড়, আমবাগান, শেরশাহ রোড বেলতলা, কদমতলা, আলহাজ্ব ক্যাম্প পাড়া, ব্লাক পাড়া, কাচারিপাড়া, রহিমপুরের শৈলপাড়া, পিয়ারপুর, সাঁড়া গোপালপুরের তালতলা মোড়, তিন কোনা পুকুরপাড় উল্লেখ যোগ্য। ইতিপূর্বে ঈশ্বরদীর এক মাদক ব্যবসায়ী আলিয়া ভুলুকে ক্রস ফায়ারে হত্যা করা হয়। ঈশ্বরদীর কয়েকটি প্রভাশালী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান মাদকাসক্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করার ঘটনাও ঘটেছে। স্থানীয়, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ঈশ্বরদী থানা সুত্র মতে, শহরের পিয়ারাখালি কাচারিপাড়ার (ব্লাকপাড়া) আলোচিত মাদক ব্যবসায়ী মোহাম্মাদ আলী বাবু ওরফে বরকি বাবু। তার নামে ২০১১ সাল থেকে এই পর্যন্ত মাদক মামলা হয়েছে ৯ টি। তার ছেলে মোঃ সুমন শেখের বিরুদ্ধে ঈশ্বরদী থানায় মামলা রয়েছে ৪ টি ও পাবনা সদর থানা মিলে ৫টি মামলা রয়েছে। বরকি বাবুর স্ত্রী স্বরবানী ওরফে বাঁচার নামে একটি মাদক মামলা রয়েছে। বরকি বাবুর মেয়ের নামেও মামলা রয়েছে। এই পরিবারটি হেরোইনের পাশাপাশি কোকেনের ব্যবসায় ঈশ্বরদীসহ আশেপাশের এলাকার মধ্যে সেরা মাদক ব্যবসায়ী। এর আগে তার বাড়ি থেকে কোটি টাকার হেরোইন ও সোনা চোরাচালানকারী সদস্যদেরও আটক করা হয়েছিল। সূত্র মতে জানা যায়, ঈশ্বরদী শহরের ফতেমোহাম্মাদপুর লোকোসেড এলাকার মৃত পিয়ারুর ছেলে নাদিম ও তার আপন বড় ভাই বেদিন সোহেল, নুরুর ছেলে উজ্জ্বল ওরফে ইনটেক উজ্জ্বল, আব্দুল করিমের ছেলে আরিফ, আসলাম খার ছেলে একরাম খা, তিন তলা এলাকার আসাদুলের ছেলে পিন্টু, শেরশাহ রোডের কামরুদ্দিনের ছেলে আফতাব আলী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অটোরিক্সা চালক বলেন, রেলওয়ে ডায়াবেটিকস হাসপাতালের পিছনে গাজা সেবনকারী মোঃ নূরু হোসেনের মেয়ে মোছাঃ রোজিনা বেগমের কারণে এই এলাকায় কিশোরগ্যাংদের অপকর্ম বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং নেশা সেবনকারীরা মাদকের টাকা জোগাড় করতে সমাজে নানা অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাদের প্রত্যেকেই একাধিক মাদক মামলার আসামী। শহরের পিয়ারাখালি কাচারিপাড়ার (ব্লাকপাড়া) আলোচিত মাদক ব্যবসায়ী মোহাম্মাদ আলী বাবু ওরফে বরকি বাবুর ছেলে মোঃ সুমন শেখ বলেন, আমরা কেউ মাদক ব্যবসা করি না। তবে তিনিসহ তার পরিবারের সদস্যরা এতগুলো মাদক মামলার আসামী কেন সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি সুমন শেখ। ঈশ্বরদী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঈশ্বরদীর অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা সব সময় মাদক দ্রব্যের বিষয়ে কঠোর। মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারে স্বোচ্চার। প্রতিদিনই অভিযান চালিয়ে মাদক কারবারিদের আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হচ্ছে। আমাদের দুই একজন কর্মকর্তাদের মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে লেনদেন থাকতে পারে। তাদের নজরদারীদের রাখা হয়েছে দাবী করে তিনি আরও বলেন, মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় ঈশ্বরদীকে সম্মেলিতভাবে মাদক মুক্ত করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন এমপি মহাদয়। আমরা এখন তাঁর নির্দেশনামতে কাজ শুরু করেছি। ঈশ্বরদী থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, মাদকের বিষয়ে আমরা সব সময় জিরো টলারেন্সে আছি। এমপি মহাদয়ের নির্দেশনার পর মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানের গতি আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। মাদক মুক্ত করতে চিরুনি অভিযান শুরু করা হয়েছে। পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) সংসদ সদস্য গালিবুর রহমান শরীফ বলেন, সম্মিলিতভাবে যেকোন মুল্যে ঈশ্বরদীকে মাদক মুক্ত করতে আইনশৃঙ্খলা সভায় স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারী কে কোন দলের এবং কোন পরিবারের তা না দেখে ও দলীয় কোন নেতা বা জনপ্রতিনিধির সুপারিশ না শুনতেও স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।