শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৫৭ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

চতুর্থ শ্রেণির সেই শিশু জন্ম দিল নবজাতক

মো. আখলাকুজ্জামান, গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি:
আপডেট সময়: শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ১১:০২ অপরাহ্ণ

ধর্ষণের শিকার চতুর্থ শ্রেণির সেই শিশুটি ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে। শনিবার দুপুর ১২ টার দিকে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে নবজাতকটির জন্ম দিয়েছে ১১ বছরের শিশুটি। মা এবং নবজাতক দুজনেই সুস্থ্য আছে।

জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নার্গিস তানিমা ফেরদৌস ও এ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক ফেরদৌস রহমানসহ ছয় সদস্যের চিকিৎসক টিম শিশুটির সিজারিয়ান অপারেশন করেন। গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নার্গিস তানিমা ফেরদৌস বলেন, প্রসূতি শিশুটির বয়স একেবারেই কম। একারণে স্বাভাবিকভাবে সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে জরায়ু ছিড়ে যাওয়াসহ নানান ধরণের ঝুঁকি ছিল। একারণে সিজারিয়ান অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে শিশুটির শরীরে রক্তের মাত্রা কম থাকায় দুই ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে। অপারেশনের মাধ্যমে ৩ কেজি ওজনের ফুটফুটে সন্তান জন্ম দিয়েছে ওই শিশু। অপারেশন পরবর্তী সময়ে দুজনেই সুস্থ্য রয়েছে।

নবজাতককে কোলে নিয়ে শিশুটির চাচি অভিযোগ করেন, নবজাতক জন্ম নিয়েছে ঠিকই, তবে পরিচয় নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। পিতা-মাতা হারা শিশুটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছিল প্রতিবেশি দাদা জাহিদুল খাঁ (৫৫)। জাহিদুলকে গ্রেপ্তার করা হলেও বিচার পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে পরিবারে। কারণ জাহিদুল গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে হুমকি দিচ্ছে তার ¯^জনেরা। ধর্ষক জাহিদুল গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের দক্ষিণ নাড়িবাড়ি গ্রামের কালু খাঁর ছেলে। ঘটনার পর থেকে তিনি গা ঢাকা দিয়েছিলেন।

পুলিশ জানিয়েছে, ধর্ষণের শিকার শিশুটির দাদির মামলায় সম্প্রতি ধর্ষক জাহিদুল খাঁকে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার হেলেঞ্চা গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে ধর্ষক জাহিদুল কারাগারে আছেন।

শিশুটি জানায়, ঘটনার দিন শুক্রবার ছিল। দুপুরে গোসলের পর বাড়ির ভেতর কাপড় পরিবর্তন করছিল সে। বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে ধর্ষক জাহিদুল পেছন থেকে তাকে জাপটে ধরে মুখে গামছা পেঁচিয়ে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি কাউকে জানালে গলা কেটে হত্যার হুমকিও দেন। ওই ঘটনায় সে দুইদিন অসুস্থ ছিল। ভয়ে বাড়ির বাহিরে যাওয়া হয়নি।

শিশুটির পরিবার জানিয়েছে গত বছরের নভেম্বর মাসে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হলেও শিশুটির দাদি বাদি হয়ে ১৮ জুন ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। পরদিন ১৯ জুন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ১৬৪ ধারায় শিশুটির জবানবন্দি গ্রহণ করেন আদালত। মামলার বাদি শিশুটির দাদি জানান, এখন তারা ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

শিশুর চাচা জানান, শিশুটির পিতা-মাতা দুজনেই পৃথকভাবে বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন। ছোট থেকে শিশুটিকে তারাই লালন পালন করছেন। স্থানীয় একটি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে সে।

গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মুজাহিদুল ইসলাম জানান, হাসপাতাল এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিশুটির চিকিৎসা ব্যয় বহন করা হচ্ছে।

গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোনোয়ারুজ্জামান বলেন, ভুক্তভোগি শিশুর পরিবারকে সব ধরণের আইনি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর