সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১২:২৬ অপরাহ্ন

ই-পেপার

টানা বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত

মোঃ মুন্না হুসাইন, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি:
আপডেট সময়: বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০৭ অপরাহ্ণ

টানা সাত দিনব্যাপী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সিরাজগঞ্জ তাড়াশ উপজেলায়  জনজীবন। গত শুক্রবার  থেকে শুরু হয়েছে টানা বৃষ্টিপাত। আজ বৃহস্পতিবার  দুপুর পর্যন্ত কখনো হালকা, কখনো মাঝারি ও কখনো বা ভারি বৃষ্টিপাত হয়েই চলেছে। এতে নিচু এলাকার আমন চাষিরা রয়েছে দুশ্চিন্তায়। শ্রমজীবী ও দিনমজুরেরা পড়েছে বিপাকে। আবার কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক জনদুর্ভোগের। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রভাব পড়েছে।
জানা গেছে, টানা বৃষ্টিপাতের কারণে তাড়াশ ও সলঙ্গা নি¤œাঞ্চল তলিয়ে যাচ্ছে। এতে নিচু জমিগুলোর আমন ধানের চারার ক্ষতি হবার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। তাছাড়া বৃষ্টিতে বেশি সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে শ্রমজীবী, দিনমজুর ও দৈনিন্দিন কাজে বের হওয়া মানুষগুলো। পাশাপাশি দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বৃষ্টির কবলে পড়ে পশু-পাখি ও প্রাণিরাও রয়েছে মহাসঙ্কটে।
মান্নান নগর বাজারের পত্রিকা হকার জনাব আলী বলেন, বৃষ্টির কারণে পত্রিকা ঠিকমত বিলি করতে পারছি না। উপজেলার অনেক এলাকায় পত্রিকা বিলি করা বন্ধ রয়েছে।
কয়েকজন পাঠক বলেন, আমরা সকালে আগে পত্রিকা পড়ি। কিন্তু বৃষ্টির জন্য বিকাল গড়িয়ে গেলেও পত্রিকা হাতে পাচ্ছি না।
উপজেলার মহেশরৌহালী গ্রামের হাসের খামারি সিরাজুল ইসলাম বলেন, যখন বৃষ্টি দরকার ছিল, তখন বৃষ্টি হয়নি। বৃষ্টির পানির অভাবে এবার পাট জাগ দিতে নানা সমস্যায় পড়েছি। পাটের সমস্যা যেতে না যেতেই পানির অভাবে আমন চাষ নিয়ে বিপাকে পড়ি। পরে জমিতে সেচ দিয়ে আমন ধানের চারা রোপন করতে হয়। মাঝে মধ্যে হালকা বা মাঝারি বৃষ্টি হলে আমনের অনেক উপকার হতো। কিন্তু যেভাবে টানা বৃষ্টি হচ্ছে- তাতে আমন ধানের ক্ষেত তলিয়ে গিয়ে ক্ষতি হতে পারে।
নওগাঁ ইউনিয়নে মহেশরৌহালী গ্রামের কাঠমিস্ত্রি আলহাজ ও বিরলহালী গ্রামের রাজমিস্ত্রি এনজা বলেন, বৃষ্টিতে কোনো কাজ করতে পারছি না। ঘরে বসে অলস সময় পার করা ছাড়া এখন আর কোনো উপায় নেই। এতে প্রতিদিন আমরা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় বঞ্চিত হচ্ছি।
পংরৌহালী গ্রামের কৃষক হামিদ ও হাফেজ মোল্লা বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণের গরু-ছাগল লালন-পালন করা মুসকিল হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির পাশাপাশি ব্যাপক বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এমন অবস্থায় মাঠে গিয়ে গরু-ছাগলের খাবার (ঘাস) সংগ্রহ করতে পারছি না। আবার বাড়িতে থাকা হাস-মুরগি পালনেও মহিলারা বিপাকে আছে।
ভ্যানচালক আলামিন হোসেন, ও অটোরিক্সাচালক সিরাজুল ইসলাম  ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক মজনু মোল্যা বলেন, বৃষ্টির কারণে আজ কয়দিন ধরে ঠিকমত গাড়ি চালাতে পারছি না। বৃষ্টি কম দেখে গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হলেই আবার মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। এতে অনেক সময় বৃষ্টির পানিতে মাথা ভিজে জ্বর-কাঁসিসহ নানা রোগে অসুস্থ হয়ে পড়া লাগে। তাছাড়া বৃষ্টির কারণে যাত্রীও চলাচল করে কম। যেকারণে আমাদের কষ্টের শেষ নেই। আমরা দিন কামাই করি দিন খাই। এভাবে বৃষ্টি হলে আমাদের সংসার চালানো মুসকিল হয়ে পড়বে।
মাগুরা  ইউনিয়নের হাকুড়িয়া গ্রামের দিনমজুর আলমাছ ও শাহনেওয়াজ বলেন, আমরা অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাই। জমির কাজ না থাকলে ইট ভাটায় কাজ করি। প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করি। এই টাকা দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে ডাল-ভাত খেয়ে কোনো রকম বেঁচে থাকি। কিন্তু যেভাবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, এভাবে চলতে থাকলে আর দুই-চারদিন পর আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।
তাড়াশ, ও মহিষলুটি বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, লাগাতার বৃষ্টি কারণে বাজারে ক্রেতারা আসছে কম। আমরাও ঠিকমত দোকান খুলতে পারছি না। তবে বেশি বিপদে আছে ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা। তারা উম্মুক্ত স্থানে বসে বেচাকেনা করতে পারছে না।
উপজেলার কৃষি অফিসার  বলেন, বৃষ্টির কারণে যেসব এলাকা তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি বন্ধ হলে এসব পানি নেমে যাবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর