করনার প্রকোপ আবার হুহু করে বাড়ছে। গত ২৪ ঘন্টায় মোট ১০,৮২২ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এরমধ্যে ১,৭৯০ জনের দেহে করনা শনাক্ত হয়েছে যার শতকরা হার ১৭। গত এক সপ্তাহে মোট ১,৯৫,৪৭৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এরমধ্যে ২৯,২৯০ জনের দেহে করনা শনাক্ত হয় যার শতকরা হার হল ১৫। গত একমাসে করনা শনাক্তের শতকরা হার হল ১১। বর্তমান হাল দৈনিক, সাপ্তাহিক এবং মাসিক করনা শনাক্তের হার পর্যবেক্ষণ করলে স্পষ্টতঃ প্রতীয়মান হচ্ছে যে, করনার ভয়াল রূপ আবার দেখতে যাচ্ছি যদি এখনই আমরা সবাই সাবধান না হই।
করনা প্রতিরোধ একক কোন বিষয় নয়। এর সাথে লড়তে হলে সামগ্রিকভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের বর্তমান পরিবেশ-পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলে মনে হয় যে, করনা আমাদের কিছুই করতে পারবে না। সমাজে সচেতনতার দারুণ অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমাদের মাঝে “Don’t Care” একটা ভাব দেখা যাচ্ছে। আমাদের অনেকেরই ধারণা যে, করনা আমাদের কিছুই করতে পারবে না কারণ আমরা করনার টিকা নিয়েছি।
রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, বাস-লঞ্চ-ট্রেন স্টেশন সর্বত্রই মানুষ অবাধে চলাচলা করছে। কিন্তু সিংহভাগ মানুষের মুখেই কোন মাস্ক নেই। এ ব্যাপারে আমরা কম-বেশী সবাই উদাসিন। এ পরিস্থিতি আমাদের ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। সরকার, স্থানীয় প্রশাসন এবং স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞগণ বরাবরের মতই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু আমরা তাতে মোটেও কর্ণপাত করছি না। বিষয়টি বড়ই দুঃশ্চিন্তার ও ভয়ানক।
আগামীকাল সারা মুসলিম জাহানে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা পালিত হবে। বিশ্বের কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ পবিত্র ঈদ উদযাপনের অংশ হিসেবে ঈদের জামাতে ও মসজিদে নামাজ আদায় এবং ঈদের শুভেচ্ছা ও কুশলাদি বিনিময় করবেন। এছাড়াও দলে দলে আনন্দ-স্ফর্তি করা, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবীদের বাসায় বেড়ানো সহ নানা ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। এর মানে হল শত-শত, হাজার-হাজার মানুষ একত্রিত হবেন এবং ধর্মীয় আচারাদী পালন করবেন। তাই এ সময় যদি অসতর্কতাবশতঃ মাস্ক ব্যবহার করা না হয় তাহলে আমাদের বড় রকমের পরিণতি ঘটতে পারে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল চোখ-মুখ-নাক যথাযথভাবে আবৃত করে রাখা। এজন্য মাস্ক ও চশমা ব্যবহার করা উচিত। করনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অন্ততঃপক্ষে নাক-মুখ ঢেকে রাখাটা খুবই জরুরী। এক্ষেত্রে আমরা ছোট-বড় সবাই মাস্ক ব্যবহার করতে পারি। বাজারে বিভিন্ন রকম মাস্ক পাওয়া যায়। কোনটি একবার ব্যবহার করে ফেলে দিতে হয়। আবার কোনটি একাধিকবার ব্যবহার করা যায় তবে এটি ব্যবহার করার পর সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধূয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। বাজারে প্রাপ্ত মাস্কগুলোর দাম মোটামুটি নাগালের মধ্যে। একটি মাস্কের অভাবে অবশ্যই আমরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে চাই না। অতএব, ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরুন এবং করনাকে প্রতিহত করুন।
আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ১,৪৪,৭,৮০৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে যার মধ্যে ১৯,৮৬,৪৯০ জনের করনা শনাক্ত হয়। এক্ষেত্রে শতকরা শনাক্তের হার ১৪। উল্লেখ্য যে, এ যাবৎ বাংলাদেশে মোট ২৯,১৮৮ জন করনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। করনার এই ৪র্থ ঢেউয়ে মহান সৃষ্টিকর্তা দুনিয়ার সবাইকে নিরাপদে রাখুন- এই প্রার্থনা করি।