রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৪১ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

শিরোনাম :
শিরোনাম :
কক্সবাজার সদর উপজেলা জাসাস এর পরিচিতি সভা, জাসাস বিএনপি গোলাপ ফুল বললেন প্রধান অতিথি বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী ফোরামের নির্বাহী মহাসচিব নির্বাচিত হলেন আনোয়ার হোসেন মানিকগঞ্জ ১ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীর মোটরসাইকেল শোডাউন নাটোর ইমার্জিং কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন নাটোর রেড টিম আটোয়ারীতে ‘মানিকপীর সোনালী কিন্ডার গার্টেন’-এর কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে বৃত্তি ও সনদ বিতরণ আলীকদমে মাতামুুহুরী নদীতে পড়ে বৃদ্ধের মৃত্যু ভৈরব নদীতে নৌকা বাইচে উৎসবের জোয়ার, দর্শনার্থীর ঢল সাপাহারে ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্স জনবীমী’র পিঠা ও আনন্দ উৎসব 

আগৈলঝাড়ায় বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন নির্মাণ ঠাল কাটার অনুমতিতে সরকারের তিন শতাধিক গাছ কেটে বন বিভাগের লুটপাট দুই শতাধিক সুফলভোগী বঞ্চিত, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: রবিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:১৫ অপরাহ্ণ

রুবিনা আজাদ, আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল:
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় পল্লী বিদ্যুতের ১১ কেভি ব্যাকবন সঞ্চালন লাইন নির্মানের জন্য প্রায় ৭ কিলোমিটার এলাকায় গাছের ঠাল কাটার অনুমতির সুযোগের অপব্যবহার করে উপক‚লীয় সবুজ বেষ্টনী প্রকল্পের আওতায় বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের সড়কে সরকারের রোপিত লাখ লাখ টাকার বিভিন্ন প্রজাতির তিন শতাধিক গাছ কেটে দুই শতাধিক সদস্যর প্রাপ্য অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে গাছ খেকো উপজেলা বনায়ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। দুই শতাধিক সুফলভোগী বঞ্চিত হবার পাশাপাশি রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

গাছের ঠাঁলের পরিবর্তে প্রকাশ্য দিবালোকে গাছের গোরা কেটে ওই কাটা গাছের সাইজ গুড়িগুলো স্থানীয় বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে নগদ অর্থে বিক্রি করাসহ বিভিন্ন ¯^-মিল ও পাচারের উদ্যেশ্যে বিভিন্ন স্থানে রেখে রাতের আধারে ট্রাকে করে পাচার করে দিচ্ছে গাছ খেকো কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এমনকি কাটা গাছের গুড়ির অংশ বিশেষ লোক দেখানোর জন্য উপজেলা পরিষদের সামনে আনলে তাও রাতের আধারে পাচার করে দিচ্ছেন বন খেকো অফিসারের নিযুক্ত শ্রমিকেরা।

আগৈলঝাড়া পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় কাজ করতে ছবিখারপাড় বিদ্যুৎ বিতরণ উপ-কেন্দ্র থেকে কান্দিরপাড় হয়ে সোমাইরপাড়, জোবাড়পার, দক্ষিণ বড়মগড়া হয়ে পুর্বপয়সা পর্যন্ত শতভাগ বিদ্যুতায়ন করতে ১১কেভি ব্যাকবন লাইনের আওতায় ৬.৭ কিলোমিটার লাইনের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। চলমান কাজের অংশ হিসেবে তারা সঞ্চালন লাইনের সমান দু’দিকে ২০ফুট ও লাইনের নীচে ৬ফুট বাদ রেখে ঠাঁল কাটছেন।

বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণের প্রয়োজনে পল্লী বিদ্যুৎ গাছের ঠাঁল কাটার অনুমতি গ্রহন করলেও ঠাঁল কাটার সুযোগ নিয়ে উপজেলা বনায়ন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ লাইনের গাছ কাটায় সরাসরি উপস্থিত থেকে শিশু, মেহগনি, আকাশমনি, রেনট্রি, চাম্বলসহ ছোট-বড় বিভিন্ন প্রতাতির গাছ কেটে উজাড় করছেন স্থানীয় বনায়ন।

টেন্ডার ছাড়া গাছ কাটা ও বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লুটপাটের কারণে স্থানীয় সুফলভোগীরা বঞ্চিত হবার পাশাপাশি সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমান রাজস্ব। এভাবে প্রকাশ্যে বন উজার করে গাছ লুটপাটের ঘটনা অন্তত মাসব্যাপি চলমান থাকলেও তা দেখার যেন কেউ নেই।
স্থানীয় বঞ্চিত সুফল ভোগীরা জানান, সাবেক চীফ হুইপ, স্থানীয় এমপি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই এলাকায় সবুজ বেষ্টনী প্রকল্পর আওতায় ৯৬সালের পর থেকে উপজেলার বিভিন্ন রাস্তায় গাছের চারা রোপন করে সরকার। সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ি স্থানীয়ভাবে গঠন করা সমিতির মাধ্যমে রোপিত গাছ পরিচর্যা শেষে বিক্রির উপযোগী হলে সমিতির মাধ্যমে রেজুলশেন করে গাছ মার্কিং করে টেন্ডার ডেকে গাছ বিক্রি করার কথা রয়েছে। ওই গাছ বিক্রির শতকরা ৫৫ভাগ পাবেন সুফল ভোগী, ৫ ভাগ ইউনিয়ন পরিষদ, ২০ ভাগ পানিউন্নয়ন বোর্ড, ১০ভাগ পুনরায় বনায়ন করার কাজে ব্যবহার ও ১০ভাগ রাজস্ব সরকারী কোষাগারে জমা দেয়ার কথা রয়েছে। টেন্ডার ছাড়া গাছ লুটপাটের ঘটনায় সকল সুফল ভোগীরাই বঞ্চিত হচ্ছে। রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

সুফলভোগীরা অভিযোগে বলেন, তাদের পরিচর্যাকৃত গাছগুলো চোখের সামনে দিয়ে বন বিভাগ কেটে নিলেও কাটা গাছের পাতা ছাড়া তাদের আর কিছুই দিচ্ছে না বন বিভাগের কর্মীরা। গাছ বিক্রি বা টেন্ডারের কোন কথা তারা জানেন না বলেও জানান।

বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের আওতাধীন বাগধা ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টি বলেন, বিদ্যুতের লাইনের জন্য গাছের ঠাঁল কাটার কথা তিনি জানলেও গাছ কাটার কথা তিনি জানে না। তবে স্থানীয় মেম্বর ও লোকজনের মাধ্যমে তিনি কে গাছ কাটে, কাটা গাছ কোথায় যায় তা জেনে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষর কাছে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করবেন।

বিদ্যুৎ লাইনের আওতার সংশ্লিষ্ঠ বাকাল ইউপি চেয়ারম্যান বিপুল দাস বলেন, গাছ কাটার কোন খবর তিনি জানেন না। তবে সরকারের অনুমতি ছাড়া টেন্ডার না করে গাছ কাটার কথা নয়। সুফলভোগীদের বঞ্চিত হবার জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করে আরও বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদকে অবহিত করার মাধ্যমে দোষী ব্যাক্তিদের আইনের আওতায় নিয়ে শাস্তির দাবিও জানান তিনি।

উপজেলা বনায়ন কর্মকর্তা মনীন্দ্র নাথ হালদার বলেন, তারা রাস্তার কোন গাছ কাটছেন না। বিদ্যুৎ অফিস ঠাঁল কাটার সাথে সাথে যে গাছগুলো কাটছে সেই কাটাগাছের গুড়ি ও লাকড়ি উপজেলায় নিয়ে আসছেন তারা। টেন্ডার আহ্বান না করার প্রশ্নে তিনি বলেন, লট করে গাছের টেন্ডার সময় সাপেক্ষ ব্যপার, আর তার আগেই বিদ্যুৎ অফিস গাছ কাটা শুরু করায় কাটা গাছ এক জায়গায় লট করে টেন্ডার ডেকে বিক্রি করা টাকা থেকে সকল সুফলভোগীদের মাঝে হিস্যা অনুযায়ি বন্টন করা হবে। কাটা গাছগুলোর সব গুড়ি উপজেলায় আসার পথে কিভাবে উধাও হয়ে যাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে বনায়ন কর্মকর্তা বলেন, তিনি সব সময় সাইটে যেতে পারছেন না। বাগান মালি দেলোয়ারকে গাছ আনার দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে, কেন সব গাছ উপজেলায় আসছে না সে বিষয়ে তিনি খোঁজ খবর নিবেন। কোথায় কোথায় সরকারী গাছ লুকিয়ে রাখা হয়েছে সে বিষয়ে বনায়ন কর্মকর্তাকে অবহিত করলে বনায়ন কর্মকর্তা ওই সকল জায়গায় নিজে গিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়ে আরও বলেন, লাইন নির্মাণের আওতাভুক্ত এলাকায় গঠন করা সমিতির আনুমানিক দুই শতাধিক সদস্য থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন।

আগৈলঝাড়া পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. হযরত আলী জানান, সঞ্চালন লাইন নির্মানের দ্বায়িত্বে বরিশাল অফিস থেকে টেন্ডার দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে বিভাগীয় বনায়ন অফিসে সহযোগীতা চাওয়া হলে বিভাগীয় অফিস থেকে উপজেলা বনায়ন অফিস তাদের ডালপালা কাটার কাজে সহায়তা করছেন। ঠিকাদার লাইন নির্মানের কাজ শেষ হলে তাদের ডিপার্টমেন্টকে বুঝিয়ে দেয়া পর্যন্ত কাজের দায়ভার ঠিকাদরের। কাটা গাছের গুড়ি কি হবে কে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে সে ব্যাপারে তিনি কিছুই বলতে জানেন না বলে জানান।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুল হাশেম নতুন এসেছেন জানিয়ে বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ কিভাবে কতটুকু অনুমতি নিয়েছে আর বনায়ন কর্মকর্তা কিভাবে গাছ কাটছেন বা কাটা গাছগুলোর কি অবস্থা তা জানার জন্য তিনি পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম ও বনায়ন কর্মকর্তাকে ডেকে বিস্তারিত জানবেন। তারপরে কোথাও অসঙ্গতি দেখলে তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানান।

 

CBALO/আপন ইসলাম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর