শুভ কুমার ঘোষ, সিরাজগঞ্জ:
অসহায় একটি পরিবারের স্বপ্ন পূরণের পথে একধাপ এগিয়ে নিতে ঈদ উপহার হিসেবে নিজ উদ্যোগে সেলাইমেশিন তুলে দিলেন সিরাজগঞ্জের “স্বপ্নজয় বাংলাদেশ” নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। রবিবার (১৭ মে) সকালে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বাংগালা ইউনিয়নের সামাইলদহ গ্রামের মৃত জাহের আলী আকন্দ (মুন্সি) এর বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের নিকট উপহার হিসেবে স্বপ্নজয় বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে সেলাইমেশিন টি পৌঁছে দেন সংগঠন এর কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী সদস্যরা। স্বপ্নজয় বাংলাদেশ এর সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান সহ একাধিক স্বেচ্ছাসেবী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরিবারের একমাত্র উপার্জন কারী মানুষটি ছিলেন জাহের আলী আকন্দ (মুন্সি)।
তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাবার পরে তার স্ত্রী দুই মেয়েকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন। অন্যের বাড়িতে কাজ করে খুব কষ্টে সংসার চালানো এবং এর পাশাপাশি দুই মেয়ের পড়াশোনার খরচও চালিয়ে যাচ্ছেন। এক জীবন যুদ্ধে সংগ্রামী মা”র দুইটা মেয়েকে নিয়ে এক অসহায় মহিলার জীবন ও জীবিকা কোনটাই চলেনা এমন খবর আসে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বপ্নজয় বাংলাদেশ এর নিকট। তারই প্রেক্ষিতে স্বেচ্ছাসেবীদের জমানো ও অনুদানের কিছু টাকায় কেনা হয় সেই পরিবারের ঈদ উপহার সেলাইমেশিন টি। তারা আরও জানান, এমনকি সেই অসহায় পরিবার বা গ্রামবাসী কেওই জানত না এই উপহারের বিষয়টি। যখন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি সেই পরিবারকে না জানিয়েই তাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য স্বপ্নজয় বাংলাদেশ টিম উপহারটি নিয়ে তাদের দরজায় গিয়ে হাজির তখন রীতিমতো অবাক ঐ অসহায় পরিবার, হতবাক ঐ গ্রামবাসি।
উপহার পেয়ে অসহায় সেই মায়ের বড় মেয়ে মোছাঃ শারমিন আক্তার জানান, মা ও এক ছোটবোন কে নিয়ে আমাদের ৩জনের পরিবার। বাবা মারা যাবার পর থেকে পরিবারে উপার্জন করার মতো কেও নেই। মা’র পরিশ্রমেই খেয়ে না খেয়ে অনেক কষ্টে দিন পার করছি। সেলাইয়ের কাজ শিখলেও সেলাইমেশিন কেনার মতো সামর্থ্য আমাদের নেই যা শুধু স্বপ্নের মতোই। আর আমাদের না জানিয়েই আল্লাহ যেন আমাদের সেই স্বপ্নপূরণে স্বপ্নজয় বাংলাদেশ নামের সংগঠন কে পাঠিয়েছেন। এবার সেলাইমেশিনে কাজ করে মাকে সাহায্যের পাশাপাশি আমাদের কষ্ট অনেকটাই কমবে বলেও জানান শারমিন। স্বপ্নজয় বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে উপহার দিতে আসা সামিউল ইসলাম শুভ, আল-আমিন হোসেন, জুয়েল রানা সহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, একটি পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাবার পরে একটি পরিবার খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছে আমাদের কাছে এমন তথ্য আসার পরে আমরা খোঁজ খবর নিয়ে এর সত্যতা পাই এবং খোঁজ নিয়ে জানি তার বড় মেয়েটি সেলাইমেশিনের কাজ শিখলেও তা কেনার মতো সামর্থ্য তাদেএ নেই।
কিন্তু একটি সামান্য সেলাইমেশিনও তাদের বাগ্যের চাকার পরিবর্তন করতে পারে। তারই ধারাবাহিকতায় সংগঠন এর সকল স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে আলোচনা করে সংগঠনের সভাপতি আজাদুল হক সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক শুভ কুমার ঘোষ এর সার্বিক দিকনির্দেশনায় আজ ঈদ উপহার হিসাবে এই সেলাইমেশিন টি পৌঁছে দিলাম। সংগঠন এর সভাপতি আজাদুল হক সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক শুভ কুমার ঘোষ এর সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, আমরা এর আগেও বারবার চেষ্টা করেছি মানবিক কাজে সবার পাশে থাকতে।
করোনা প্রতিরোধেও মাস্ক ও লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি অসহায় ও দুস্থদের বাড়িতে সাধ্যানুযায়ী খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়েছে। সচেতনতা তৈরিতে এখনো কাজ করে যাচ্ছে আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা। সবার সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে আগামীতে এমন অসংখ্য মানুষ ও পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে চাই আমরা। সবার স্বপ্নকে জয় করার প্রত্যয়েই আমাদের এই পথচলা বলেও জানান তারা। সেই সঙ্গে কৃতজ্ঞতা জানান স্বপ্নজয় বাংলাদেশ এর সকল স্বেচ্ছাসেবী ও সদস্যদের প্রতি। সেলাইমেশিন প্রদান কালে এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠন এর স্বেচ্ছাসেবী ও সদস্য শফিউল্লাহ সুজন, রুহুল আমিন, মোঃ হাকিম, মোঃ আঃ মান্নান, ইমরান হোসেন, সাকিব প্রমুখ।