বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:১৫ অপরাহ্ন

ই-পেপার

বরিশালের ঈদ বাজার কেউ মানছে না স্বাস্থ্যবিধি আগ্রহ হারাচ্ছে পুলিশ

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: শনিবার, ১৬ মে, ২০২০, ৭:২৭ অপরাহ্ণ

রুবিনা আজাদ, আঞ্চলিক প্রতিনিধি,বরিশাল:
ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে দোকান মালিক ও ক্রেতারা সরকারের দেয়া শর্ত স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। ফলে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে একই পরিবারের একাধিক সদস্য নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে আসায় বরিশালে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে প্রায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

 

অপরদিকে সরকারি নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করতে গিয়ে একটি বিশেষ সুবিধাভোগি মহলের রোষানলে পরে কাজের আগ্রহ হায়িছে ফেলছেন তৃণমূলের প্রকৃত করোনা যোদ্ধা পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল নগরীর কাপড় ও পোশাক ব্যবসার প্রধান কেন্দ্র চকবাজারের ব্যবসায়ীরা প্রথমে দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নিলেও পরবর্তীতে সরকারের নির্দেশনা মেনে চলা সম্ভব হবে না বুঝতে পেয়ে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। এরপরেও অতি মুনাফালোভী দোকানের ব্যবসায়ীরা বড় বড় দোকানগুলো বন্ধ থাকার সুযোগ নিয়ে কাপড় ও পোষাক বিক্রি শুরু করেছেন। এছাড়াও চকবাজারের কয়েকজন বড় ব্যবসায়ী নিজেদের কর্মচারীদের দিয়ে কৌশলে ফুটপাতে পসরা সাজিয়ে বসেছেন।

 

অন্যদিকে নিজেদের বা পরিবারের সদস্যদের ভবিষ্যৎ চিন্তা না করেই সরকারের সুযোগের অপব্যবহার করছেন প্রায় একমাস গৃহবন্দী থাকা নারীরা।
সূত্রমতে, চকবাজার ব্যবসায়ী মালিক কল্যাণ সমিতি সদস্যরা বিসিসি মেয়রের আহবানে দোকান-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বিষয়ে সারাদিয়ে দোকান খোলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার পরেও সেই মালিক সমিতির অধিকাংশ সদস্যরা তাদের নেয়া সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে প্রতিষ্ঠানের অর্ধেক শাটার খুলে বেচা বিক্রি চালিয়ে যাচ্ছেন। বাণিজ্যিক এলাকা চকবাজার, কাঠপট্টি, গির্জা মহল্লা এলাকাসহ নগরীর বিভিন্ন সড়কে এতো পরিমাণের লোকজন বাসা বাড়ি থেকে বের হয়ে চলাচল করছে, যা দেখে মনে হয়না বরিশাল নগরীতে এখনও জেলা প্রশাসনের জারি করা লকডাউন রয়েছে।
সরেজমিনে নগরীর চকবাজার এলাকায় দেখা গেছে, অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের শার্টার অর্ধেক খোলা, ভিতরে নারী ও পুরুষ ক্রেতাদের কাছে চলছে বেচা বিক্রি। সামনে দোকানের কর্মচারীরা দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তারা গণমাধ্যম কর্মীদের দেখলে ভিতরের ক্রেতা রেখেই বাহির থেকে পুনরায় শাটার টেনে লাগিয়ে দিচ্ছেন।

 

জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, করোনাভাইরাস থেকে জনগণকে সুরায় সর্বত্র স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণ এবং বাজার দর নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় স্বাস্থ্যবিধি না মেনে একই পরিবারের একাধিক সদস্য নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করায় বরিশালে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে প্রায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। শুক্রবার জেলা প্রশাসনের পৃথক চারটি টিম নগরীর চকবাজার, বাজার রোড, কাটপট্টি, ফলপট্টি, গির্জা মহল্লা, বটতলা ও পুলিশ লাইন, বাংলাবাজার, সদর রোডে অভিযান পরিচালনা করেছেন।

 

অপরদিকে সরকারি নির্দেশনা শতভাগ পালন করতে গিয়ে একটি বিশেষ সুবিধাভোগি মহলের রোষানলে পরে করোনা প্রতিরোধে কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন তৃণমূল পর্যায়ের করোনা যোদ্ধা পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের নিদের্শে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় জেলার বাহিরের লোকজন কৌশলে সড়কপথে প্রবেশ করে ক্রমেই বরিশালকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে সড়কপথে বরিশালের প্রবেশদ্বার গৌরনদীর ভূরঘাটা দিয়ে কখনও গভীর রাতে কিংবা ভোরে পন্যপরিবহনে, মাইক্রোবাসে ও প্রাইভেটকারে অবাধে জনসাধারণ বরিশালে প্রবেশ করছে।

 

যেকারণে জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিদের্শে গৌরনদী মডেল থানা পুলিশ ভূরঘাটা বাসষ্ট্যান্ডে গত এক মাসেরও অধিক সময় থেকে চেক পোষ্ট বসিয়েছে। ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে পন্যপরিবহনে, মাইক্রোবাসে ও প্রাইভেটকারে যাতায়াত অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে অধিক মুনাফালোভীরা এখন চরম বেকায়দায় পরেছেন। সূত্রমতে, গত ১৪ মে রাতে নিয়মিত চেকপোষ্টে কর্মরত ছিলেন গৌরনদী মডেল থানার এসআই হেলাল উদ্দিন ও তার সঙ্গীয় ফোর্স। এসময় ঢাকা মেট্টো চ-১৯-৫৭৫৫ নম্বরের একটি মাইক্রেবাসে অবৈধভাবে গাদাগাদি করে যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে বরিশালে প্রবেশের সময় এসআই হেলাল চালক মজিদ হাওলাদারকে আটক করেন। পরবর্তীতে যাত্রীরা অনুরোধ করে বলেন, তারা সবাই একই পরিবারের সদস্য এবং একটি মৃত্যুর ঘটনায় তারা জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য বরিশালে যাচ্ছেন। পরবর্তীতে যাত্রীদের অনুরোধে মাইক্রোবাসটি ছেড়ে দেয়া হয়।

সূত্রে আরও জানা গেছে, বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে চেক পোস্টের বিরুদ্ধে অবস্থান করা একটি বিশেষ সুবিধাভোগী মহল এসআই হেলালের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে মাইক্রোবাস ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ তুলে পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নানা গুজব ছড়িয়ে ভাইরাল করেছে। এ ঘটনার পর সরকারি নির্দেশ পালনে ওই চেক পোস্টে থানার কোন অফিসার ডিউটি করতে রাজি হচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে গৌরনদী মডেল থানার ওসি গোলাম ছরোয়ার বলেন, সরকারের নির্দেশ শতভাগ পালন করার জন্য থানা পুলিশ নিজের স্বাস্থ্য ঝুঁকি জেনেও গত দুই মাস পর্যন্ত আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করার পরেও যারা পুলিশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার অপচেষ্ঠা করছেন তাদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর