রবিবার , ১২ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ৪ঠা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

রমজানের গুরুত্ব ও ফজিলত – ইয়াসিন আরাফাত 

প্রকাশিত হয়েছে- মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০২৪
রমজান রহমত বরকত ও মাগফেরাতের মাস। গুরুত্বপূর্ণ মাস বিধায়  সবাই চায় কীভাবে এ মাস থেকে বেশি বেশি উপকৃত হওয়া যায়। সবাই পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত করে পবিত্র একটি জীবন শুরু করতে চায়।
হিজরী পঞ্জিকার বারো মাসের মধ্যে শুধুমাত্র একটি মাসের নামই পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে আর সে মাসটি হলো রমজান। যা এ মাসটির অসামান্য মর্যাদা ও পরিচয় বহন করে।
রমজান একটি আরবি শব্দ। এর শব্দমূল হলো রা-মিম-দোয়াদ। আরবি ভাষায় এর অর্থ হচ্ছে অতিরিক্ত গরম, কঠোর সূর্যতাপ, দহন, জ্বলন, তৃষ্ণা এবং গলে যাওয়া। রমজান মাসে যেহেতু নেক আমলের কারণে বিগত গুনাহ বা পাপগুলো বিমোচিত হয়ে যায় কিংবা গলে গলে নিঃশেষ হয়ে যায় সেজন্যেই এ মাসের নাম হলো রমজান।
ইসলামের মৌলিক পাঁচটি বিধানের একটি হলো রোজা। তবে এই বিধানটি কেবল আমাদের জন্যেই নয় বরং আমাদের পূর্ববর্তী নবী রাসূলগণের উম্মতদের  জন্যেও অবশ্য পালনীয় কর্তব্য হিসেবে বিধিবদ্ধ করা হয়েছিল। মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে বলেছেন, “হে বিশ্বাসিগণ! রোজা যেরূপ তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর আবশ্যিক ছিল তেমনি তোমাদের ওপরও তা আবশ্যিক করা হল; হয়ত তোমরা সাবধানী (ও আত্মসংযমী) হবে।” (সূরা বাকারাহ-১৮৩)
একই সূরায় তিনি আরও বলেছেন: “রমজান মাসে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, যা মানবজাতির জন্য দিশারী এবং এতে পথনির্দেশ ও সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাসে (স্বস্থানে) উপস্থিত থাকবে সে যেন রোজা রাখে”। (সূরা বাকারাহ-১৮৫)
রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেছেন: “রোজা একান্তই আমার জন্য আর আমিই এর প্রতিদান দেবো।”
পরকালে যে তিনি কী পুরস্কার দেবেন তার কিছুটা ইঙ্গিত নবী কারিম (সা.) আমাদের দিয়েছেন। সে থেকে রোজাদারগণ নিশ্চয়ই পরিতৃপ্ত হবার আনন্দ পাবেন। রাসূলে খোদা বলেছেন,‘রমজান এমন একটি মাস যে মাসে আল্লাহ তোমাদের জন্যে রোজা রাখাকে ফরজ করে দিয়েছে। অতএব যে ব্যক্তি ঈমান সহকারে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় রোজা রাখবে, তার জন্যে রোজার সেই দিনটি হবে এমন যেন সবেমাত্র সে মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছে,অর্থাৎ রোজাদার তার সকল গুণাহ থেকে মুক্তি পেয়ে নিষ্পাপ শিশুটির মতো হয়ে যাবে।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) পবিত্র রমজানের ফজিলত,গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন,পবিত্র রমজান মাস দয়া, কল্যাণ ও ক্ষমার মাস৷ এ মাস মহান আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ মাস৷ এ মাসের দিনগুলো সবচেয়ে সেরা দিন, এর রাতগুলো শ্রেষ্ঠ রাত এবং এর প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত মূল্যবান৷ রহমত বরকত ও মাগফিরাতের মাস তথা পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহর দস্তরখান আমাদের জন্যে উন্মুক্ত৷ তিনি তোমাদেরকে এ মাসে সম্মানিত করেছেন। এ মাসে তোমাদের প্রতিটি নিঃশ্বাস মহান আল্লাহর গুণগান বা জিকিরের সমতুল্য; এ মাসে তোমাদের ঘুম প্রার্থনার সমতুল্য, এ মাসে তোমাদের সৎকাজ এবং প্রার্থনা বা দোয়াগুলো কবুল করা হবে৷ তাই মহান আল্লাহর কাছে আন্তরিক ও পবিত্র চিত্তে প্রার্থনা করো যে, তিনি যেন তোমাদেরকে রোজা রাখার এবং কোরআন তেলাওয়াতের তৌফিক দান করেন৷ গুনাহর জন্যে অনুতপ্ত হও ও তওবা কর এবং নামাজের সময় মোনাজাতের জন্যে হাত উপরে তোলো, কারণ নামাজের সময় দোয়া কবুলের শ্রেষ্ঠ সময়, এ সময় মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকান, এ সময় কেউ তাঁর কাছে কিছু চাইলে তিনি তা দান করেন, কেউ তাঁকে ডাকলে তিনি জবাব দেন, কেউ কাকুতি-মিনতি করলে তার কাকুতি মিনতি তিনি গ্রহণ করেন৷ কেননা পবিত্র কোরআনে সুরা গাফিরের ৫৯ নম্বর আয়াতে তিনি নিজেই বলেছেন:
“তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো, নিশ্চয় যারা আমার আমার ইবাদত হতে বিমুখ,তারা লাঞ্চিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে৷”
মানবতার মুক্তির দূত বিশ্বনবী (সা.) রমজানের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য সম্পর্কে আরো বলেছেন, হে মানব সকল ! তোমরা তোমাদের আত্মাকে নিজ কামনা-বাসনার দাসে পরিণত করেছো, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে একে মুক্ত করো৷ তোমাদের পিঠ গোনাহর ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে আছে, তাই সেজদাগুলোকে দীর্ঘায়িত করে পিঠকে হালকা করো৷ জেনে রাখ মহান আল্লাহ নিজ সম্মানের শপথ করে বলেছেন, রমজান মাসে নামাজ আদায়কারী ও সেজদাকারীদেরকে শাস্তি বা আজাব দিবেন না এবং কিয়ামতের দিন তাদেরকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করবেন৷ হে আল্লাহর বান্দারা! তোমাদের যে কেউ কোনো মুমিনকে ইফতারি দেবে, আল্লাহ তাঁকে এর বিনিময়ে একজন দাসকে মুক্ত করার সওয়াব দান করবেন এবং দয়াময় আল্লাহ তাঁর অতীতের সমস্ত গুনাহও ক্ষমা করে দেবেন৷”
সাহাবীরা আরজ করলেন, অন্যদেরকে ইফতারি করানোর সামর্থ আমাদের সবার নেই৷” তিনি বললেন, রোজাদারদের ইফতারি দেয়ার মাধ্যমে জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেকে দূরে রাখ,আর সে ইফতারি যদি একটি খুরমার অর্ধেক বা এমনকি সামান্য পানিও হয়ে থাকে৷”
তিনি (সা.) আরো বলেছেন,জান্নাতের মধ্যে আটটি দরজা আছে। এর মধ্যে একটি দরজার নাম রাইয়ান৷ এ দরজা দিয়ে কেবল রোজাদার ব্যক্তিরাই প্রবেশ করতে পারবে৷ সেদিন এই বলে ডাক দেয়া হবে- রোজাদার কোথায়? তারা যেন এই পথে বেহেশতে প্রবেশ করে। এভাবে সকল রোজাদার ভিতরে প্রবেশ করার পর দরজাটি বন্ধ করে দেয়া হবে৷ রাসূলে খোদা আরো বলেছেন,রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ তায়ালার কাছে মেশক হতেও পবিত্র ও সুগন্ধিময়। সুতরাং রোজা অবস্থায় কেউ যেন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া বিবাদ না করে।
নিঃসন্দেহে সে ব্যক্তি প্রকৃতই দূর্ভাগা বা হতভাগ্য যে রমজান মাস পেয়েও মহান আল্লাহর ক্ষমা হতে বঞ্চিত হয়। বিশ্বনবী রাহমাতুল্লিল আলামীন আরো বলেছেন, রমজান মাসে ক্ষুধা ও তৃষ্ণার মাধ্যমে কিয়ামত বা শেষ বিচার দিবসের ক্ষুধা ও তৃষ্ণার কথা স্মরণ কর। অভাবগ্রস্ত ও দরিদ্রদেরকে সাহায্য কর ও সাদাকা দাও।বয়স্ক ও বৃদ্ধদেরকে সম্মান কর এবং শিশু ও ছোটদেরকে স্নেহ কর৷ আত্মীয় স্বজনের সাথে সম্পর্ক ও যোগাযোগ রক্ষা কর। তোমাদের জিহবাকে সংযত রাখ, নিষিদ্ধ বা হারাম দৃশ্য দেখা থেকে চোখকে আবৃত রাখ, যেসব কথা শোনা ঠিক নয় সেসব শোনা থেকে কানকে নিবৃত রাখ৷ এতিমদেরকে দয়া কর যাতে তোমার সন্তানরা যদি এতিম হয় তাহলে তারাও যেন দোয়া পায়৷
লেখক:
ইয়াসিন আরাফাত 
ফাজিল অধ্যয়নরত, তারাকান্দি সিনিয়র (ডিগ্রি) ফাজিল মাদ্রাসা, পাকুন্দিয়া, কিশোরগঞ্জ।

উপদেষ্ঠা সম্পাদক মোঃ গোলাম হাসনাইন রাসেল-০১৭১১-৪১৭৮৮০, সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

২০২৪ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ