সিরাজগঞ্জের তাড়াশের বাবা, মা ও মেয়েকে গলাকেটে হত্যার ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুনের রহস্য উন্মােচন করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। একই সঙ্গে আলামত উদ্ধারসহ ঘাতককে আটক করা হয়েছে।
আটক ব্যক্তির নাম রাজীব ভৌমিক। তিনি নিহত বিকাশ সরকারের আপন ভাগ্নে, তারা যৌথভাবে ব্যবসা করতেন।
তাড়াশ পৌর শহরের বারোয়ারী বটতলা মহল্লার তৃতীয় তলা থেকে মঙ্গলবার ভোরে বাবা-মা ও মেয়ের লাশ উদ্ধারের পর বিকালেই ওই যুবককে আটক করা হয় বলে জানান সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল।
গ্রেপ্তার রাজীব কুমার ভৌমিক (৩৫) উল্লাপাড়া উপজেলার তেলিপাড়া গ্রামের মৃত বিশ্বনাথ ভৌমিক ও প্রমিলা রানী ভৌমিকের ছেলে। তিনি মৃত বিকাশ সরকারের আপন ভাগ্নে। পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল বুধবার বিকালে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সন্মেলনে এসব তথ্য জানান।
মঙ্গলবার ভোরে বিকাশ সরকার (৪৫), তার স্ত্রী স্বর্ণা রানী সরকার (৪০) এবং তাদের একমাত্র মেয়ে তাড়াশ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী পারমিতা সরকার তুষির (১৫) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
বিকাশ ওই এলাকার কালীচরণ সরকারের ছোট ছেলে। তারা পাঁচ বোন ও দুই ভাই। বিকাশের বাসার পাশে তার বড় ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রকাশ সরকারও পরিবার নিয়ে থাকেন। যদিও দুই ভাইয়ের মধ্যে পারিবারিক সম্পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। ওই ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলার বাসাগুলো ভাড়া দেওয়া।
এ ঘটনায় সন্ধ্যার পর বিকাশ সরকারের স্ত্রীর বড় ভাই সুকোমল চন্দ্র দাস বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি রেখে মামলা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, লাশ উদ্ধারের সময় বিকাশ সরকারের মোবাইল ফোনটি জব্দ করা হয়। ওই মোবাইল থেকে পাওয়া মামা ও ভাগ্নের কথোপকথনের একটি কল রেকর্ড হত্যাকাণ্ডের রহস্য উৎঘাটনে বড় ভূমিকা পালন করেছে।
“বাবা মারা যাওয়ার পর ২০২১ সাল থেকে রাজিব তার মামা বিকাশ চন্দ্র সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে খাদ্যশস্য কেনাবেচার ব্যবসা শুরু করেন। তখন বিকাশ ব্যবসার পূঁজি হিসাবে ২০ লাখ টাকা দেন। রাজিব তার মামাকে বিভিন্ন ধাপে ব্যবসার লভ্যাংশসহ প্রায় ২৬ লাখ টাকা ফেরত দেন।
“চলতি বছরে এসে রাজীবের কাছে তার মামা বিকাশ সরকার আরও ৩৫ লাখ টাকা দাবি করেন। ২২ জানুয়ারি বিকাশ তার দাবি করা টাকা ৭-৮ দিনের মধ্যে দিতে রাজীবকে চাপ দেন। এ নিয়ে রাজীবের মাকে ফোনে তিনি অনেক বকাবকিও করেন। রাজীব টাকা সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হন এবং খুনের পরিকল্পনা করেন।
“শনিবার বিকালে রাজীব তার মামাকে ফোন দিয়ে টাকা দিতে বাসায় যেতে চান। এ সময় বিকাশ বাসার বাইরে ছিলেন। তিনি রাজীবকে তাড়াশের বাসায় গিয়ে মামীর সঙ্গে (স্বর্ণা সরকার) দেখা করতে বলেন।
রাজীব বাসায় যাওয়ার পর একপর্যায়ে তার মামী নিচের দোকানে যান। তখন রাজিব লোহার রড দিয়ে তার মামাতো বোন পারমিতার মাথায় আঘাত করেন। সে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে হাসুয়া দিয়ে গলাকেটে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।
মামী দোকান থেকে ফিরলে তাকেও কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করে রাজীব। কিছুক্ষণ পর মামা বিকাশ সরকার বাসায় ঢুকলে তাকেও একইভাবে হত্যা করা হয়। এরপর লাশগুলো বেডরুমে রেখে বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে উল্লাপাড়ায় চলে যান রাজীব।
পুলিশ সুপার বলেন, মোবাইল থেকে পাওয়া মামা-ভাগনের কথোপকথনের সূত্র ধরে রাজীবকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সবকিছু বলেন।
পরে রাজীবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত লোহার রড একটি পুকুর থেকে এবং রক্তমাখা হাসুয়াটি তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়।
বিকালে রাজীবকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান পুলিশ সুপার।
এদিকে, ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার বিকালে তিনজনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাড়াশ উপজেলা সদরের চালা মাগুড়া শ্মশানে সন্ধ্যায় তাদের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।