রবিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল || ২৯শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

ভাঙ্গুড়ার রুহুল বিলে বাউত উৎসবে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত মাছের দেখা 

প্রকাশিত হয়েছে- মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৩

কারও হাতে পলো, কারও হাতে খেয়া জাল, বাদাই জালসহ মাছ ধরার নানা উপকরণ। এরপর দল বেঁধে বিলে নেমে মনের আনন্দে মাছ শিকার করছেন। কেউ পাচ্ছেন বোয়াল, কেউবা শোল, রুই, কাতল। অনেকে ফিরছেন খালি হাতে।

এভাবেই চলনবিলে মাছ শিকারে মেতেছেন শৌখিন মৎস্য শিকারিরা। পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার রুহুল বিলে দল বেঁধে মাছ ধরার এই আয়োজনের নাম ‘বাউত উৎসব’। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাউত উৎসবে অংশ নেন নানা বয়সী হাজারো মানুষ।

তবে, এ বছর বিলে কাঙ্ক্ষিত মাছের দেখা মিলছে না। এতে হতাশ ও ক্ষুব্ধ মৎস্য শিকারিরা। তাদের অভিযোগ, নিষিদ্ধ জাল আর গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে মাছ ধরে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। ফলে মাছ ও পোকামাকড় মরে গিয়ে পানিতে সৃষ্টি হয়েছে দুর্গন্ধ।

মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে পাবনা-ফরিদপুর আঞ্চলিক সড়কের ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের পাটুলিপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো অন্তত ২০টি বাস। এসব বাসে কুষ্টিয়া, নাটোর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছেন অনেক মৎস্য শিকারি। আবার অনেকে ইজিবাইক, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে এসেছেন।

এরপর রুহুল বিল অভিমুখে ছুটে চলেন মানুষ। ভোরের আলো ফোটার আগেই বিলপাড়ে হাজির নানা বয়সী হাজারো মানুষ। সবার হাতে পলো, ঠেলা জাল, বাদাই জালসহ মাছ ধরার নানা উপকরণ। একসঙ্গে বিলে নেমে লোকজ রীতিতে মনের আনন্দে চলছে মাছ শিকার। দল বেঁধে মাছ ধরার এ আয়োজনে মৎসশিকারীদের ডাকা হয় বাউত। তাদের ঘিরেই উৎসবের নামকরণ। চলনবিলাঞ্চলে এমন উৎসব চলছে যুগের পর যুগ।

বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর নভেম্বরের শেষে অথবা ডিসেম্বরের শুরুতে মাসব্যাপী চলে এই উৎসব। সপ্তাহের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার ভোর থেকে বিলাঞ্চলের পূর্বনির্ধারিত এলাকায় দল বেঁধে মাছ শিকারে নামেন বাউতেরা। বিভিন্ন বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে বিলপাড়ে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ।

টাঙ্গাইল থেকে মাছ শিকারে আসা আশিকুর রহমান বলেন, ‘বাউত উৎসবের কথা অনেক শুনেছি। এবার টাঙ্গাইল থেকে প্রায় ২০টি বাস নিয়ে পাঁচ শতাধিক লোক এসেছি মাছ ধরতে। এত লোক একসঙ্গে মাছ ধরার আনন্দই আলাদা। খুব ভালো লেগেছে।’

নাটোর থেকে বাউত উৎসবে আসা আরেক মৎস্য শিকারি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবছরই আসি এই বাউত উৎসবে। কিন্তু এবার মাছ নেই বললেই চলে। তবে আমরা মাছ পাই বা না পাই, সবাই মিলে আনন্দ করি এটাই ভালো লাগে।’

চাটমোহর উপজেলার মাছ শিকারি ময়েন প্রামানিক বলেন, ‘প্রভাবশালীরা আগেই চায়না দুয়ারী, কারেন্ট জাল দিয়ে সব মাছ মাইরে লিছে। পরে তারা বিলে গ্যাস ট্যাবলেট দিছে, যে কারণে ছোটখাটো মাছ যা আছে বেশির ভাগ মরে গেছে। পানিতেও দুর্গন্ধ মেলা। এজন্যি মাছ নাই ইবার।’

বিলে বাউত উৎসব দেখতে আসা সাংস্কৃতিক কর্মী মুস্তাফিজ রাসেল বলেন, ‘বিলে যেভাবে গ্যাস ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে দেশি মাছের প্রজনন নষ্ট হচ্ছে। জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে। প্রকাশ্যে অবৈধ চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জাল ব্যবহার হচ্ছে। এখনই প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। না হলে ভবিষ্যতে দেশি মাছের সঙ্গে বাঙালি সংস্কৃতির এই উৎসবও হারিয়ে যাবে।’

এ বিষয়ে পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘মাছের প্রজনন ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি না করে বাউত উৎসব পালন করতে হবে। এ বিষয়ে মৎস্য শিকারিদের সচেতন হতে হবে। সেই সঙ্গে বিলে গ্যাস ট্যাবলেট বা নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে মাছের ও পরিবেশের ক্ষতি করছে এমন অভিযোগ পেলে মৎস্য আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ©2017-2025 (এটি গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ) অনলাইন নিবন্ধন আবেদনকৃত। আবেদন নম্বর- ২১৮৮।