রবিবার , ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১১ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

ইসলামি শরীয়াতের আলোকে মসজিদে  পানাহার ও রাত্রি যাপন  করার বিধান – মাওলানা: শামীম আহমেদ 

প্রকাশিত হয়েছে- শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
মসজিদ শব্দের অর্থ হলো সিজদা করার স্থান। কাজেই মসজিদ হলো ইবাদতের জায়গা। এ কথা মসজিদ শব্দের অর্থ থেকেই জানা যায়। মসজিদে মূলত কী ধরনের কাজ হবে, সে বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর এই মসজিদগুলো আল্লাহর জন্য। সুতরাং তোমরা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে ডেকো না।’ (সুরা : জিন, আয়াত : ১৮)।
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘এসব গৃহে (আল্লাহর ঘর মসজিদে) কিছু লোক সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, যে গৃহগুলোকে সম্মান দেখাতে এবং তাঁর নাম স্মরণ করতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩৫)।
এই দুটি আয়াত থেকে জানা যায়, মসজিদের মূল কাজ হলো ইবাদত। সুতরাং মসজিদে ইবাদত ছাড়া অন্য কাজ শর্তহীনভাবে করা যাবে না। তাই মসজিদে ঘুমানো যাবে শর্তসাপেক্ষে। মসজিদে খাওয়া যাবে শর্তসাপেক্ষে। এমনকি মসজিদে জোরে কোরআন তিলাওয়াত করা যাবে এই শর্তে যে, এর মাধ্যমে অন্যের নামাজের ক্ষতি করা যাবে না।
মসজিদে খাবার-দাবারের ব্যাপারে হাদিসে কী আছে?
মসজিদে খাবার গ্রহণের ব্যাপারে হাদিস শরিফে এসেছে, আবদুল্লাহ বিন হারেস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে মসজিদে রুটি ও গোশত খেতাম।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বর : ২৬৬৯)।
অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক কর্তিত খেজুর থেকে ডালাসহ মিসকিনদের জন্য ১০ উসুক (১,৩০৪.১৬ কিলোগ্রাম) মসজিদে লটকিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর : ১৪৬৪)।
এ ছাড়া অসংখ্য হাদিস থেকে জানা যায়, আসহাবুস সুফফার শিক্ষার্থীরা মসজিদে থাকতেন। তাঁরা মসজিদে পানাহার করতেন। তা ছাড়া তাবুক যুদ্ধের পর তিন ব্যক্তিকে মসজিদে বেঁধে রাখা হয়েছিল। তাঁদের জন্য মসজিদেই পানাহারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তাঁদের ঘটনা সুরা তওবার ১১৭ ও ১১৮ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। আর ইতিকাফের সময় তো মসজিদে খাওয়া-দাওয়া করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
এসব বিবরণ থেকে জানা যায়, মসজিদে প্রয়োজনে পানাহার করা যাবে। তবে সেটি শর্তহীন নয়। মসজিদে পানাহারের জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে। সুতরাং আদব রক্ষা করে মসজিদে পানাহার করা যাবে। আর মসজিদে ইফতার বৈধ হওয়ার ব্যাপারে পৃথিবীর কোনো আলেমের দ্বিমত নেই। তবে হ্যাঁ, সেটাও করতে হবে মসজিদের আদব রক্ষা করে।
মসজিদে পানাহার করার শর্তসমূহ
১. দাঁড়িয়ে পানাহার করা যাবে না। হাদিস শরিফে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যেন দাঁড়িয়ে পান না করে…।’ (মুসলিম শরিফ)
২. মসজিদে দুর্গন্ধযুক্ত বস্তু যেমন—পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি প্রবেশ করানো নিষিদ্ধ। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এই দুর্গন্ধযুক্ত বৃক্ষ (পেঁয়াজ, রসুন) থেকে খাবার গ্রহণ করবে, সে যেন আমার মসজিদে না আসে।’ (বুখারি, হাদিস : ৮৫৩)
৩. মসজিদে এমন শব্দ করে খাওয়া যাবে না বা এমন জোরে কথা বলা যাবে না, যার ফলে অন্যের নামাজ ও তাসবিহের ক্ষতি হয়। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর মসজিদে তাঁর নাম স্মরণ করতে বাধা দেয় এবং তাঁর বিনাশসাধনের চেষ্টা করে, তার চেয়ে বড় জালিম আর কে? অথচ ভয়-বিহ্বল না হয়ে তাদের জন্য মসজিদে প্রবেশ করা সংগত ছিল না। পৃথিবীতে তাদের জন্য লাঞ্ছনা ভোগ ও পরকালে তাদের জন্য মহাশাস্তি রয়েছে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১১৪)
৪. মসজিদে খাবার খেতে গিয়ে মসজিদকে অপরিচ্ছন্ন করা যাবে না। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘরসমূহে (মহল্লায়) মসজিদ নির্মাণ করতে বলেছেন এবং সেগুলোকে পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিযুক্ত রাখতে বলেছেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর : ৪৫৫; তিরমিজি, হাদিস নম্বর : ৫৯৪)
চার মাজহাবের দৃষ্টিতে মসজিদে পানাহারের প্রসঙ্গ
হাম্বলি মাজহাব মতে, মসজিদে পানাহারে কোনো অসুবিধা নেই। হাম্বলি মাজহাবের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘কাশশাফুল কানায়ি আন মাতনিল ইকনায়ি’ গ্রন্থে রয়েছে, ‘মসজিদে ইতিকাফকারী ও ইতিকাফহীন মানুষের জন্য পানাহার করা বৈধ। কেননা আবদুল্লাহ বিন হারেস (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে মসজিদে রুটি ও গোশত খেতাম।’ সুতরাং মসজিদে পানাহার করতে কোনো অসুবিধা নেই।
একইভাবে শাফেয়ি মাজহাব মতে, মসজিদে পানাহার করা বৈধ। এ বিষয়ে ইমাম নববী (রহ.) তাঁর ‘আল-মাজমু ফিল ফিকহিশ শাফেয়ি’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘মসজিদে খাওয়া, পান করা ও দস্তরখানা বিছানো বৈধ।’
তবে মালেকি মাজহাবে এ বিষয়ে পার্থক্য করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মসজিদে শুকনো খাবার খেতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু বিনা প্রয়োজনে সাধারণ খাবার, তরল খাবার বা ভিজানো খাবার খাওয়া জায়েজ নেই।
ইমাম বাজি (রহ.) মুআত্তা ইমাম মালেকের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘আল-মুনতাকা’র ভেতর লিখেছেন, ‘মাবসুত’ নামক কিতাবে রয়েছে, ইমাম মালেক (রহ.) মসজিদে পানাহার করাকে মাকরুহ বলেছেন।
মালেকি মাজহাবের প্রসিদ্ধ আলেম ইবনুল কাসিম বলেন, মসজিদে শুকনো খাবার খেতে কোনো অসুবিধা নেই।
হানাফি মাজহাব মতে, মসজিদে ইফতার ও পানাহার বৈধ হলেও ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে প্রবেশ করে ইফতার ও পানাহার করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
হানাফি মাজহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব ‘আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়া’য় (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি) উদ্ধৃত হয়েছে, বিশুদ্ধ মত অনুসারে মুসাফির ও স্থানীয় সবার জন্যই মসজিদে পানাহার ও ঘুমানো জায়েজ। তবে উত্তম হলো বিনা প্রয়োজনে না ঘুমানো এবং না খাওয়া। বিষয়টি আরো বিস্তারিতভাবে অন্যত্র এভাবে এসেছে,
ইতিকাফের নিয়ত ছাড়া মসজিদে ঘুমানো ও খাওয়া-দাওয়া করা মাকরুহ। তাই যদি কেউ মসজিদে ঘুমাতে বা খাওয়া-দাওয়া করতে চায়, তার জন্য উচিত হলো ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে প্রবেশ করে ইচ্ছানুসারে আল্লাহর জিকির অথবা নামাজ পড়ে নেওয়া। এরপর অন্য কাজ করবে। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি)
হানাফি মাজহাবের অন্য কিতাবে এসেছে, শুধু খেজুর ও পানি দ্বারা ইফতার করাতে অসুবিধা নেই। (রদ্দুল মুহতার : ২/৪৪৯, আহসানুল ফাতাওয়া : ৬/৪৫)
এসব বিবরণ থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে মসজিদে শর্তসাপেক্ষে পানাহার করা বৈধ। মসজিদে ইফতার ও পানাহার করার ক্ষেত্রে অবশ্যই মসজিদের আদব রক্ষা করা জরুরি। তবে মসজিদে পানাহার করাকে শর্তহীনভাবে বৈধ বা অবৈধ বলার সুযোগ।

উপদেষ্ঠা সম্পাদক মোঃ গোলাম হাসনাইন রাসেল-০১৭১১-৪১৭৮৮০, সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

২০২৪ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ