শুক্রবার , ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - হেমন্তকাল || ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

পবিত্র কোরআন হাদীসের আলোকে ঈমানী দুর্বলতার চিকিৎসা – মুফতী মাওলানা: শামীম আহমেদ 

প্রকাশিত হয়েছে- শুক্রবার, ১৪ জুলাই, ২০২৩
আকাশ যেমন কখনো কখনো ঘনকাল মেঘের আবরণে ঢেকে যায় ঠিক তেমনি মানুষের হৃদয়গুলো ঢেকে যায় পাপ-পঙ্কিলতায়। কিন্তু মেঘ সরে গেলে আকাশ যেমন আবার পরিচ্ছন্ন হয়ে যায় তদ্রূপ অন্তরগুলোও (তওবা,চিকিৎসা যিকির, দুয়া ও ইবাদতের মাধ্যমে) আলোকোদ্ভাসিত হয়ে উঠে।
আলী রা. বলেন, আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি
“চাঁদ যেমন মেঘের আড়ালে হারিয়ে যায় তেমনি প্রতিটি হৃদয় মেঘাচ্ছন্ন হয়। চাঁদ আলো ছড়াতে থাকে কিন্তু যখন মেঘমালা তার উপরে চলে আসে তখন তার আলো নিভে যায়। মেঘমালা সরে গেলে আবার আলো দেয়া শুরু করে।”
(হিলিয়া-আবু নাঈম ২/১৯৬, সিলসিলা সহীহা, হা/২২৬৮)
অর্থাৎ মানুষের অন্তর মাঝে-মধ্যে পাপাচারের ঘন কালো মেঘ এসে ঢেকে দেয়। তখন হৃদয়ের নূর নিভে যায় এবং মানুষ এক গুমোট অস্থিরতা ও অদ্ভুত অন্ধকার অনুভব করে। কিন্তু যখনই সে ঈমান বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা-সাধনা শুরু করে ও আল্লাহর সাহায্য চায় তখন সে অন্ধকার বিদূরিত হয়ে অন্তর আবারও আলোকিত হয়ে উঠে।
ঈমান দুর্বল হওয়া এবং তার চিকিৎসার বিষয়টি বুঝার জন্য যে জিনিসটি জানা জরুরি তা হল, আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আকীদা হল, ঈমান বাড়ে ও কমে। নেক কাজের মাধ্যমে ঈমান বাড়ে আর গুনাহের কাজে ঈমান কমে।
সুতরাং আমরা যদি ঈমান বৃদ্ধি করতে চাই তাহলে আমাদের কতর্ব্য, আল্লাহর উপর উপর নির্ভর করে অধিক পরিমানে সৎকর্মে আত্মনিয়োগ করা।
নিম্নে কতিপয় সৎকর্ম পেশ করা হল যেগুলো ঈমান বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ: (১৯টি)
 ১. আল কুরআন অধ্যয়ন করা:
কুরআনে রয়েছে সব কিছুর সুস্পষ্ট বিবরণ। এটি এমন এক আলোকবর্তিকা যা দ্বারা আল্লাহ তার বান্দাদের মধ্যে যাকে খুশি পথ দেখান। সুতরাং এ কথায় কোন সন্দেহ নাই যে, আল কুরআনের মধ্যেই রয়েছে ঈমানী দুর্বলতার কার্যকরী মহৌষধ। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ-
“আমি কুরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মু’মিনের জন্য রহমত।”
(সূরা ইসরা: ৮২)
কুরআন থেকে চিকিৎসা গ্রহণের পদ্ধতি হল, কুরআন পড়া, বুঝা ও গবেষণা করা। কুরআন তিলাওয়াত ও কুরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনার ক্ষেত্রে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। তিনি একরাতে নামাযে দাঁড়িয়ে কুরআনের একটি আয়াত বারবার তিলাওয়াত করতে করতে ভোর করে ফেলেছেন। তিনি কখনও সারা রাত ধরে কুরআন তিলাওয়াত করে কেঁদে কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন। সাহাবী ও পরবর্তী যুগের পূর্বসূরিদের জীবনীতে এ বিষয়ে বহু ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।
 ২. মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ব অনুধাবন করা, তাঁর নাম ও গুণাবলীগুলো সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করার পর সেগুলোর মর্মার্থ জেনে-বুঝে সেগুলোকে অন্তরে গেঁথে নেয়া এবং কাজে-কর্মে তার প্রতিফলন ঘটানো। অন্তরে যা অনুধাবন করা হল তা যেন কর্মের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। কেননা, অন্তর হল শরীরের মূল কেন্দ্রবিন্দু ও পরিচালিকা শক্তি। অন্তর হল রাজা আর শরীরে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হল তার সৈনিক ও অনুগামী। তাই অন্তর ঠিক থাকলে শরীরের সবকিছই ঠিক থাকবে আর অন্তর নষ্ট হলে সবকিছু নষ্ট হয়ে যাবে।
 ৩. দ্বীনের ইলম অন্বেষণ করা:
দ্বীনের ইলম সেটাই যা মানুষের হৃদয়ে আল্লাহ ভীতি জাগ্রত করে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান বৃদ্ধি করে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
“মানুষের মধ্যে কেবল আলেমগণ (যারা দ্বীনের জ্ঞান রাখে) আল্লাহকে ভয় করে।”
(সূরা ফাতির: ২৮)
যারা দ্বীনের ইলম রাখে আর যারা রাখে না তাদের ঈমান কিভাবে এক সমান হতে পারে? যারা ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত জ্ঞান রাখে, শাহাদাতাইন তথা আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বীকৃতি দেয়ার মর্মার্থ বুঝে, মৃত্যুর পরে করবের ফিতনা, হাশরের ময়দানের ভয়াবহতা, জান্নাতের নিয়ামতরাজি, জাহান্নামের আযাব, ইসলামে হালাল-হারামের হেমকত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনীর বিভিন্ন দিক ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান রাখে আর যারা দ্বীন, দ্বীনের বিধিবিধান ও ইলমে গায়েব ইত্যাদি সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে তাদের ঈমান কিভাবে এক সমান হতে পারে? তাই তো আল্লাহ বলেন:
“বলুন,যারা জানে এবং যারা জানে না;তারা কি সমান হতে পারে”?
(সূরা যুমার: ৯)
৪. যে সকল বৈঠকে আল্লাহর যিকির তথা আল্লাহ এবং আল্লাহর দ্বীন সম্পর্কে আলোচনা করা হয় সেগুলোতে নিয়মিত উপস্থিত হওয়া:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ-
“একদল মানুষ যখন বসে আল্লাহর যিকির করে তখন ফেরেশতা মণ্ডলী তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখে,আল্লাহর রহমত তাদেরকে আচ্ছাদিত করে রাখে, তাদের উপর প্রশান্তি বর্ষিত হতে থাকে এবং মহান আল্লাহ তার নিকটে যে সকল ফেরেশতা রয়েছেন তাদের নিকট ঐ লোকদের কথা আলোচনা করে থাকেন।”
(সহীহ মুসলিম)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ-
“কিছু মানুষ একত্রিত হয়ে আল্লাহর যিকির করার পর যখন তারা উঠে যায় তখন তাদেরকে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) বলা হয়: তোমরা উঠে যাও, তোমাদের পাপরাশী ক্ষমা করে দেয়া হল।”
(সহীহুল জামে, হা/৫৫০৭-সাহল বিন হানযালা থেকে বর্ণিত)
ইবনে হাজার আসকালানী রহ. উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, “সাধারণভাবে যিকির দ্বারা উদ্দেশ্য হল, আল্লাহ তাআলা যে সব আমল ওয়াজিব বা মোস্তাহাব করেছেন সেগুলো যত্নের সাথে বাস্তবায়ন করা। যেমন, কুরআন

সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ©2017-2025 (এটি গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ) অনলাইন নিবন্ধন আবেদনকৃত। আবেদন নম্বর- ২১৮৮।