পরিবারের সবাই প্রায় সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবি। বেশিরভাগই থাকেন গ্রামের বাইরে। আর সবাই বাইরে থাকার এই সুযোগে ঈদের ছুটিতে তাদের দেড়’শ বছর হলো বসবাস করা বাড়ির রাস্তার ৮০ভাগ বাঁশ দিয়ে আটকে দিয়েছেন এক প্রতিবেশী। পাশাপাশি রাস্তার পাশে পুকুর পাড় দিয়ে তাদের লাগানো শতাধিক কলাগাছ ও কয়েকটি আম গাছ কেটে ফেলে সেখানে লাগানো হয়েছে অন্য গাছ।
এমনই অভিযোগ করেছেন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের মহিষামুড়া দক্ষিনপাড়া গ্রামের কয়েকটি ভুক্তভোগী পরিবার। জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেড়ে বাড়িতে তেমন কেও না থাকার সুযোগে প্রতিবেশী নওশের আলী ও তার ভাই এবং ছেলেরা এগুলো করেছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
ঈদের আগেরদিন বুধবার (২৮ জুন) থেকে ঈদের তৃতীয় দিন শনিবার (১ জুলাই) সকাল পর্যন্ত এসকল কিছু করা হয়েছে।
ভুক্তভোগীর পরিবারগুলো জানান, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোজাম্মেক হক বিএসসি, তার ভাতিজা ব্যাংকার আল আমিন ও তার এক পুলিশ পরিদর্শক ভাইসহ তাদের ১৫টি পরিবারের লোকজনের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটির ৮০ভাগ আটকিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু রাখা হয়েছে পায়ে হাটার জন্য সামান্য জায়গা। কেটে ফেলা হয়েছে তাদের লাগানো শতাধিক কলাগাছ। সেই জায়গা দখলে নিয়ে অভিযুক্তরা লাগিয়েছেন অন্য গাছ।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোজাম্মেল হক বিএসসি বলেন, প্রায় দুই’শ বছরের বেশি সময় ধরে এটা আমাদের কয়েক পুরুষের বসত বাড়ি। প্রায় বছর চারেক আগে বাড়ির পূর্ব পাশ দিয়ে একটা পাকা রাস্তা হয়। সেই রাস্তার পশ্চিম থেকে আমাদের ও পূর্ব পাশে নওশের দের জায়গা। আমরা এভাবেই সবাই ভোগ দখল করে আসছিলাম। পরে তারা গত ছয় মাস আগে এখানে তাদের কিছু জায়গা দাবি করে। পরে জায়গা মাপার পরে গ্রামের মুরুব্বিরা তখন তাদের জায়গা তাদের বুঝিয়ে দেয় এবং রাস্তার পশ্চিম পাড় থেকে আমাদের আগের মতোই থাকতে বলেন।
তিনি বলেন, কিন্তু হঠাৎ ঈদের আগের দিন তারা আমাদের বাড়ির সীমানার পুকুরপাড়ে লাগানো প্রায় শতাধিক কলাগাছ কেটে ফেলে। এরপরে ঈদের পরের দিন সেই জায়গা দিয়ে তারা জলপাই গাছ লাগায়। এখানেই তারা থামে না। তারা ঈদের তৃতীয় দিন শনিবার সকালে আমাদের বাড়ির রাস্তা বাঁশ দিয়ে আটকে দেয়। তিনি বলেন, আমরা শান্তি প্রিয় মানুষ। বাধা দিতে গেলে সংঘর্ষ হবে ভেবে আমরা বাধা না দিয়ে স্থানীয় মুরুব্বীদের জানিয়েছি। প্রয়োজন হলে আইনের আশ্রয় নেব।
তার ভাতিজা ব্যাংকার শামসুল আলম (আল আমিন) বলেন, আমরা বেশিরভাগ ভাই এবং ভাইয়ের স্ত্রীরা চাকরির সুবাধে বাড়ির বাইরে থাকি। আমি একটি ব্যাংকে চাকরি করি ও পাবনায় থাকি। আমাদের স্ত্রী এবং চাচিরা বেশিরভাগই সরকারি চাকরি করেন, তারাও বাইরে থাকেন। এই সুযোগটাই তারা নিয়েছেন।
তিনি বলেন প্রতিবেশী মৃত সেকেন্দার আলীর পুত্র নওশের আলী (৬০), নওশের আলীর পুত্র আকরাম হোসেন (৪০) তার ভাই মোকাররম হোসেন (৩২), নওশের আলীর ভাই চাঁন মিয়া (৪৩), আরেক ভাই হবিবুর রহমান (৫৭) সহ অজ্ঞাত ৬-৭ জন পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমাদের জায়গা নিজের দাবি করে প্রকাশ্য দিবালোকে ঈদের আগেরদিন (২৮ জুন) একটি কলাবাগান কেটে ফেলে। এসময় শতাধিক কলাগাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর ঈদের পরেরদিন (৩০ জুন) তারা সেই জায়গায় গাছ লাগিয়ে দেয়। এতেও ক্ষান্ত হয়নি তারা, এরপরে শনিবার (১ জুলাই) বাড়িতে যাওয়ার মাটির রাস্তা দখল করে বেড়া দিয়ে বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তাটি প্রায় বন্ধই করে দিয়েছে।
আল আমিন আরও বলেন, তারা এর আগে জায়গা দাবি করলে তাদের জায়গা মেপে তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের যেটুকু জায়গা, রাস্তার ওইপার থেকেই তাদের সেইটুকু জায়গা হয়ে যায়। যদি তাদের জায়গা তারা বুঝে পায় তারপরও কেন আমাদের জায়গা জোর করে দখল করা, গাছ কাটা এবং রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে এটা বুঝতে পারছি না। আমরা সবাই বাইরে থাকার কারণে এই সুযোগগুলো তারা নিচ্ছে। এবং তারা একটা ঝামেলা মারামারি করতে চাচ্ছে। কিন্তু আমরা সে ঝামেলায় যেতে চাই না।
এ ব্যাপারে জানার জন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় মাতবর মোজাম্মেল হক হেনা বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে দুপক্ষের সঙ্গেই বসেছিলাম, তাদের শান্তি বজায় রাখতে বলেছি। অভিযুক্তরা পায়ে হাটার রাস্তা রেখে বেড়া দিয়েছে এটা সঠিক, তবে বেড়া দেওয়াটা তাদের মোটেও উচিৎ হয়নি। আমি গ্রামের আরও যারা গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ আছেন তাদের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি। আশা করছি খুব দ্রুতই দু-পক্ষকে নিয়ে বসে এর একটা সমাধান করে দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে রতনকান্দি ইউনিয়নের বিট অফিসার ও সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. আ. রাজ্জাক বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে এ ঘটনায় থানায় এখনো কোনও লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেয়া হবে।