মঙ্গলবার , ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ২৮শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ইসলামে নারীদের অধিকার ও সম্মান – মাওলানা শামীম আহমেদ

প্রকাশিত হয়েছে- বুধবার, ৮ মার্চ, ২০২৩
মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ‘নিসা’ অর্থাৎ ‘মহিলা’ শব্দটি ৫৭ বার এবং ‘ইমরাআহ’ অর্থাৎ ‘নারী’ শব্দটির ২৬ বার উল্লেখ হয়েছে। কোরআনে ‘নিসা’ তথা ‘মহিলা’ শিরোনামে নারীর অধিকার ও কর্তব্যসংক্রান্ত একটি স্বতন্ত্র সূরা রয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে নারীর অধিকার, মর্যাদা ও মূল্যায়ন সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে। ইসলাম নারীর ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছে। দিয়েছে নারীর জান-মালের নিরাপত্তা ও সর্বোচ্চ সম্মান।
নারীর শিক্ষা নারীদের তালিম তালবিয়ার ব্যাপারে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তাদের (নারীদের) সঙ্গে উত্তম আচরণ করো ও উত্তম আচরণ করার শিক্ষা দাও।’ (সূরা-৪ নিসা, আয়াত: ১৯)।
মহানবী (সা.) ঘোষণা করেন, ‘যার রয়েছে কন্যাসন্তান, সে যদি তাকে (শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে) অবজ্ঞা ও অবহেলা না করে এবং পুত্রসন্তানকে তার ওপর প্রাধান্য না দেয়; আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা নারীদের উত্তম উপদেশ দাও (উত্তম শিক্ষায় শিক্ষিত করো)।’ হাদিসে বলা হয়েছে, ‘ইলম শিক্ষা করা (জ্ঞানার্জন করা) প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর প্রতি ফরজ।’ (উম্মুস সহিহাঈন-ইবনে মাজাহ শরিফ)। তাই হাদিস গ্রন্থসমূহের মধ্যে হজরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ২ হাজার ২১০, যা সব সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
মা হিসেবে নারীর সম্মান ইসলাম নারীদের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা দিয়েছে মা হিসেবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত’।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, একবার এক লোক মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দরবারে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকারী কে? নবীজি (সা.) বললেন, ‘তোমার মা’। ওই লোক জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। ওই লোক আবারও জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? এবারও তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। (বুখারি)।
মহানবী (সা.)-এর জামানার বিখ্যাত এক ঘটনার কথা আমরা জানি। মায়ের সেবা করার কারণে হজরত ওয়াইস করনি (রা.) প্রিয় নবীর জামানায় থেকেও সাহাবি হতে পারেননি। একবার ওয়াইস করনি (রা.) নবীজির কাছে খবর পাঠালেন ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার সঙ্গে আমার দেখা করতে মন চায়; কিন্তু আমার মা অসুস্থ, এখন আমি কী করতে পারি?’ নবীজি (সা.) উত্তর পাঠালেন, ‘আমার কাছে আসতে হবে না। আমার সঙ্গে সাক্ষাতের চেয়ে তোমার মায়ের খেদমত করা বেশি জরুরি।’ নবীজি (সা.) তাঁর গায়ের একটি জুব্বা মোবারক ওয়াইস করনির জন্য রেখে যান। তিনি বলেন, মায়ের খেদমতের কারণে সে আমার কাছে আসতে পারেনি। আমার ইন্তেকালের পরে তাকে আমার এই জুব্বাটি উপহার দেবে। জুব্বাটি রেখে যান হজরত ওমর (রা.)-এর কাছে। এবং প্রিয় নবী (সা.) বলেন, হে ওমর! ওয়াইস করনির কাছ থেকে তুমি দোয়া নিয়ো।
কন্যা হিসেবে নারীর সম্মান মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মেয়েশিশু বরকত (প্রাচুর্য) ও কল্যাণের প্রতীক।’ হাদিস শরিফে আরও আছে, ‘যার তিনটি, দুটি বা একটি কন্যাসন্তান থাকবে; আর সে ব্যক্তি যদি তার কন্যাসন্তানকে সুশিক্ষিত ও সুপাত্রস্থ করে, তার জান্নাত নিশ্চিত হয়ে যায়।’
বোন হিসেবে নারীর সম্মান মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কারও যদি কন্যাসন্তান ও পুত্রসন্তান থাকে আর তিনি যদি সন্তানদের জন্য কোনো কিছু নিয়ে আসেন, তবে প্রথমে তা মেয়ের হাতে দেবেন এবং মেয়ে বেছে নিয়ে তারপর তার ভাইকে দেবে।’ হাদিস শরিফে আছে, বোনকে সেবাযত্ন করলে আল্লাহ প্রাচুর্য দান করেন।
স্ত্রী হিসেবে নারীর সম্মান ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক। এ প্রসঙ্গে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তারা তোমাদের আবরণস্বরূপ আর তোমরা তাদের আবরণ।’ (সূরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৭)। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচরণ করো।’ (সূরা-৪ নিসা, আয়াত: ১৯)। কোরআনে আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘নারীদের ওপর যেমন অধিকার রয়েছে পুরুষের, তেমনি রয়েছে পুরুষের ওপর নারীর অধিকার।’ (সূরা-২ বাকারা, আয়াত ২২৮)।
স্ত্রীর গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘উত্তম স্ত্রী সৌভাগ্যের পরিচায়ক।’ (মুসলিম শরিফ)। তিনি আরও বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে–ই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।’ (তিরমিজি)।
নারীর প্রতি সম্মান পুরুষের ব্যক্তিত্বের প্রমাণ রাসুলের একটি হাদিসে এসেছে, নারীকে সম্মান করার পরিমাপের ওপর ব্যক্তির সম্মান ও মর্যাদার বিষয়টি নির্ভর করে। তিনটি বিষয় নবী করিম (সা.)-এর জীবনে লক্ষণীয় ছিল— ১. নামাজের প্রতি অনুরাগ; ২. ফুলের প্রতি ভালোবাসা; ৩. নারীর প্রতি সম্মান। (বুখারি ও মুসলিম)।

উপদেষ্ঠা সম্পাদক মোঃ গোলাম হাসনাইন রাসেল-০১৭১১-৪১৭৮৮০, সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

২০২৪ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ