গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বিভিন্ন হাটবাজারের চটি দোকান এবং পথঘাটে গড়ে উঠা ছোট ছোট দোকানে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন যৌন উত্তেজক ওষুধসহ নানান ধরণের ওষুধ। এতে একদিকে যেমন দেখা দিয়েছে উঠতি বয়সের কিশোর ও যুবকদের বিপথগামী হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদিকে তেমনি দেখা দিয়েছে নানান বয়সের মানুষের স্বাস্থ্যহানির শঙ্কা।
সরেজমিন উপজেলার পাঁচপীর, শোভাগঞ্জ, বেলকা, ডোমেরহাট, ছাইতানতলা, কাঠগড়া ও মীরগঞ্জ হাট ঘুরে দেখা গেছে, চটকদার মোড়কে মোড়ানো বিভিন্ন যৌন উত্তেজক ওষুধের বড় বড় ফাইল, সরকারি ওষুধ, কনডম, জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলসহ বিভিন্ন ধরণের ওষুধের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। দোকানের মধ্যভাগে রয়েছে শত রকমের ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল। দেখলে মনে হবে যেন ট্যাবলেট ও ক্যাপসুলের স্তুপ! কোনটার ডেট আছে আর কোনটার নেই তা বুঝা মুশকিল। কিন্তু সেগুলো নয় কোনো খ্যাতনামা কোম্পানির ওষুধ। প্রতি হাটবারে ওষুধের এমন পসরা সাজিয়ে বসা দোকানগুলোর ক্রেতা বলতে ওই বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের খেটে খাওয়া দুঃখী মানুগুলো। আর উঠতি বয়সের কিশোর ও যুবকরা। যাদের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে নেই কোনো ধারণা। অসুখের নাম বলছেন ক্রেতা আর তা শুনেই দোকানিরা অবলীলায় দিয়ে দিচ্ছেন বিভিন্ন ধরণের ওষুধ। আর যৌন সমস্যার কথা বলতেই ছোট, বড় এবং মাঝারি আকারের ফাইল দেখিয়ে দোকানি বলছেন, কাজ একশো একশো! আর দাম দেড়শ থেকে চারশ টাকা। এভাবেই উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার এবং গ্রামাঞ্চলের মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন পান দোকান এবং মুদি দোকানেও দেদারসে বিক্রি হচ্ছে এসব ওষুধ। ওষুধ প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী ওষুধ বিক্রি করতে গেলে ফার্মাসিস্ট হতে হয়, থাকতে হয় লাইসেন্স এবং নির্দিষ্ট একটি ঘর। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব হাটুরে ও মোড়ের দোকানগুলোর বিক্রেতাদের নেই কোনো বৈধ কাগজপত্র। রোগের ধরণ অনুযায়ী প্রেসক্রিপশন ছাড়াই মনগড়াভাবে ওষুধ বিক্রি করছেন এসব ব্যবসায়ী, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য রীতিমত হুমকি। বিশেষ করে যৌন উত্তেজক ওষুধের এতটাই ছড়াছড়ি যে পথঘাট, ড্রেন এমনকি ফসলি জমিতেও পড়ে থাকতে দেখা যায় খালি বোতল।
চিকিৎসকরা বলছেন, ‘এই ওষুধগুলো তিল তিল করে ধ্বংস করছে আমাদের যুবসমাজকে। যারা এইগুলি কিছু দিন কন্টিনিউ করেন তারা কিডনি, লিভার এবং যৌন বিকলতায় আক্রান্ত হন যা তাদেরকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ভুল করেও যৌন উত্তেজক ঔষধের দিকে হাত না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।’
ওষুধ বিক্রি করতে গেলে ফার্মাসিস্ট হতে হয়, লাইসেন্স থাকতে হয় এবং নির্দিষ্ট একটি ঘরও থাকতে হয় জানিয়ে জেলা ঔষধ তত্বাবধায়ক অফিসের সহকারী পরিচালক শিকদার কামরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘এভাবে ঔষধ বিক্রি আইনগতভাবেই নিষেধ। আমরা বিষয়টি নিয়ে সুন্দরগঞ্জের ঔষধ ব্যবসায়ী এবং বণিক সমিতির সাথে কথা বলে তাদের উচ্ছেদের পদক্ষেপ নেব এবং অভিযানও পরিচালনা করা হবে খুব শীগগির।’