মঙ্গলবার , ১৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ১লা আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল || ২৪শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

আসুন বই পড়ি – এম এ মাসুদ

প্রকাশিত হয়েছে- সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

মনের আনন্দ লাভে বইয়ের ভূমিকা অনন্য। কেননা, বইয়ের জগতে রয়েছে নানান বিষয় আর বৈচিত্র। পাঠক বই পড়ে থাকে তার রুচি মাফিক। বই পড়তে নেই কোনো বিধিনিষেধ। একই বিষয়, কিন্তু তারমধ্যেও রয়েছে বৈচিত্র। উপন্যাসের কথাই বলি, উপন্যাস তো কেবল সাহিত্য নয়! উপন্যাস থেকে আমরা প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরো¶ভাবে রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস এবং সংস্কৃতিসহ নানান বিষয়ে জ্ঞান লাভ করতে পারি। কাব্যের গভীরতা থেকে সংগ্রহ করা যায় জীবনদর্শন। শুধু মানসিক পরিতৃপ্তি নয়, প্রতিনিয়ত বই ডাকছে তার তথ্য সমৃদ্ধ বৈচিত্রময় জ্ঞান ভান্ডারের দিকে। বই পড়ার মধ্য দিয়ে প্রবেশ করতে পারি বিচিত্র ভাবের জগতে। জীবনকে দারুণভাবে উপভোগ্য করতে অবাধ সুযোগ রয়েছে বই পড়ার মধ্যে। বই হচ্ছে জ্ঞানের ভান্ডার। বাংলায় একটা প্রবাদ রয়েছে, ‘যতই পড়িবে, ততই শিখিবে।’ অর্থাৎ, বইয়ের সঙ্গে যার সম্পর্ক যত বেশি, তার জ্ঞানের ভান্ডারও তত বেশি সমৃদ্ধ।

জীবন ও জগতের সান্নিধ্যে থেকে মানুষ যে অভিজ্ঞতা সঞ্চার করেছে তার বিস্তারিত রয়েছে বইয়ের পাতায়। আমাদের মনের ক্ষুধা মিটানো এবং জীবন গঠনের জন্য আবশ্যক উপকরণ হলো বই। মানবজীবন অবলম্বনে যেহেতু বই রচিত হয় সেহেতু বইয়ের মধ্যে মানুষের জীবনের সকল দিকের প্রতিফলন ঘটে। আর জ্ঞানের বিশাল জগতে প্রবেশ করতে হলে চাই বই পড়া।
বিচিত্র বিষয় নিয়ে রচিত বিভিন্ন বই আনন্দের অন্যতম উৎস। কেননা, মানবজীবনের চিত্তবিনোদনের উপাদান খুঁজে পাওয়া বই থেকে। স্বল্পায়ু জীবনে প্রতিটি মানুষ চায় তার জীবনকে সুখী ও আনন্দময় করে তুলতে। এ চাওয়া এবং তা বাস্তবে রূপদান করার জন্য প্রচেষ্টা চালানো মানবজীবনের সহজাত প্রবৃত্তি। তাই তো মনের হরষ মেটাতে বইপ্রেমিকেরা হাতে তুলে নেন বই নামক অকৃপণ বন্ধুকে। আর বই বন্ধু হিসেবে কৃপণতা করে না বলে বই অকাতরে বিলিয়ে দেয় তার জ্ঞান। সেই জ্ঞান মানুষের জ্ঞানের জগতকে করে তোলে সমৃদ্ধ। মানুষ হয়ে ওঠে যোগ্য এবং বিনয়ী। এজন্যই মার্কিন সাংবাদিক ও সাহিত্যিক আর্নেস্ট মিলার হেমিংওয়ে বলেছেন, ”বইয়ের মত এত বিশ্বস্ত বন্ধু আর নেই।

বই পড়ার আনন্দটা পাওয়া যায় অবসরে। আর মানবজীবনে অবসর সময় আসে অনেক। অনর্থকভাবে সেই অবসর সময় না কাটিয়ে বরং বই হাতে তুলে নিলে চমৎকারভাবে কেটে যাবে সেই সময়। কেননা, অবসরে বই পড়া আনন্দের অন্যতম উৎস এবং তা মানুষের মনকে চিত্তাকর্ষক করে তোলে। দুঃখ, সংশয়, হতাশা, ক্লান্তি, বিবাদ এবং নৈরাজ্য যখন মানুষকে অশান্ত করে তোলে ঠিক তখন অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে বই করে তুলতে পারে শান্ত, শোনাতে পারে আশা এবং সান্ত্বনার বাণী। কারো সাথে বন্ধুত্ব ঠিক ততক্ষণই থাকে যতক্ষণ স্বার্থ নিহিত থাকে। কিন্তু বই সম্পূর্ণ বিপরীত। বই শুধু অকৃপণভাবে আমাদের দিয়েই যায়, বিনিময়ে নেয় না কিছুই। তাই তো রুশ ঔপন্যাসিক লিও তলস্তয় মানবজীবনে বইয়ের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছেন, ‘জীবনে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন। আর তা হলো- বই, বই এবং বই।

বেশি দিন আগের কথা নয়। দশক দুয়েক আগেও মানুষ তার প্রিয়জনকে উপহার হিসেবে দিতেন বই। লাইব্রেরিগুলোতে দেখা যেত পাঠকের উপচে পড়া ভিড়। বই পড়ায় আশক্তি এতটাই ছিল যে, কেনার পাশাপাশি কখনো কখনো ধার নিয়ে বই পড়তেও দেখা যেত অনেককেই। পাঠকের কাছে বই ভালো লাগার কারণে হয়তো ধার নেয়া বই আর ফেরতও দিতেন না কেউ কেউ। বই ফেরত না দিলেও তেমন দোষের কিছু ছিল না তা। প্রায় প্রত্যেকটি বাড়ি যেন ছিল একেকটি লাইব্রেরি। বিখ্যাত মার্কিন ঔপন্যাসিক মার্ক টোয়েন বই ধার নিয়ে যে লাইব্রেরি গড়ে তুলেছিলেন তার গল্পটাও ছিল কিন্তু ঠিক এমন।

কিন্তু দুঃখজনক হলো, এখন বাড়িতে লাইব্রেরি গড়ে তোলা তো দূরের কথা, লাইব্রেরিগুলোতেও এখন আর নেই আগের মত সেই ভিড়, পাঠক খরায় ভূগছে সেগুলো। এর অন্যতম কারণ হলো- স্মার্ট ফোনের অপব্যবহার। স্মার্ট ফোনের অপব্যবহারে দিন দিন কমছে বইয়ের পাঠক সংখ্যা। আগে যেখানে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বইও পড়তেন এখন সেখানে পাঠ্যবইয়ের সাথে সঙ্গী হয়েছে স্মার্ট ফোন। এতে ফোনে বাড়ছে আসক্তি আর বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা বই পড়ার আনন্দ থেকে। অথচ শরীরকে সুস্থ রাখতে যেমন ব্যায়াম দরকার তেমনি মনকে চিত্তাকর্ষক করতে দরকার মানসম্মত বই। পারস্যের কবি ওমর খৈয়াম বলেছেন, ‘রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু বইখানা অনন্ত-যৌবনা-যদি তেমন বই হয়।

আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানই যথেষ্ট নয়। জ্ঞানের পরিধি বিস্তারে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বইও পড়তে হবে। মানুষের নিঃসঙ্গতা ঘোচানো এবং নির্মল আনন্দলাভের শ্রেষ্ঠ উপায় হলো বই। বইয়ের মাধ্যমেই বিকাশ ঘটে সভ্যতা ও সংস্কৃতির। একটি মানসম্মত বই আমাদের অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে বের করে দেখাতে পারে আলোর পথ। দুনিয়ায় যে জাতি যত শিক্ষিত, সেই জাতি তত উন্নত। সুতরাং একটি উন্নত জাতি গঠনে স্মার্ট ফোন নয়, চর্চা করতে হবে বই পড়ার। তবেই উন্নত হবে দেশ।

এম এ মাসুদ
গণমাধ্যমকর্মী ও কলাম লেখক
সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ©2017-2025 (এটি গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ) অনলাইন নিবন্ধন আবেদনকৃত। আবেদন নম্বর- ২১৮৮।