শনিবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - হেমন্তকাল || ১লা জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

রামগড়ে চলছে পাহাড় কেটে মাটি উত্তোলনের মহোৎসব

প্রকাশিত হয়েছে- মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২

খাগড়াছড়ির রামগড়ে অবাধে চলছে পাহাড় কেটে মাটি উত্তোলনের উৎসব।পাহাড় খেকোরা হরেক রকম করে নির্বিচারে কাটছে পাহাড়,বনাঞ্চল,ফসলি মাঠের জমি।অভিযোগ রয়েছে উপজেলা প্রশাসন থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটারের ব্যবধানে কয়েকটি স্পটে এই পাহাড় কাটার উৎসব চললেও নির্বিকার রয়েছে প্রশাসন।

জানা যায়,প্রতিবছর এ পাহাড় কাটার এ উৎসব মূলত শুরু হয় বছরের শেষে বৃষ্টি না থাকলে।তবে এবছর সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের অজুহাত দেখিয়ে পুরো সময় জুড়েই পাহাড় কেটে চলছে একটি চক্র।অভিযোগ রয়েছে প্রশাসন ও পাহাড়খেকো দের ম্যানেজ করে এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র।প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড় কাটা ও বালু উত্তোলনের অপরাধে জরিমানা করলেও কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে সেখানে পুরোদমে আবারো পাহাড় কাটায় ব্যস্ত হয়ে যায় পাহাড় খেকোরা।এতে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।অন্যদিকে নির্বিচারে পাহাড় কাটার জন্য প্রশাসনকে দুষছে স্থানীয় জনগণ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাটি ব্যবসায়ী জানান,ইটের ভাটায় ট্রাক প্রতি মাটি বিক্রি করা হয় ২৫০০ টাকায়।এর মাঝে ভাটা মালিকরা তাদের ১৮০০টাকা করে দেয়।বাকি টাকা প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করবে বলে রেখে দেয়।তিনি আরো জানান,অনেক গুলো সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে।মাটি বিক্রি নিয়ে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে না থাকলে বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,রামগড় উপজেলা প্রশাসন থেকে কয়েক কিলোমিটারের ব্যবধানে প্রকাশ্যে পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের চিনছড়ি পাড়ার ফুলকুমারি টিলা,বিড়ি কোম্পানির টিলা,৫নং ওয়ার্ডের আদর্শপাড়ার জামালের টিলা,হকটিলা ও ৮নং ওয়ার্ডের শালবাগান এলাকার মন্নান কোম্পানির টিলায় নির্বাচারে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে।এছাড়াও উপজেলার পাতাছড়া, বলিপাড়া,বৈদ্যটিলা,কালাডেবা,সোনাইআগা,খাগড়াবিল, শ্মশানটিলা,নজিরটিলা,মুসলিমপাড়া,ভতপাড়া সহ বিভিন্ন জায় অন্তত ১০-১৫টি পয়েন্টে নির্বিচারে বালু ও মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে।আইন অমান্য করে এস্কেভেটর (ভ্যাকু), কোদাল ও শাবল দিয়ে ফসলি জমির টপসয়েল ও লাল মাটির পাহাড় কাটা হচ্ছে।যার ফলে পাহাড়ের ওপরের অংশ ন্যাড়া করে উজাড় করা হয়েছে গাছপালা।কোথাও খাড়া ভাবে, আবার কোথাও কাটা হচ্ছে আড়াআড়ি ভাবে। আর কিছু কাটা হচ্ছে উঁচু চূড়া থেকে। এভাবে হরেক রকম কায়দায় কাটা হচ্ছে রামগড়ের বিভিন্ন পাহাড়।এসব মাটি  সরকারি প্রকল্প,পুকুর ভরাট,রাস্তা সংস্কার সহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মানে ব্যবহৃত হয়।

অভিযোগ রয়েছে মাটি ব্যবসায়ীরা এক শ্রেণীর দালাল দিয়ে সাধারণ কৃষককে লোভে ফেলে পাহাড় ও ফসলি জমির মাটি বিক্রিতে উৎসাহিত করছেন।যার ফলে নিজের ভিটের মাটি পর্যন্ত বিক্রি করতে দ্বিধা করেনা তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্কুল শিক্ষক জানান,রামগড়-ফেনী মহাসড়ক সহ উপজেলার প্রতিটি অলি গলির রাস্তাগুলো যেন একরকম মরন ফাঁদে পরিণত হয়েছে।ডাম্পার, মিনিট্রাক দ্বারা সরবরাহ করা কাঠ ও মাটি রাস্তায় পড়ে নষ্ট হচ্ছে সড়কটি।চরম জনদুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছে সাধারন মানুষ।প্রশাসনেরর কোন সঠিক নজরদারি নেয়।যার জন্য অবাধে এসব পাহাড় কেটে পার পেয়ে যাচ্ছে তারা।

অধ্যক্ষ ফারুকুর রহমান বলেন,এভাবে পাহাড় কাটতে থাকলে রামগড়ে একটি পাহাড়ও থাকবেনা।ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে মানুষ।প্রতিবছর এমনিতে পাহাড় ধ্বসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।প্রশাসনের এখনই সঠিক সময় এ পাহাড় খেকো চক্রকে থামানো।

দলের নাম ভাঙ্গিয়ে পাহাড় কাটার বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান কাজী নুরুল আলম বলেন,কারো ব্যক্তিগত দায় আওয়ামীলীগ নিবেনা। যারা এ বেআইনী কাজে নিয়োজিত আছে তারা নিজ দায়িত্বে এসব করছে। দল কাউকে এসবে সমর্থন বা সহযোগিতা দেয় না এবং দেবে না।

রামগড় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব ত্রিপুরা জানান,ভয়াবহ হারে পাহাড় কাটা হচ্ছে।প্রশাসনের আশেপাশে নির্বিচারে পাহাড় কাটার পরেও প্রশাসন নির্বিকার।এভাবে চলতে থাকলে ভয়াবহ পাহাড় ধ্বসে জীবনহানির সম্ভাবনা রয়েছে।তিনি আরো জানান,প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।

রামগড় পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম কামাল জানান,পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি উৎসবে পরিনত হয়েছে।মাটি বহনকারী ডাম্পার ও মিনি ট্রাকের বাড়তি ওজনে পৌর এলাকার রাস্তা ঘাট সংস্কার করেও লাভ হচ্ছেনা।দুয়েকদিন পরেই ভেঙ্গে যায়।

বাংলাদশে পরিবেশ অধিপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুফিদুল আলম জানান,পাহাড় কাটা গুরুতর অপরাধ।এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসক এবং ইউএনও কে জানানো হবে।

রামগড় উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহি কর্মকর্তা ইউএনও খোন্দকার ইখতিয়ার উদ্দীন আরাফাত কে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ©2017-2025 (এটি গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ) অনলাইন নিবন্ধন আবেদনকৃত। আবেদন নম্বর- ২১৮৮।