রবিবার , ৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৩শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল || ১৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

টাংগাইলেও রিজেন্ট চেয়ারম্যান সাহেদের প্রতারণার ফাদ

প্রকাশিত হয়েছে- মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই, ২০২০
মুহাইমিনুল (হৃদয়)টাংগাইল প্রতিনিধি:
রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদের  প্রতারণার ফাদ কেবল স্বাস্থ্যখাত বা রাজধানীতেই সীমাবদ্ধ নয়।নিজেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বড় কর্তা বা মন্ত্রী- এমপির সহযোগী পরিচয়ে সারা দেশেই চালিয়েছে রমরমা প্রতারণা বানিজ্য।ঢাকার বাইরেই বেরিয়ে এসেছে তার ভয়াবহ প্রতারণার চিত্র।
করোনা আক্রান্ত রোগীদের সঙ্গে প্রতারণার দায়ে কয়েকদিন ধরেই আলোচনায় রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ। প্রভাব খাটিয়ে এমন কোন অপকর্ম নেই যা করেনি সে। এবার ঢাকা থেকে ১৬০কিলোমিটার দূরের টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরেও পাওয়া গেলো তার প্রতারণার ভয়াবহ চিত্র।
অমলেশ ঘোষ।উপজেলার গোবিন্দাসী এলাকার মাটি খনন ব্যবসায়ী। গত বছরের শুরুর দিকে রিজেন্ট গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রিজেন্ট কেসিএ’র অধীনে নদী খননের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। কাজ শুরু হলে এক পর্যায়ে ২১ লাখ ৭৪ টাকা টাকা বকেয়া হয় রিজেন্টের কাছে। টাকা চাইতে গেলে আসে মৃত্যুর হুমকি।
অমলেশ ঘোষ বলেন, ঘটনা তুলে ধরতে পারি নাই। কারণ, আমাকে টাঙ্গাইল ডিবি অফিস, এসপি অফিস থেকে ফোন দিয়ে হুমকি দেয়া হয়েছিল। আমি তাদের বলেছি আমার পাওনা টাকা দিচ্ছে না বলে আমি গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছি। তারা বলেছে ঘটনা মিটমাট না করলে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে। পরে উত্তরা থানায় মামলা করতে গেলে সেখান থেকে এসআই বিকাশ কুমার পাল আমাকে হুমকি দিয়েছেন। আমাকে বলা হয়, সাহেদের হাত কত লম্বা, কার সঙ্গে উনার ওঠা-বসা জানেন? এত সাহস কই পাইলেন? পরে আমি অনেক কষ্টে এফআইআর করলে সাহেদ আমাকে বলে যে, আমাকে টাকা দিবে না। আমার নামে ১০টা মামলা দেবে। এমন মামলা দেবে যেন জেল থেকে বের হতে না পারি। আমরা তো সাধারণ মানুষ, এতদূর যেতে পারি না। জিডি করার পর হুমকি দেয়া হয়েছে। আমি তো আমার এতোগুলা পাওনা টাকা পাচ্ছি না। এটার তো কোন সমাধান হলো না। আমরা কার কাছ যাবো?
সাহেদ ও অমলেশের কল রেকর্ডে রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ বলেছিলেন, ‘তুমি যদি বিভিন্নজনের কাছে গিয়ে কথা বল তাহলে তোমাকে একটা টাকাও দিবো না, দেখি তুমি কী করতে পারো। তুমি নাকি বলছো আমার নামে জিডি করবা, আমি যদি চাই তোমাকে ধরতে পারবো। তোমাকে যদি এখন আমি চাই তথ্য মামলায় ফাঁসিয়ে দিতে পারবো। আমার ১-২ লাখ টাকা খরচ হবে, তুমি তখন একটা টাকাও পাবা না।’
সাহেদ পলাতক। তবুও তার ভয়ে মুখ খুলতে চান না অমলেশ। অনেক চেষ্টায় বেরিয়ে আসলো সাহেদের অপকর্মের নানান ফিরিস্তি। অমলেশ ঘোষ বলেন, ‘নাটোরে খাল খননের কাজে আমার থেকে ভেকু গাড়ি নিসিলো ৫টা, বিল হয়েছে ৫ লাখ টাকা আমাকে দিসে ১ লাখ, ৪ লাখ টাকাই বাকি। এখন যদি সাহেদ গ্রেপ্তার হয়, তারপর সে যে বের হয়ে আমাকে মেরে ফেলবে না তার গ্যারান্টি কী? আমার অনুরোধ আমাকে যেন জীবনের নিরাপত্তা দেয়া হয়। সাহেদ একা না তার আরও লোক আছে। প্রশাসন, থানা-পুলিশ, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে সব জায়গায় তার লোক আছে।
ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানও নিয়মনীতি অমান্য করে চলতেন সাহেদের নির্দেশ মত। হিসাবের বিপরীতে টাকা জমা থাকলেও সাহেদের অনুমতি ছাড়া মিলতো না টাকা। অমলেশ আরও জানান, ‘আমাকে তারিখ ছাড়াই চেক দেয়া হয় যা দিয়ে আমি ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারিনি। প্রিমিয়ার ব্যাংকের এলেঙ্গা ব্র্যাঞ্চে গেলে তারা আমাকে বলে সাহেদকে ফোন দিতে। তিনি না বললে টাকা দিবে না। আমি বললাম আমি টাকা পাই বলেই তো আমাকে চেক দেয়া হয়েছে। আমি ২০-২৫ বার গিয়ে ফেরত আসছি। উত্তরা ব্রাঞ্চেও একই অবস্থা। আমি নিশ্চিত ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার লিঁয়াজো আছে।’
সাহেদের হুমকির বিষয়ে উত্তরা থানায় জিডি করলে উল্টো পুলিশের কাছ থেকেই আসে হুমকি। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে। উত্তরা পশ্চিম থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) বিকাশ পালকে ফোন করলে তিনি বলেন, ‘অমলেশ কে? আমি তো তাকে চিনিই না। উনার চেহারাই আমি কখনো দেখিনি। যেখানে কথাই বলিনি সেখানে স্বীকার করার প্রশ্নই আসে না। উনাদের কাছে কোন প্রমাণ থাকলে আমার সিনিয়র স্যারদের কাছে অভিযোগ নিয়ে যেতে বলেন। আর সাহেদ সাহেবের কথা বলছেন, আমি জীবনে মাত্র একবার উনাকে দেখেছি।’
ব্যবসায়িক অংশীদাররাও রক্ষা পায়নি সাহেদের হাত থেকে। বিভিন্ন সময়ে পাওনা টাকা দেয়ার কথা বলে ঢাকা অফিসের টর্চার সেলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। তাদের একজন বলেন, ‘উনি এভাবে আমাকে বলেছেন যে, আমাদের সাথে কথা বলতে হলে সিটি মেয়র লেভেলের হতে হবে, এসপি-ডিসি কিছু না, আমরা মন্ত্রী রদবদল করি। আপনারা এই টাকা আর পাবেন না। যদি টাকা চান তাহলে অংশীদার যারাই আছেন বাংলাদেশের যে প্রান্তেই থাকুক না কেন ধরে গুম করবো।আরও একজন ব্যবসায়ীক অংশীদার জানান, ‘সাহেদ সাহেবের বাসায় যাওয়ার পর আমাদের প্রণব মুখার্জি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সাবেক রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ছবি দেখিয়ে বলে আমি কাদের সঙ্গে চলি বুঝছো। আমার হাত অনেক লম্বা। আমাদের বলে একটা টাকাও পাবা না। যদি টাকা চাও ১০টা করে মামলা দেয়া হবে। তার গানম্যানদের দিয়েও আমাদের ভয় দেখানো হয়। সে তো এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। আমরা আমাদের জীবনের নিরাপত্তা চাই।’এদিকে, সাহেদের ক্ষমতার অপব্যহারে সহায়তাকারী সকলকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী এলাকাবাসীর।

সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ©2017-2025 (এটি গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ) অনলাইন নিবন্ধন আবেদনকৃত। আবেদন নম্বর- ২১৮৮।