অভয়নগরে স্কুল কমিটি, শিক্ষা অফিস, ইউএনওকে থোড়াই কেয়ার করেনা উপজেলার ধোপাদী অটিজম ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এতে করে অন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস হচ্ছে। বিদ্যালয়ের নামে সামান্য জমি দান করে তিনি বিদ্যালয়টিকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুই বোনসহ নিজে ওই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার পাশাপাশি স্ত্রীকে শিক্ষক পদে এবং ভগ্নিপতিকে নাইট গার্ড পদে নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হয়ে তিনি নানামুখি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একের পর এক চাকরি থেকে ছাটাই করার হুমকি প্রদান করছেন। তিনি মাসের পর মাস বিদ্যালয়ের সকল কাগজপত্র নিজ বাড়িতে আটকে রেখে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকছেন। পাশাপাশি একটি আয়ুর্বেদিক ওষুধ কোম্পানীতেও চাকরি করছেন বলে জানা গেছে। অভয়নগর উপজেলা অটিজম ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয় নামের ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক তুহিন রায়, সঞ্জয় গাইন, অপি দত্ত, কল্পনা রায়, মঞ্জুয়ারা আক্তার, সবিতা বিশ্বাস বলেন, প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুর রহিম বিদ্যালয়ে দুই বোনকে চাকরি দেয়ার পর এবার স্ত্রী ও ভগ্নিপতিকে চাকরি দিতে ব্যর্থ হয়ে গত ৩ মাস আগে থেকে নিজেই বিদ্যালয়ে বিনা ছুটিতে অনুপস্থিত রয়েছেন। এমনকি বিদ্যালয়ের রেজুলশেন বহিসহ সকল কাগজপত্র তিনি নিজ বাড়িতে আটকে রেখেছেন। বিষয়টি নিয়ে গত প্রায় দুই মাস আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে সকল শিক্ষক, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে বৈঠকে তিনি আর চাকরি করবেন না বলে জানিয়ে দেন। এবং তিন দিনের মধ্যে সকল কাগজপত্র উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দিবেন মর্মে অঙ্গীকার করেন। এসময় ওই প্রধান শিক্ষকের পিতাও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু দুই মাস অতিবাহিত হলেও তিনি কাগজপত্র জমা দেননি। সর্বশেষ গত ৬ নভেম্বর রবিবার তিনি বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে গায়ের জোরে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরের চেষ্টা করেন। পরে শিক্ষকদের বাঁধার মুখে তিনি স্বাক্ষর না করে চলে যান। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের সভাপতি মোঃ মোশারেফ হোসেন জানান, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিমের পিতা বিদ্যালয়ের নামে আট শতক জমি প্রদান করেন। শর্ত মোতাবেক তার ছেলে আব্দুর রহিমকে প্রধান শিক্ষক, তার দুই বোন রোজিনা সুলতানা ও পলি খাতুনকে শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া হয়। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী ও ভগ্নিপতিকে ওই স্কুলে নিয়োগের চেষ্টা করে। বিদ্যালয়কে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে রূপ দেয়ার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তিনি বেঁকে বসেন এবং বিদ্যালয়ের সকল কাগজপত্র নিজ বাড়ি আটকে রেখে বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকতে শুরু করেন। মাসাধিক কাল অতিক্রান্ত হওয়ার পর তাকে কারন দর্শানোর নোটিশ করা হয়। সন্তোষজনক জবাব না মেলায় পূণঃরায় দু’বার নোটিশ করা হলে তিনি তা গ্রহন করতে অস্বীকার করেন। এক পর্যায়ে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পর্যন্ত গড়ায়। গত প্রায় দুই মাস আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বৈঠকে তিনি চাকরি করবেন না এবং তিনদিনের মধ্যে কাগজপত্র ফেরৎ দেবেন মর্মে অঙ্গীকার করেন। সেই থেকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম একাধিকবার তাগাদা দিলেও তিনি কাগজপত্র না দেয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজ কার্যালয়ে ডেকে চাপ সৃষ্টি করেন। এসময় প্রধান শিক্ষক তার জমি ফেরৎ না দিলে কাগজপত্র দিবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। উল্লেখ্য বিদ্যালয়সহ শিক্ষার্থীদের রক্ষার্থে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কিছুদিন আগে জাতীয় স্থানীয়সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ফলয়াভাবে নিউজ প্রকাশিত হয়। এবং এখনো পযন্ত ওই প্রধান শিক্ষক স্কুলের কাগজপত্র জমা না দিয়ে রয়েছে বহালতবিয়তে। এতে করে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, ওই বিতর্কীত প্রধান শিক্ষকের খুঁটির জোর কোথায়। তার এতটা ক্ষমতার উৎস কি? সচেতন মহলের দাবি, অনতিবিলম্বে ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ গ্রহন করা হোক। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুর রহিমের ব্যবহৃত ০১৯২৫-৯২৪০১৯ নম্বরে যোগাযোগ করলে তিনি তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঐ স্কুল প্রতিষ্ঠানকালে এলাকার যে সব ব্যক্তিরা ছিলো সব ব্যক্তিদের মাধ্যমে মিমাংসার মাধ্যমে স্কুলের কাগজপত্র ফেরত দেবো, আমি স্কুলের অন্য শিক্ষকদের ক্ষতি করবোনা। এ ব্যপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি সব জানি । কিন্তু প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বৈঠকে তিনি চাকরি করবেন না এবং তিনদিনের মধ্যে কাগজপত্র ফেরত দেবেন মর্মে অঙ্গীকার করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেজবাহ উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয়ের সকল কাগজপত্র নিজ বাড়ি আটকে রেখে বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকতে শুরু করেন অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক। তাকে কারন দর্শানোর নোটিশ করা হলেও নোটিশের কোন উত্তর দেননি।
শনিবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - হেমন্তকাল || ১লা জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি
অভয়নগরে অটিজম ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের খুঁটির জোর কোথায়?
প্রকাশিত হয়েছে- সোমবার, ৭ নভেম্বর, ২০২২