কাজিপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে ওএসডি ইউএনও শফিকুল ইসলামের অনিয়মের ধারাবাহিকতা আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে বজায় রেখেছেন পিআইও এ কে এম শাহা আলম মোল্লা। অভিযুক্ত ইউএনও’র ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন তিনি। মাটি ভরাটে অবৈধ বাংলা ড্রেজার ব্যবহার, ঘর নির্মাণে নিম্নমানের উপকরণ, উপকারভোগী নির্বাচনে আর্থিক লেনদেন, ইচ্ছেমত উপজেলার বাইরে থেকে সরবরাহকারী ও শ্রমিক নিয়োগ, উপকারভোগীর শ্রমের মূল্য না দেয়াসহ অশোভন আচরণের অভিযোগ তুলেছেন জনসাধারণ ও জনপ্রতিনিধিরা। যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত গৃহহীনদের ঘর বরাদ্দের অনুরোধ জানিয়ে ইউএনও বরাবর আবেদনেও মিলছেনা প্রতিকার। একই কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘ ৮ বছর কর্মরত থাকায় এমন স্বেচ্ছাচারিতা বলছেন বিশেষজ্ঞজন।
উপজেলার সোনামুখী পূর্ব পাড়ায় নির্মিত ৩৫ টি ঘর সরেজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা যায়, প্রশাসন আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘর বুঝে না দিলেও প্রতিটি ঘর সম্ভাব্য সুবিধাভোগীর দখলে। ৫টি ঘরে দুজন করে দাবিদার দখল করে আছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায় এদের ১৭ জনের আবাদি জমিসহ বসত বাড়ি আছে, ৬ জন এসেছে অন্য উপজেলা থেকে, ৩ জন ব্যবসায়ী ও ১ জন হত্যা মামলার আসামি। স্থানীয় সোনামুখী পূর্ব পাড়ার হতদরিদ্র গৃহহীন সোনেকা খাতুন জানান ঘরের জন্য পিআইও’র পা পর্যন্ত ধরেছি, ঘর পাইনি, তাই বাধ্য হয়ে ১টি ঘরে উঠে পড়েছি। কোহিনূর বলেন, এমপি সাহেবকে দিয়ে লিখিয়ে এনেও ঘর পাইনি। স্থানীয় বাসিন্দারা আরো জানান, বাংলা ড্রেজার ব্যবসায়ী বাবু নামের স্থানীয় প্রভাবশালীর মাধ্যমে ঘর প্রতি ৫০ হাজার টাকা লেনদেন হয়েছে। নির্মাণ শেষে তালাচাবি থাকত তার কাছে। অন্য জেলার মানুষ ঘর পেয়েছে স্থানীয় প্রকৃত গৃহহীনদের বিবেচনায় আনা হয়নি। ঘর চাইতে গিয়ে পিআইও’র দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেন তারা। চালিতাডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল বারী আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় তিনি “খ”শ্রেণীর উপকারভোগী হিসেবে ঘর পেয়েছেন। ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা ব্যায়ে নির্মিত ঘরে স্বপরিবারে বসবাসের ১০ দিনের মাথায় মেঝে ফেটে চৌচির হয়়ে যাওয়ায় ঘর ছাড়তে বাধ্য হন। দ্রুত মেরামত করে দিলেও দেয়ালের পলেস্তারা থেকে হাতের স্পর্শে ঝরতে থাকা বালু দেখিয়ে “কিভাবে থাকি” প্রশ্ন রেখে জানান,
ভিটের জন্য ৪২ হাজার এবং মেঝে ভরাটে ৩ হাজার ৯ শ টাকা খরচ হয়েছে, এছাড়াও পরিবারের একাধিক সদস্য সার্বক্ষণিক শ্রম দিয়েছেন পারিশ্রমিক ছাড়া, মেঝে ভরাট খরচের পাশাপাশি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও ওয়ারিং বাবদ ৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বারীর মতো উপজেলার অন্য উপকারভোগীদের একই রকম অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে কয়েকজন উপকারভোগী অভিযোগ করে বলেন, ঘর নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। ঘরের মেঝে এবং বারান্দা মাটি ও বালু দিয়ে ভরাট করার কথা। কিন্তু উপকারভোগীদের দিয়ে মাটি ও বালু ভরাট করা হচ্ছে। কোনো কোনো ঘরে খোয়া ছাড়াই মেঝে করা হচ্ছে। মেঝেতে ৩ ইঞ্চি ঢালাই দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছে ২ ইঞ্চি বা তার কম। মেঝেতে ঢালাইয়ের নিচে পলিথিন এবং খোয়া দেওয়া হয়েছে উপকারভোগীর কাছ থেকে নিয়ে। ঘরের বেড়া, ঘর ও চালে কাঠ ব্যবহারের তালিকায় রয়েছে শাল, গর্জন, জারুল, কড়ই, শিলকড়ই, শিশু, তাল, পীতরাজ, দেবদারু ও আকাশমণি। কিন্তু দেওয়া হচ্ছে ঢালাওভাবে অপরিপক্ক ইউক্যালিপটাস গাছের নিম্নমানের কাঠ।
চালিতাডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান মুকুল বলেন, তার মতো একজন রগচটা মানুষ, সৌজন্যতা যার মধ্যে নেই সে কিভাবে শুদ্ধাচার পুরস্কার পায়! নিজেইতো অশুদ্ধ, তার ব্যবহার যা তা খারাপ, চেয়ারম্যান, মেম্বার, ঠিকাদার ও সাধারণ মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করে, ভালো আচরণ করাই জানেনা, তার মতো লোক শুদ্ধাচার পুরস্কার মনোনয়ন পেলে বাংলাদেশে শুদ্ধাচারের সংগা নতুন করে করা লাগবে।
যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে যারতার সাথে রূঢ় আচরণ করে, কাজিপুরে একজন মানুষও পাওয়া পাবেননা যে বলবে পিআইওর আচরণ মোটামুটি সন্তসজনক! কাজিপুরের জনসাধারণকে সবচাইতে নিকৃষ্ট সেবা দিচ্ছে পিআইও। এ ব্যাপারে কাজিপুরের পিআইও এ কে এম শাহআলম কথা বলতে নারাজ।