পাবনায় টিসিবির পণ্য বিতরণকে কেন্দ্র করে একাধিক ওয়ার্ড মেম্বার লাঞ্চিতের অভিযোগ উঠেছে দুলাই ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম শাজাহানের বিরুদ্ধে। ২৪ অক্টোবর (রবিবার) বিকালে পাবনা সুজানগর উপজেলার দুলাই ইউনিয়ন পরিষদে এই অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে বলে জানাগেছে।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান শাজাহান বলেন, ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলে পণ্য বিতরণ বন্ধ করা হয়েছে। এখানে কাউকে গায়েহাত বা লাঞ্চিতের কোন ঘটনা হয়নি। কার্ড ছাড়া এখানে মাল দেয়ার কোন সুযোগ নেই। বৈরী আবহাওয়ার কারনে ১৬২টি কার্ড এর মাল বেঁচে যায়। সেখানে উপস্থিত মেম্বারগণেরা সেই মাল ভাগ করে নিতে চান তারা। আমি সেটি না দেয়াতে তারা আমার উপরে ক্ষিপ্ত হয়েছে। বেঁচে যাওয়া মাল অমাকে রেখে দিতে বলেছে ইউএনও স্যার। আমি কোন অন্যায় কাজ করিনি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলেছে মেম্বারা। কিছু মেম্বার আমার বিরুদ্ধে আছেন, তারাই এই অপকর্ম করতে চেয়েছে আমি হতে দেয়নি। আর গায়ে হাতদেয়া ঘটনা মিথ্যা বানোয়াট।
উপস্থিত একাধিক মেম্বার ও স্থানীয়রা জানান, সাধারন মানুষদের মাঝে সরকারের দেয়া (টিসিবির) বিভিন্ন পণ্য বিতরণ করা হচ্ছিলো দুলাই ইউপি পরিষদ চত্বরে। সকাল থেকে শুরু হওয়া এই পণ্য বিতরণ কার্যক্রমের শেষের দিকে চেয়ারম্যান তার নিজ ক্ষমতার দাপটে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজের পছন্দের মানুষদের মাঝে পণ্য বিতরণ করতে থাকেন। এসময় উপস্থিত ওয়ার্ড মেম্বারগণেরা তাকে বাঁধা দিলে তিনি তাদের গায়ে হাত তুলেন ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করনে। এসময় পণ্য নিতে আসা সাধারন মানুষ ও মেম্বারা হতভম্ভ হয়ে দাড়িয়ে থাকলে। এই সময় মেম্বারগণেরা প্রতিবাদ করলে চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে উপস্থিত সকল মেম্বারদের সাথে বাজে আচারণ করেন। এসময় এক নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ মকবুল হোসেন এগিয়ে আসলে তাকে শারীরিক ভাবে লাঞ্চি করেন চেয়ারম্যান ও তার গুন্ডাবাহিনী। এসময় তিনি তার বিরুদ্ধে কথা বল্লে সকল মেম্বারদের পরিষদের আসা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি প্রদান করেন বলে অভিযোগ করে ভুক্তভোগিরা।
এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশ উত্তেজনা বিরাজ করছে দুলাই ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে। যেকোন সময় সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এদিকে পণ্য নিতে আসা গ্রামের সাধারন মানুষেরা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে পন্য না পেয়ে বাড়িতে চলেযান। ঘটনার পরে স্থানীয় মেম্বারগণেরা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে মুঠোফনের মাধ্যমে অভিযোগ দিলে টিসিবির পণ্য বিতরণ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন তিনি। এদিকে চেয়ারম্যানের হাতে লাঞ্চিত এক মেম্বার বর্তমানে চিকিৎসাধিন অবস্থায় সুজানগর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ঘটনার প্রর্তক্ষদর্শী পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ রহমাত আলী বলেন, আমরা ভয়ের মধ্যে আছি ভাই। জনপ্রতিনিধি হয়ে চেয়ারম্যান তার খেয়ালখুশিমত কাজ করতে চান। তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বল্লেই সে আমাদের বাজে ভাষায় গালিগালাজ করেন এমনকি মারতে আসেন। আজ আমাদের বেশ কয়েকজন মেম্বারদের গায়ে হাত দিয়েছেন তিনি। পরিষদের তার ক্যাডাবাহিনী দিয়ে তিনি চলাচল করেন। টিসিবির মাল মানুষ টাকা দিয়ে নিবে। এখানে তিনি তার পছন্দের মানুষদের ঢালাও ভাবে দিতে চান। আরে ভাই এখানে ঢালাও ভাবেতো দেয়া যাবেনা। দরিদ্র, মধ্যবিত্ত, অসহায় মানুষদের দিতে হবে। তার জন্য একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তিনি কোন নিয়ম মানতে রাজি না। আমরা এই জালিম, নির্যাতনকারী চেয়ারম্যানের সাথে কাজ করতে পারছিনা। আমাদের বাঁচান, তার কঠিন শাস্তির দাবি করছি আমরা।
ঘটনার বিষয়ে টিসিবির দায়িত্বরত ডিলার রতন কুমার সাহা বলেন, সেখানে তেমন কোন বড় ধরনের ঘটনা হয়নি। হাতাহাতি বা মারামারি আমার চোখের সামনে হয়নি। কথাকাটাকাটি হয়েছে মেম্বারদের সাথে চেয়ারম্যানের। কার্ড এর বাহিরে কোন মাল দেয়া হয়নি। পন্য বিতরণের শেষে কয়েকজন কার্ড নিয়ে মাল নিতে আসে। এই মাল দেয়াকে কেন্দ্র করেই সেখানে একটু ঝামেলা হয়েছে। তবে সেটি তেমন কোন বড় ধরনের ঘটনা নয়। চেয়ারম্যান মেম্বারদের সাথে সমন্বয়ন করেই মাল দেয়া হচ্ছে। ইউএনও স্যারের নির্দেশ মোতাবেক আমরা কাজ করি। কোন ধরনের অনিয়মের সুযোগ এখানে নেই।
ঘটনার বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন বলেন, টিসিবির পন্য বিতরণ নিয়ে স্থানীয় দুলাই উইনিয়নের চেয়ারম্যানের সাথে মেম্বারদের ঝামেলা হয়েছে। বিষয়টি আমাকে মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন তারা। টিসিবির পণ্য বিতরণে অনিয়মের প্রতিবাদ করায় মেম্বারদের লাঞ্চিত করেছেন চেয়ারম্যান। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। মেম্বরগণেরা স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছেন। ঘটনার তদন্ত করে দোষিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।
সুজানগর ইউএনও মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় এক মেম্বার আমাকে মুছোফোনে মৌখিক ভাবে বিষয়টি জানিয়েছে। চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে তারা অভিযোগ দিয়েছে। চেয়ারম্যান সাহেও আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। ঘটনার বিষয়ে আমাকে লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। টিসিবির পণ্য বিতরণে কোন অনিয়ম মেনে নেয়া হবেনা।