পাবনার ভাঙ্গুড়ায় রুনা খাতুন (২৪) নামের এক গহবধূর মাথার অসুখ ও উকুন বিনাশ করতে তার সম্মতিতে প্রায় ১৫ দিন আগে মাথার চুল কাটার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্বশুর রফিকুল ইসলামসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার জামাই নুর আলম কে নিজ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে শ্বশুরবাড়িকে প্রায় ৪ ঘন্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (৩০জুলাই) দুপুরের দিকে উপজেলার অষ্ঠমনিষা ইউনিয়নের হরিহর পুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নুর আলম ওই গ্রামের আমিন উদ্দীনের ছেলে ও গৃহবধূ রুনা প্রতিবেশী রফিকুল ইসলামের মেয়ে। এ বিষয়ে নুর আলমের বোন আঞ্জুয়ারা খাতুন বাদী হয়ে শনিবার বিকালে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে গৃহবধূ বলছে প্রায় ১৪ দিন আগে তাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে রাতের কোন এক সময়ে তার মাথার চুল কেটে দিয়েছেন তার স্বামী ও ননদ। সম্মানের ক্ষেত্রে এতদিন বিষয়টি তিনি গোপন রেখেছিলেন।
লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, প্রায় ৫ মাস পূর্বে নুর আলম প্রতিবেশী রফিকুল ইসলামের মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক করে বিবাহ করলেও পরে তাদের উভয়ই পরিবার সকলেই মেনে নেয় এবং সুখেই সংসার করে আসছিল। কিন্তু শনিবার দুপুরের দিকে রফিকুল ইসলাম(৪৫), আয়ুব আলী(৫০), শফি হোসেন(৪০), রেফাই হোসেন(৩৫), মোছাঃ রেনুকা খাতুন, রোকেয়া খাতুনসহ বেশকিছু লোকজন জামাইয়ের বাড়িতে জোরপূর্বক প্রবেশ করে নুর আলমকে এলোপাথারি মারধর করতে থাকে এসময় তার বৃদ্ধ পিতা-মাতা এগিয়ে আসলেও তাদেরকে মারধর করে জোর পূর্বক রফিকুল ইসলামের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ঘরে আটকিয়ে রেখে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করতে থাকে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রফিকুল ইসলামের মেয়ে রুনা খাতুন এর আগে দুই স্থানে বিবাহ হলেও ওই সকল স্থান থেকে পারিবারিক কলহের কারণে ছাড়াছাড়ি হয়ে তার পিতার বাড়ি হরিহর পুরেই অবস্থান করছিল। তবে প্রতিবেশী নুর আলমের সাথে তৃতীয়বার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে স্থানীয় গ্রাম্য প্রধানদের মধ্যস্ততায় ২ লাখ টাকা যৌতুকে ও ৪ লাখ টাকা কাবিনে প্রায় ৪ মাস আগে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। সুখেই কাটছিল তাদের সংসার কিন্তু ওই গৃহবধূর মাথা ব্যাথা ও মাথায় উকুন হলে প্রতিবেশী এক গৃহ বধূর এক অনুকরণে সেও তার মাথার চুল কাটার সিদ্ধান্ত নেন। তাই প্রায় দুই সপ্তাহ আগে তার শ্বশুর বাড়িতেই বাসার ছাদে বসে গৃহবধূর মাথার চুল কেটে দেন তার স্বামী। এর পর থেকে ওই গৃহ বধূ তার বাবার বাড়িতেই অবস্থান করে আসছিলেন। এমনকি ঈদে জামাই শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে বেশ কয়েক দিন অবস্থান করলেও চুলকাটার বিষয়ে কেউ কিছুই বলেন নি। ঘটনার পর থেকে রুনা খাতুনও বিষয়টি কাউকে বলেন নি। কিন্তু দুই সপ্তাহ পরে গত শনিবার মাথার চুল কাটার বিষয়টি তার পরিবারের লোকজন দেখে ফেলেন এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে বলেন যে, তার স্বামী নুর আলম তার মাথার চুল কেটে দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ততক্ষনাৎ উল্লেখিত অভিযুক্ত সকলে মিলে জামাই নুর আলমের বাড়িতে গিয়ে জামাইকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তাকে টেনে হেঁচড়ে তার শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যায়। এসময় নুর আলমের বৃদ্ধপিতা মাতা বাধা দিতে গেলে তাদের বাধা উপেক্ষা করে জামাইকে জোর পূর্বক শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মারধর করে আটকিয়ে রেখে চুলকাটার কারণ জানতে চায়। প্রায় ৪ ঘন্টা অবরুদ্ধ রাখার পর স্থানীয় অষ্টমনিষা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেকের হস্তক্ষেপে গ্রাম পুলিশের উপস্থিতিতে নুল আলম কে মুক্ত করে। ছাড়া পেয়ে তার আত্মীয় স্বজন তাকে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
এ ঘটনায় গৃহ বধূ রুনা খাতুনে দাবী, তার স্বামী ও ননদ তাকে মাঝে মধ্যেই শারীরিক নির্যাতন করেন এবং গত ১৬ জুলাই রাতে খাবারের সাথে চেতনা নাশক ওষুধ সেবন করিয়ে রাতের কোন এক সময়ে তার স্বামী ও তার ননদ মিলে তার মাথার চুল কেটে দিয়েছে। ঘুম থেকে জেগে উঠে বিষয়টি টের পেলে তার স্বামীর সাথে ঝগড়া হলেও মান সম্মানের ভয়ে চুল কাটার ঘটনা গোপন রেখে ছিলেন। তবে কি ধরণের বা কোন ধরণের খাবারের সাথে চেতনা নাশক ওষুধ খাইয়ে ছিলেন তা তিনি বলতে পারেন নি।
এ বিষয়ে নুর আলম বলেন, তিনি সব জেনে শুনেই প্রতিবেশী রুনা খাতুনকে বিবাহ করেছেন এবং সম্প্রতি স্ত্রীর মাথা ব্যাথা ও উকুন বিনাশের জন্য স্ত্রীর সম্মতিতে প্রায় ১৫ দিন পূর্বে শ্বশুরবাড়ির ছাদে বসে মাথার চুল কেটে দিয়েছিলেন। কারণ মানুষের জীবনের চেয়ে চুল বড় হতে পারে না।
ঘটনার বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেক বলেন, রফিকুল ও তার জামাইয়ের মধ্যে একটু ঝামেলা হয়েছিল তাই নূর আলমকে আমার জিম্মায় নিয়ে এসেছিলাম ইউনিয়ন পরিষদে বসে সমাধান করার লক্ষ্যে। পরে শুনলাম নূর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে অষ্টমনিষা ইউপি চেয়ারম্যান সুলতানা জাহান বকুলকে একাধিকবার ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ঘটনার বিষয়ে ভাঙ্গুড়া থানার ওসি মুঃ ফয়সাল বিন আহসান বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনা স্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। স্বামী স্ত্রীর মাঝে একটু ঝামেলা হয়েছিল। বিষযটি স্থানীয় ভাবে সমাধানের জন্য ইউপি চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে।