সোমবার , ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

দেশের দীর্ঘস্থায়ী অর্থনীতির জন্য কৃষির বিকল্প নাই – সাইদুর রহমান

প্রকাশিত হয়েছে- রবিবার, ১৯ জুন, ২০২২

” মাছে ভাতে বাঙালি ” অনেক আগেই প্রবাদ বচনটি অর্থহীন হয়ে গেছে। এ দেশের কৃষক মানে সমাজের একটা শোষিত, অবহেলীত, প্রতিবাদহীন জনগোষ্ঠী! আর কৃষিখাত মানে কৃষকের ঘাম ঝড়া ফসলের ন্যায্যমূল্য অপ্রাপ্তির খাত। কৃষক কোন শ্রেনীর নাগরিক? রাষ্ট্র কিংবা সমাজ বলতে পারবে না।  অথচ কৃষি সবচেয়ে আদি এবং মহৎ পেশা ।আমার মতে কৃষক হলো অন্নযোগান দানকারী একটা গোষ্ঠী,  যাঁরা অযত্নে, অবহেলায় পড়ে আছে এ দেশের সমগ্র ভূখন্ডে । দেশের জনসংখ্যার তুলনায় তাঁদের সংখ্যা গরিষ্ঠতা যেমন বেশী, তেমনি বঞ্চিত  অবহেলিত ও তাঁরা বেশী । তাঁদের চিনতে অসুবিধা হয়না । কারন কঙ্কাল স্বরূপ অর্ধ উলঙ্গ চেহারাই বলে দেয় উনারা কৃষক !

 অর্ধহারে, অনাহারে কৃষক আজ কঙ্কাল স্বরূপ । তাঁদের ভবিষৎ স্বপ্ন প্রদীপ বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে । উন্নয়নের প্লাবনে  তাঁদের রক্তের হিমোগ্লোবিন ঘোলাটে  হয়ে যাচ্ছে । রক্তশূণ্যতা তাঁদের দেহে স্থায়ীভাবে বাসা বেঁধেছে । অভাব, ঋণগ্রস্হতা, কন্যা দায়গ্রস্হতা, রোগাগ্রস্হতা তাঁদের নিত্যদিনের সঙ্গী । অতিবৃষ্টি -অনাবৃষ্টি তাঁদেরকে হিংস্র বাঘের মতো প্রতিনিয়ত আক্রমন করছে । দিনের পর দিন রোদে পোড়ে বৃষ্টিতে ভিজে তাঁরা ফসল ফলাচ্ছেন, অথচ মধ্যস্বত্বভোগীরা ফসলের লাভ ভক্ষণ করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছে । ঋণের কষাঘাতে ক্ষত -বিক্ষত । তাঁদেরকে শান্তনার বাণী শোনাবে কে  ?

 কৃষক, কৃষিকাজ, কৃষিপণ্যের একই সমান্তরাল রেখায় থাকার কথা। যদিও অদৃশ্য কারনে কৃষক, কৃষিজমি সমান্তরাল অবস্হানে থাকে। কৃষিপণ্য মধ্যস্বত্বভোগীদের লোলুপ দৃষ্টির জন্য অসম রেখায় অবস্হান করে। কৃষক, কৃষি কাজ করেন অনেকটাই নিজ জমির উলঙ্গ গা সবুজ চাদরে আবৃত রাখার জন্য। এই কারনে হয়তোবা কৃষক বছরের পর বছর লোকসান গুনেও কৃষি কাজ করেন। দেশের উৎপাদনশীল সর্ব বৃহৎ খাত ” কৃষিখাত ” কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে সোনার বাংলার স্বপ্ন পূরন দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার নয়। কৃষি বিপ্লব ছাড়া খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া সম্ভব না। জিডিপির ৩০  ভাগ আসে কৃষি থেকে । এ দেশের শতকরা ৮০ ভাগ শ্রমজীবি মানুষের মধ্যে ৬৫ ভাগ মানুষেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কৃষির সাথে ওতপতোভাবে জড়িত। দেশের উন্নয়নের মূল ভিক্তি কৃষি । জাতীয় অর্থনীতির সূচকের টেকসই  উন্নয়নের ক্ষেত্রে কৃষির অবদান অনস্বীকার্য। কৃষিকে অর্থনীতির কংক্রিট মনে করতে হবে। কারন ১৮ কোটি মানুষের খাদ্যের জোগান আগে দিতে হবে। তারপর অর্থনীতি, ক্ষমতা, রাজনীতি। বর্তমান বিশ্বে যে দেশ খাদ্যে পরনির্ভরশীল হবে, সে দেশের অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি সবই ক্ষুদ্রার্থ মানুষের হুংকারে কৃষিজমির মতো উলঙ্গ হবে। বিশ্বে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারনে, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিও খাদ্য ঘাটতিকে সামাল দিতে পারছে না। ইতিমধ্যে বিশ্বের ২২ টি দেশ খাদ্য রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। দিনে দিনে খাদ্য রপ্তানি হ্রাস পাচ্ছে । এদিকে বাংলার কৃষক কাঙ্খিত ফসল উৎপাদনে ব্যর্থ হলে, খাদ্য ঘাটতির চাপে বাজেটের সকল সুরক্ষা প্রাচীর ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। খাদ্যে স্বনির্ভরশীল হতে হলে কৃষিতে সরকারকে মনোযোগ দিতেই হবে। গ্লোবালাইজেশন যুগে পরনির্ভরশীল অর্থনীতি, বায়বীয় অর্থনীতি।

 কৃষককে নিয়ে পুরানো ধ্যানধারণা বাদ দিয়ে তাঁদের সামাজিক সম্মানের জায়গাটা রাষ্ট্রকে পরিস্কার করতে হবে।  কৃষক মানে মর্যাদাহীন জনগোষ্ঠী না, কৃষক মানে অধিকার বঞ্চিত জনগোষ্ঠী না। কৃষক হলেন এদেশের সবচেয়ে খাঁটি দেশ প্রেমিক। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা দিতে পারে একমাত্র দুনীর্তি মুক্ত কৃষক।

 আওয়ামীলীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল ” গ্রাম হবে শহর ” বার্তাটা ভালো ছিল কিন্তু বাস্তবায়নে অগ্রগতি খুবই কম। কিন্তু কৃষককের উন্নয়নকে ব্যতিরেকে এ স্লোগান সফলতার মূখ দেখবে না। অন্যদিকে কৃষি পণ্যের সঠিক মূল্যায়নের অভাবে, বিমূখী বাজার নীতি, প্রক্রিয়া জাত করনের অভাব  সবমিলে কৃষি এখন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এবং অলাভজনক খাতে পরিণত হয়েছে । তাছাড়া বর্তমানে  বিদুৎ, গ্যাস, ডিজেল, তেল,  কৃষিতে ব্যবহৃত  বীজ, কীটনাশক,  কৃষি মজুরি বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতি কৃষিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।সরকারী ভাবে কৃষি পণ্য ক্রয়ের নীতিমালা অতি প্রাচীন  । নীতিমালা যুগ উপযোগী না হওয়ায়, অসাধু সরকারী কর্মচারীদের হাতে জিম্মি হয়ে কৃষক কম দামে কৃষি পণ্য বিক্রি করেন।

দেশ বর্তমানে উন্নয়নের মহাসড়কে, স্বপ্নের পদ্মাসেতু প্রবেশ দ্বার উন্মোচন সময়ের অপেক্ষায়। মাথা পিছু আয়,  জিডিপির প্রবৃদ্ধি হার বৈশ্বিক করোনাকে মোকাবেলা করেও ধরে রেখেছে। ৬ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকার দেশের সর্ববৃহৎ,  ৫১ তম প্রস্তাবিত বাজেট।  বাংদেশের প্রথম বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা । বর্তমান বছরের বাজেটে কৃষিতে বরাদ্দ বেড়েছে। এ বছর  বাজেটে কৃষিতে বরাদ্দ ৬.২। প্রতি বছর বাজেটের আকার বাড়ে। বিগত  বছর গুলোতে অর্থনীতির সকল সূচক সর্বদিকে অপ্রত্যাশিত গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে । কিন্তু হতভাগা, হতদরিদ্র কৃষককের সূচকের কোন উন্নতি হচ্ছে না ।

 দশ টাকায় এক কোটি কৃষক ব্যাংক একাউন্ট খুলেছেন এ জন্য আওয়ামী সরকারকে সাধুবাদ । বর্তমানে এক কোটি ৪৩ লক্ষ ৭৫ হাজার কৃষককে কৃষি কার্ড দিয়েছে বর্তমান সরকার । কিন্তু এই ভালো উদ্যোগটা সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এবং অসৎ মানুষের হাত ধরে আজ বাস্তবায়নে রাষ্ট্র ব্যর্থ  । ভর্তুকির টাকা যদি সরাসরিভাবে কৃষককের ব্যাংক একাউন্টে চলে যেত, তাহলে ভর্তুকির টাকার সুফল কৃষকে পেত।

কৃষককে  ই-কৃষককে রূপান্তরিত করার জন্য  সরকার ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছেন। যে কৃষককের পড়নে কাপড় নেই, শিক্ষিত করার কোন সরকারি উদ্যোগ চোখে পরেনা। সে কৃষককে প্রযুক্তির গান শোনানো বড় বেমানান!  বরং কৃষি বীমা চালু করতে পারলে । বাংলার কৃষককের  প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত চাপ কমে যাবে এবং ঋণের  বুঝাও কমবে ।

এদেশের কৃষি এবং কৃষককুলকে বাঁচাতে হলে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে । ব্যাংক গুলিকে দালাল মুক্ত করতে হবে আরও সহজ শর্তে  কৃষককে ঋণ দিতে হবে। পণ্যের সঠিকভাবে মূল্য নির্ধারন করতে হবে । সরকারি -বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে

সরাসরি কৃষককের কাছ থেকে পণ্য কিনতে হব।  প্রতিটি থানায় কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতের ব্যবস্থা করতে হবে । কৃষি ভিক্তিক শিল্প স্হাপন করতে হবে । সার, কীটনাশক, কৃষি উপকরণের দাম সমন্বয় করতে হবে। কৃষককে আধুনিক কৃষি চাষাবাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে । শিক্ষিত যুবকদেরকে কৃষিতে সম্পৃক্ত করতে হবে । কৃষককে আধুনিক কৃষি চাষাবাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। নতুবা সরকারের প্রস্তাবিত  বাজেট ও উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় অন্তরায় হবে খাদ্য সংকট।

কৃষকরা হয়তোবা আন্দোলন বুঝেননা। বুঝলে তাঁদের আন্দোলন হতো সবচেয়ে যুক্তি সংগত । তবে সব কিছুর শেষ আছে । কৃষককের বর্তমানে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে । বিস্ফোরণ যে কোন প্রেক্ষাপটে ঘটতে পারে  ।

উপদেষ্ঠা সম্পাদক মোঃ গোলাম হাসনাইন রাসেল-০১৭১১-৪১৭৮৮০, সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

২০২৪ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ