শনিবার , ৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২২শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল || ১৪ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

কালের আর্বতণে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক অপরুপ শিল্পী বাবুই পাখি ও তার দৃষ্টিনন্দন বাসা

প্রকাশিত হয়েছে- বুধবার, ১ জুলাই, ২০২০

জহুরুল ইসলাম (জীবন) হরিপুর ( ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধিঃ

এখন আর তেমন চোঁখে পড়ে না নিপুণ কারিগর বাবুই পাখি ও তার নিজের তৈরী দৃষ্টিনন্দন বাসা। কালের আর্বতণে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক অপরুপ শিল্পী বাবুই পাখির বাসা। কবি রজনীকান্ত সেনের কালজয়ী ছড়াটিতে লিখেছেন ‘বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থাকি কর শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পড়ে তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে।’ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নিপুণ বাসা তৈরির কারিগর সেই বাবুই পাখি আজ বিলুপ্তির পথে। ঠাকুরগাঁও জেলার সীমান্তঘেষা হরিপুর উপজেলার গ্রামের আনাচে-কানাচে তাল গাছ দেখা যেত আর তালগাছের পাতায় পাতায় দেখা যেত বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা । কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান গ্রাম বাংলার সেই চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী নিপুণ বাসা তৈরির কারিগর বাবুই পাখি ও তার বাসা । উপজেলায় আগের মত বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা আজ আর চোঁখে পড়ে না। গ্রাম বাংলার পুকুর পাড়ে, মাঠে ও রাস্তার পাশে বীর সৈনিকের মত মাথা তুলে দাড়িঁয়ে থাকত তালগাছ যা আজ ইট ভাটার কারণে হারিয়ে গেছে।

 

তেমনি হারাতে বসেছে প্রাকৃতিক ভোরবেলায় পাখির কিচিরমিচির ডাক, সুমধুর পাখির ডাকাডাকি ও উড়াউড়ি। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, যেসব গ্রামে এক সময় তালগাছ ও নিপুণ কারিগর বাবুই পাখির বাসা ও পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত থাকত। সেসব গ্রামে এখন আর সেখানে বাবুই পাখির বাসা তৈরির সেই তালগাছ নেই। গ্রামের রাস্তা-ঘাট, পুকুর-পাড় ও মাঠের মধ্যে তালগাছ ছিল এবং আষাঢ় মাসের আগে থেকে বাবুই পাখি বাসা বুনতে শুরু করে এবং কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত থাকত পুরো গ্রাম। এখন হাতে গোনা কয়েক টা তালগাছ আছে। ইটের ভাটায় জ্বালানি হিসাবে চলে যাচ্ছে সব তালগাছ। আষাঢ় মাস আসতে না আসতে কিচিরমিচির শব্দে মাঠে প্রান্তরে উড়ে উড়ে খড়কুটো সংগ্রহ করে তালগাছে বাসা বাঁধে তারা। মূলত তালগাছে বাসা বাঁধতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে বাবুই পাখি। বাবুই পাখির বাসা যেমন দৃষ্টিনন্দন তেমনি মজবুত । প্রবল ঝড়ে বাতাসে টিকে থাকে তাদের বাসা। বাবুই পাখির শক্তবুননের এ বাসা টেনেও ছেড়া কঠিন। বাবুই পাখি একাধারে শিল্পী, স্থপতি ও সামাজিক বন্ধনের প্রতিচ্ছবি। এরা এক বাসা থেকে আর এক বাসায় যায় পছন্দের সঙ্গী খুঁজতে । সঙ্গী পছন্দ হলে স্ত্রী বাবুই পাখিকে সাথী বানানোর জন্য কত কিছুই না করে। পুরুষ বাবুই নিজের প্রতি আকর্ষণ করার জন্য খাল-বিল ও ডোবায় গোসল সেরে ফুর্তিতে নেচে নেচে বেড়ায় গাছের ডালে ডালে ।

 

এর পর উচু তাল গাছ, নারিকেল গাছ বা সুপারি গাছের ডালে বাসা তৈরির কাজ শুরু করে । বাসা তৈরির অর্ধেক কাজ হলে কাংখিত স্ত্রী বাবুইকে ডেকে দেখায়। বাসা পছন্দ হলেই কেবল পুরো কাজ শেষ করে। বাসা পছন্দ না হলে অর্ধেক কাজ করেই নতুন করে আরেকটি বাসা তৈরির কাজ শুরু করে। অর্ধেক বাসা তৈরি করতে সময় লাগে ৫/৬দিন । স্ত্রী বাবুই পাখির বাসা পছন্দ হলে বাকিটা শেষ করতে সময় লাগে ৪দিন। কেননা তখন পুরুষ বাবুই মহা আনন্দে বিরামহীনভাবে কাজ করে। স্ত্রী বাবুই পাখির প্রেরণা পেয়ে পুরুষ বাবুই খুবই শিল্পসম্মত নিপুণভাবে বাসা তৈরি করে। স্ত্রী বাবুই ডিম দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুরুষ বাবুই খুঁজতে থাকে আরেক সঙ্গীকে। পুরুষ বাবুই এক মৌসুমে ৬টি পর্যন্ত বাসা তৈরি করতে পারে। অর্থাৎ এরা ঘর সংসার করতে পারে ৬ সঙ্গীর সঙ্গে। তাতে স্ত্রী বাবুইয়ের না নেই। প্রজনন প্রক্রিয়ায় স্ত্রী বাবুই ডিমে তা দেয়ার ২ সপ্তাহের মধ্যেই বাচ্চা ফোটে। ৩ সপ্তাহ পর বাবুই বাচ্চা বাসা ছেড়ে উড়ে যায়। বাবুই পাখির প্রজনন সময় হলো ধান ঘরে উঠার মৌসুম। স্ত্রী বাবুই দুধধান সংগ্রহ করে এনে বাচ্চাদের খাওয়ায়। বাবুই পাখি তাল গাছে বাসা বাধে বেশি।

সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ©2017-2025 (এটি গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ) অনলাইন নিবন্ধন আবেদনকৃত। আবেদন নম্বর- ২১৮৮।