শুক্রবার , ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

ঝালকাঠিতে ১ জনের নিয়ন্ত্রণে ৫টি  সাংস্কৃতিক সংগঠনের অনুদান হরিলুটের অভিযোগ!

প্রকাশিত হয়েছে- মঙ্গলবার, ৩০ জুন, ২০২০
রিয়াজুল ইসলাম বাচ্চু, ঝালকাঠি: 
ঝালকাঠিতে ১ জনের নিয়ন্ত্রণে ৫টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের অনুদান হরিলুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বেগবান ও সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চার লক্ষ্যে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় ঝালকাঠির ৩০টি সাংস্কৃতিক সংগঠনকে ৬লাখ ৩৫ হাজার টাকা অনুদান বরাদ্দ করলেও সেই বরাদ্ধ নিয়ে হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে। সারা বছর সাংস্কৃতিক চর্চা বা কার্যক্রমে কোন ভূমিকা না থাকলেও কিছু প্যাড ও সাইনবোর্ড সর্বস্ব ভূইফোর সংগঠনকে অনুদান প্রাপ্তদের তালিকায় দেখে জনমনে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন যাচাই না করে শুধুমাত্র আবেদনের মাধ্যমে অনুদান প্রদান করায় ‘স্থানীয় সুযোগ সন্ধানী কতিপয় ধূরান্ধার ব্যক্তি’ বরাদ্দের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে জনৈক এক সাংস্কৃতিক সংগঠক একাই ৫টি সংগঠনের নামে আবেদন করে প্রায় ১লাখ ১০হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার পায়তারা চালাচ্ছেন বলে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে “ধানসিঁড়ি অপেরা পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি স্বপন কুমার দাস, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ কয়েকটি সংগঠন অভিযোগ করেছে। অভিযোগে বিভিন্ন সংগঠনের নামে তার আত্মসাতকৃত সরকারী অনুদানের অর্থ উদ্ধার ও জালজালিয়াতীর মাধ্যমে সরকারী অর্থ হাতিয়ে নেয়ার তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী আইনে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন।
    তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের কাছে জেলার ৩০টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের আবেদনের অনুকুলে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে থেকে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৬ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকার অনুদান প্রদান করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আঃ গণি বয়াতি শিল্প সংঘ ২০ হাজার টাকা, কবিতাচক্র ঝালকাঠি ২৫ হাজার টাকা, ঝালকাঠি শিল্পী পরিষদ ৩০ হাজার টাকা, প্রতীক নাট্যগোষ্ঠী ২০ হাজার টাকা, ঝালকাঠি থিয়েটার ও শিশু থিয়েটার ৩০ হাজার টাকা, মিতু সেতু সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও পাঠাগার ২০ হাজার টাকা, ধানসিঁড়ি অপেরা ২০ হাজার টাকা, সোনার বাংলা বাউল সংগীত একাডেমী ২০ হাজার টাকা, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী ২০ হাজার টাকা, সুর সাগর সংগীত একাডেমী ২০ হাজার টাকা, প্রতিভা সংগীত একাডেমী ২০ হাজার টাকা, জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ ২০ হাজার টাকা, আওয়ামী শিল্পী গোষ্ঠী ২০ হাজার টাকা, কিশোর থিয়েটার ২০ হাজার টাকা, রূপসী বাংলা সংগীত একাডেমী ২০ হাজার টাকা, নৃত্য মেলা ২০ হাজার টাকা, সুগন্ধা বাউল শিল্পী ২০ হাজার টাকা, কিশলয় খেলাঘর আসর ২০ হাজার টাকা, কবি জীবনানন্দ সংগীত পরিষদ ২০ হাজার টাকা, উত্তরণ সংগীত একাডেমী ২০ হাজার টাকা, কলতান সংগীত একাডেমী ২০ হাজার টাকা, শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ ২০ হাজার টাকা, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ২০ হাজার টাকা, আবুল হাসেম সংগীত একাডেমী ২০ হাজার টাকা, সপ্তগ্রাম সমন্বিত বাউল কল্যাণ সংস্থা ২০ হাজার টাকা, প্রবাহমান বাংলার গ্রাম ২০ হাজার টাকা, সালমা শিল্পী গোষ্ঠী ২০ হাজার টাকা, সাইডো সংগীত একাডেমী ২০ হাজার টাকা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ২০ হাজার টাকা বরাদ্ধ পেয়েছে।
     অভিযোগ উঠেছে, ঝালকাঠির সাংস্কৃতিক সংগঠক দুলাল দাস একাই ৫টি সংগঠনের অনুকূলে সরকারি অনুদানের জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আবেদন করে মোট অনুদানের ৫ভাগের একভাগ হিসাবে ১লাখ ১০হাজার টাকা বরাদ্ধ ভাগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। তার আবেদনে “ধানসিঁড়ি অপেরা পার্টি (যাত্রাদল)কে ২০হাজার, কিশলয় খেলাঘর আসরকে ২০ হাজার, ঝালকাঠি থিয়েটার ও শিশু থিয়েটারকে ৩০ হাজার, কবি জীবনানন্দ সংগীত পরিষদ ও শিক্ষালয়কে ২০হাজার ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটকে ২০হাজার টাকা বরাদ্ধ প্রদান করেন। এসব সংগঠনের সাথে জড়িত অন্যান্য কর্মকর্তাদের অনেকে তার এ গোপন আত্মসাৎ তৎপরতা সম্পর্কে জানতে পেরে তার অভিযোগ তুলেছে আর অনেকে তার সাথে যোগাযোগ করে নিজের ভাগ নিয়ে দর কসাকসি চুড়ান্ত করেছে বলে অভিযোগে জানা গেছে।
       এ বিষয়ে “ধানসিঁড়ি অপেরা পার্টি (যাত্রাদল) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি স্বপন কুমার দাস জানায়, বেশ কয়েক বছর আগে আমি সভাপতি ও দুলাল দাসকে সাধারণ সম্পাদক করে সংগঠনের যাত্রা শুরু করি। সংগঠনের সব কাগজপত্র দুলাল দাসের কাছে থাকায় প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২ বারে ৪০হাজার টাকা ও এক বার বিশেষ বরাদ্দ হিসাবে ৫০ হাজার টাকা অনুদান পেলে সে টাকার কোন হিসাব নেই। গত বছরের ২৫ জানুয়ারি একটি যাত্রাপালা আয়োজনের জন্য দুলাল দাসকে ৭০ হাজার টাকা দিলেও অনুষ্ঠান শেষে আমরা ব্যয়ের হিসেব চাইলে সে ক্ষেপে যায়। পরের বছর তিনি একক ভাবে একজনকে সভাপতি বানিয়ে সংগঠন তার ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিনত করে। এবছর আমরা জানতে পেরে সরকারী অনুদান যাতে সে একা হাতিয়ে নিতে না পারে সে জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আপত্তি জানিয়েছি।”
    এদিকে ঝালকাঠি বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট সভাপতি রফিকুল ইসলাম স্বপন জানায়, “২০১৩ সালে আমরা শিল্পকলা নির্বাচনের সময় স্থানীয় ১৩টি সংগঠন জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহনের জন্য “সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট” গঠন করি। সেই কমিটিতে আ: মালেক সভাপতি ও দুলাল দাস সাঃসম্পাদক ও আমাকে যুগ্ম সম্পাদক করা হয়। পরবর্তীতে সভাপতি আ: মালেক আমেরিকায় চলে গেলে কোন প্রকার সভা বা আলোচনা না করে অসাংগঠনিক ভাবে আমাকেও বাদ দিয়ে দুলাল দাস সংগঠনের একক মালিক হয়ে দাড়ায়। সেই থেকে তিনি একাই বিভিন্ন সময় সরকারী অনুদান হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাত করে আসছে যা জেলা প্রশাসক তদন্ত করলেই প্রমান হবে।
    অন্যদিকে ঝালকাঠি থিয়েটারের নাট্যকর্মী রিয়াজ খান অশ্রু জানায়, “২০০০ সালে ঝালকাঠি থিয়েটারের যাত্রা শুরু করে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন সময় নাট্যানুষ্ঠান করেছি। কিন্তু সভাপতি দুলাল দাসের স্বেচ্ছাচারিতা ও নাট্যকর্মীদের অবহেলা-র্দূব্যবহারের কারনে ২০১১ সালের পর থেকে সে আর কোন নাটক মঞ্চস্থ করতে পারেনি।” তাই সংগঠনের কার্যক্রম সরেজমিন তদন্ত পূর্বক অনুদান হস্তান্তর করার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে দাবি জানান।
    এ ব্যাপারে ঝালকাঠি জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আ’লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মনোয়ার হোসেন খান সাংবাদিকদের বলেন, “দুলাল দাস একাই ৫টি সংগঠন পরিচালনা করলেও এর মধ্যে ১টির সংগঠনের কিছু কার্যক্রম রয়েছে। বাকিগুলোর কার্যক্রম চলছে বিচিত্র ভাবে। যে কারনে এসব সংগঠনের জন্য বরাদ্দ দেয়া অনুদান নিয়েও নানারকম অভিযোগ রয়েছে।
      এ ব্যাপারে সাংস্কৃতিক সংগঠক দুলাল দাসের কাছে জানতে চাইলে বলেন, প্রতিবছর জেলা প্রশাসন ও জাতীয় দিবসগুলোতে আমাদের প্রতিটি সংগঠন সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন ও পরিবেশন করে আসছে যার প্রমান রয়েছে। আমার সাথে জমি নিয়ে দ্বন্দের কারনে এক এডভোকেট ও দেবোত্তরের জমি দখল করে রাস্তা নির্মানকারী এক ব্যক্তির সাথে বিরোধের কারনে তারাই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার চালাচ্ছে।
     “ধানসিঁড়ি অপেরা পার্টি (যাত্রাদল) প্রতিষ্ঠাতা তিনি দাবী করে বলেন, প্রথম কমিটিতে স্বপন কুমার দাসকে তিনি সভাপতি বানালেও সে সংগঠন থেকে বেশ কিছু টাকা ধার নেয়। সেই টাকা ফেরত না দেয়ায় তাকে বাদ  দিয়ে দীপ নাথ বিশ্বাস কে সভাপতি এবং তিনি ম্যানেজার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। ঝালকাঠি থিয়েটার ও শিশু থিয়েটারের তিনি সভাপতি উল্লেখ করে বলেন, নাট্যকর্মী রিয়াজ খান অশ্রু বরিশালের একটি মেয়ে সংক্রান্ত ঝামেলার কারনে সংগঠন থেকে বাদ দেয়ায় এসব অভিযোগ করছে।
     “সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট” জাতীয় সংগঠন হওয়ায় বর্তমান সভাপতি সাইদুর রহমান সেন্টু ও তিনি সেক্রেটারী উল্লেখ করে একটি মামলা সংক্রান্ত কারনে কেন্দ্রীয় নির্দেশে রফিকুল ইসলাম স্বপনকে বাদ দেয়া হয়েছে বলে জানান। এছাড়া কিশলয় খেলাঘর আসরে মানিক রায় সভাপতি ও তিনি সেক্রেটারী এবং কবি জীবনানন্দ সংগীত পরিষদ ও শিক্ষালয়ে সুনিল বরন সভাপতি ও তিনি সেক্রেটারী উল্লেখ করে প্রতিটি সংগঠনের সক্রিয় কার্যক্রম রয়েছে বলে দাবী করেন। এছাড়া তাদের সংগঠনের আয়োজনে বিভিন্ন সময় সুধীজনকে সম্মননা পদক দিলেও দুএক ব্যক্তিকে সেই সম্মাননা না দেয়ায় আমার নামে নানারকম মনগড়া-বানোয়াট অভিযোগ করে বেড়াচ্ছে বলে তিনি জানান।
      এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোঃ জোহর আলী সাংবাদিকদের জানান, ৫টি সংগঠনের নামে একজন অনুদানের আবেদন করা বিষয় একটি অভিযোগ আমি পেয়েছি। এর প্রেক্ষিতে সেই সংগঠনগুলোর বরাদ্দকৃত অনুদান স্থগিত রাখা হয়েছে। এ বিষয় তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

উপদেষ্ঠা সম্পাদক মোঃ গোলাম হাসনাইন রাসেল-০১৭১১-৪১৭৮৮০, সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

২০২৪ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ