সোমবার , ২৪শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - হেমন্তকাল || ৩রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

দুর্নীতিবাজ ব্যাংক ম্যানেজারকে বাঁচাতে মরিয়া উর্ধ্বতন কর্মকর্তা

প্রকাশিত হয়েছে- শনিবার, ৫ মার্চ, ২০২২

রাজশাহীর আলিয়া একজন নারী শ্রমিক। তিনি নগরীর ডাশমারী এলাকার ইসাহাক আলীর মেয়ে। সেই আলিয়ার ছবি ও ভোটার আইডি ব্যবহার করে তার অনুপস্থিতিতে সোনালী ব্যাংক সেনানিবাস শাখায় ২০২০ সালে তার নামে খোলা হয় একটি ব্যাংক হিসাব। যার হিসাব নম্বর-৪৬২২৭০১০১০৫৫৪। তৎকালীন সোনালী ব্যাংক সেনানিবাস শাখায় কর্মরত ব্যাংক ম্যানেজার কাজী আসিফা শারমিন হিসাব খুলে দিয়েছেন নিজের রেফারেন্সে। তিনি প্রতারক চক্রের সাথে হাত মিলিয়ে ব্যাংক হিসাব খুলে প্রতারণায় সহায়তা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আলিয়ার সাথে প্রতারণা করতে মোহনপুর গার্লস কলেজের প্রভাষক মাহবুবা খাতুন ছবি ও তার স্বামী ওবায়দুল রহমান লিটন ব্যাংক ম্যানেজার কাজী আসিফা শারমিনকে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে তাকে ম্যানেজ করে স্বামী স্ত্রী পরিচয়ে মাহবুবা খাতুন ছবি ও লিটন মিলে আলিয়ার নামে একটি ব্যাংক হিসাব খোলেন। হিসাবটি খোলার ২ বছর পর প্রতারক চক্র ইদ্রিস আলী নামের এক ব্যক্তিকে আলিয়ার নামে খোলা ভূয়া হিসাবের চেক দিয়ে তাতে ৬ লাখ টাকার অংক বসিয়ে ব্যাংকে জমা করেন। পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তা ডিজঅনার করেন ইদ্রিস আলী।  এরপর টাকা দেওয়ার জন্য আলিয়ার কাছে পাঠানো হয়েছে উকিল নোটিশ। উকিল নোটিশ পেয়ে নিরীহ আলিয়ার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। কিভাবে, কে তার নামে হিসাব খুলে তাকে ফাঁসাতে চেয়েছে তা জানতে আলিয়া তার বোন নদি ওরফে রুনাকে সাথে নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে খোঁজ করেন। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তৎকালীন সোনালী ব্যাংক সেনানিবাস শাখায় কর্মরত ম্যানেজার কাজী আসিফা শারমিন আলিয়ার নামে হিসাবটি খুলে দিয়েছেন। তখন ম্যানেজারকে উকিল নোটিশের বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ৬ লাখ টাকা দিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নেন নইলে বিপদ হবে।

এ ঘটনায় হতবাক আলিয়া ন্যায় বিচার চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগসহ সংবাদ সম্মেলন করেন। অভিযোগের পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সংবাদ প্রকাশের নড়েচড়ে বসে সোনালী ব্যাংক। বিষয়টি সরজমিন তদন্ত করতে রাজশাহী সোনালী ব্যাংক জিএম অফিসের এজিএম মোরশেদ ইমামকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি অন্য দুই সদস্য হলেন, প্রিন্সিপাল অফিসার সেকেন্দার হোসেন ও হাবিল উদ্দিন।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা তদন্তে নেমে ম্যানেজার কাজী আসিফা শারমিনকে বাঁচাতে ভুক্তভোগীসহ তার বোন নদীকে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি দেখিয়ে অপারগ হওয়ায় বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে মীমাংসার প্রস্তাব দেন। তাদের কথায় রাজি না হয়ে প্রতারণা শিকার আলিয়া তদন্ত কমিটির নিকট ম্যানেজারের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দাবি করেন।

এদিকে প্রভাষক মাহবুবা খাতুন ছবির কারণে ম্যানেজার কাজি আসিফা শারমিন বিপদে পড়েছেন। সেকারণে তাকে এঘটনা থেকে রেহাই পেতে একটা ব্যবস্থা করতে বলেন শারমিন। এরপর মাহবুবা খাতুন ছবি তার ব্যবহৃত ফোন থেকে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে আলিয়াকে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি দেখান। তাতে কাজ না হলে তিনি (ছবি) বলেন, তার ভাই পুলিশের এসপি কথা না শুনলে ভাইকে দিয়ে ক্রসফায়ার করা হবে। সুট করা হবে বলে হুমকি দিয়েছেন। এতকিছুর পরও যখন ম্যানেজারকে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছেনা তখন ২ মার্চ বুধবার তদন্ত কমিটির সদস্য প্রিন্সিপাল অফিসার হাবিল উদ্দিন প্রতারণার শিকার আলিয়া ও বোন রুনা বেগম ওরফে নদীকে লক্ষীপুর প্রিন্সিপাল অফিসে ডেকে নিয়ে আসেন। সেখানে এজিএম হুমায়ুন কবির নেতৃত্বে কয়েকজন বসে বিষয়টি মিমাংসা জন্য চাপাচাপি করেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নিজেদের দোষ স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি ভুল বশত হয়ে গেছে। মিমাংশা করে নিলে আমরা হিসাবটি ক্লোজ করে দিবো। এছাড়াও তারা বলেন ম্যানেজার একজন সম্মানিত ব্যক্তি তার সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ঠিক হবেনা। এরপর প্রতারণা শিকার আলিয়া ও তার লোকজন লিখিতভাবে মিমাংসার কথা বললে ব্যাংক কর্মকর্তারা তা প্রত্যাখান করেন। (তাদের কথোপকথনের অডিও ও ভিডিও সংরক্ষিত)
এ বিষয়ে মুঠোফোনে প্রিন্সিপাল অফিসার হাবিল উদ্দিন বলেন, তারা উভয় পক্ষ বসতে চেয়েছিলো বলে আমি তাদের ডেকেছিলাম। আমরা আলিয়ার পক্ষে দু’সপ্তাহ আগে হেড অফিসে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছি।  এবিষয়ে বসে উভয় পক্ষকে নিয়ে মিমাংসার চেষ্টা করেছিলাম।পছন্দ হয়নি বলে আলিয়া পক্ষ আদালতে মামলা করবেন বলে চলে গেছেন।
এবিষয়ে জানতে মুঠোফোনে জিএম অফিসের এজিএম মোরশেদ ইমামকে ফোন দিলে তিনি বলেন, মিমাংসাতে বসার বিষয়টি আমি জানি না। তদন্ত কমিটি সদস্য মিমাংসা করতে পারেন কি না জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনিও তদন্ত শেষ হয়েছে মর্মে জানিয়ে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন।

এবিষয়ে জিএম অফিসে সরাসরি গিয়ে কথা হয় এজিএম হুমায়ুন কবিরের সাথে। তাকে প্রশ্ন করা হয় এঘটনায় ব্যাংক ম্যানোজার কাজী আসিফা শারমিনের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি বাদে আর কি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন? তিনি বলেন, কাজী আসিফা শারমিনকে রামেক শাখা থেকে সরিয়ে তাকে কোর্ট বিল্ডিং শাখায় বদলি করা হয়েছে। মিমাংসা বসার বিষয়ে তিনি বলেন আভ্যন্তরীণ ভাবে তিনি ও হাবিল উদ্দিন আরেকটি তদন্ত করছেন। ঐ তদন্তের স্বার্থে তাদের ডাকা হয়েছিল। পূর্বের তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।

ফোন দিলে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) শাহাদাত হোসেন বলেন, এ বিষয়ে  সব আমি জানি। এজিএম হুমায়ুন কবির যা বলেছেন তাই আমার বক্তব্য।

কথা বলতে সোনালী ব্যাংক করপোরেট শাখার জেনারেল ম্যানেজার মীর হাসান মোহাম্মদ জাহিদকে ফোন দেওয়া হলে তিনি
বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট এখনো আমি হাতে পাইনি। এ বিষয়ে ডিজিএম শাহাদত হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তদন্ত কমিটি তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছেন বলে জানিয়ে বললে তিনি বলেন আমি এখনো পাইনি।

 

 

#চলনবিলের আলো / আপন

সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ©2017-2025 (এটি গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ) অনলাইন নিবন্ধন আবেদনকৃত। আবেদন নম্বর- ২১৮৮।