শনিবার , ৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২২শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল || ১৪ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

বিশ্বনবী হযরত রাসুল (সা:)মিরাজ ও আধুনিক বিজ্ঞান – মাওলানা:শামীম আহমেদ 

প্রকাশিত হয়েছে- শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
মেরাজের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য মুহাম্মদ সা.কে অবিশ্বাসী কোরাইশরা যখন বায়তুল মুকাদ্দাস সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন করে ও কাবা হতে জেরুজালেমের পথের বর্ণনা এবং বায়তুল মুকাদ্দাসের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দিতে বলে, তখন হযরত সা. প্রতিটি উত্তর ও প্রত্যেক স্থানের বিবরণ নিখুঁতভাবে দিতে সক্ষম হন। এতে অবিশ্বাসীদের চোখ স্থির হয়ে যায় এবং বিশ্বাস না হলেও অন্তর তাদের বিশ্বাস করতে বাধ্য করে।
পরবর্তী যুগে বৈজ্ঞানিকদের মধ্যে মুহাম্মদ সা.-এর সশরীরে মেরাজ গমনের ঘটনা নিয়ে আলোড়ন চলতে থাকে। তাদের মতে, নভোমন্ডলের বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করার পেছনে যে সব অসাধারণ গুণাবলি দরকার, তা মানবের পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা, পৃথিবীর উপরে মাত্র ৫২ মাইলব্যাপী বায়ুমন্ডল রয়েছে, তার উপরে আর বায়ুমন্ডল নেই। আছে হিলিয়াম, ক্রিপটন, জিয়ন প্রভৃতি গ্যাসীয় পদার্থ। বায়ুস্তর ভেদ করে এসব হালকা গ্যাসীয় পদার্থের অভ্যন্তরে এসে কোনো জীবজন্তুর প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব নয়। কেননা দেহের অভ্যন্তরীণ চাপ ও বহির্ভাগের চাপ সম্পূর্ণ পৃথক। এই চাপের সমতা রক্ষা করা জীবের পক্ষে কঠিন। এছাড়া ঊর্ধ্বাকাশে রয়েছে মহাজাগতিক রশ্মি ও উল্কাপাতের মতো ভয়ঙ্কর ও প্রাণহরণকারী বস্তু ও প্রাণীসমূহের ভয়। এই যুক্তি প্রদর্শন করে চৌদ্দশ’ বছর কেটে গেছে এবং বিজ্ঞানীদের চোখে হযরতের নভোভ্রমণ বা মেরাজ উপেক্ষিত হয়েছে। ইতোমধ্যেই বিজ্ঞানীগণ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন যে, ঘণ্টায় মাত্র পঁচিশ হাজার মাইল বেগে চলা সম্ভব হলে পৃথিবী ও আকাশের মধ্যাকর্ষণ স্তর অতিক্রম করা সম্ভব। বিজ্ঞানের এসব অগ্রগতির সাথে এ কথা দিন দিন পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে, মুহাম্মদ সা.-এর এ মেরাজ সশরীরেই ছিলো। তিনি সশরীরে মেরাজে গিয়েছিলেন বললেও তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সম্ভব এবং আজকের বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা ও আগামী দিনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি দৃঢ়ভাবে প্রমাণ করতে পারছে।
চৌদ্দশ’ বছর জ্ঞানী-বিজ্ঞানীরা যেখানে জোর গলায় প্রমাণ করে দেখাতেন যে, মহাশূন্যের মহাকাশে মানুষ বিচরণ করতে পারে না, সেখানে তারাই বিংশ শতাব্দীর শেষে প্রমাণ করে দেখালেন যে, মানুষ গ্রহ হতে গ্রহান্তরে শূন্য হতে মহাশূন্যে বিচরণ করতে পারে। নতুন আবিষ্কার করে-নতুনের সন্ধান দিয়ে তারা চৌদ্দশ’ বছরের পুরাতন বৈজ্ঞানিকদের হতাশাকে খন্ডন করতে পারেন। আমেরিকা নভোচারী ও তার সহচরবৃন্দ পৃথিবী হতে দু’ লক্ষ চল্লিশ হাজার মাইল দূরের চাঁদের সাথে মিতালি পেতে বিশ্বকে অবাক করে দিলেন। বর্তমান সময়ে বৈজ্ঞানিকদের মধ্যে চলছে দারুণ প্রতিযোগিতা- কে প্রথম মঙ্গলগ্রহে, কে বুধ, শুক্র, ইউরেনাস ও নেপচুনে গিয়ে পৌঁছতে পারবে। এরই মধ্যে পৃথিবীর সমপরিমাণ আরো সাতটি গ্রহ আবিষ্কার হয়েছে বলেও নাসার পক্ষ হতে বিশ্ববাসীকে জানানো হয়েছে। সুতরাং কোনো নির্বোধ এখন কথা বলার কি কোনো অবকাশ রাখে যে, নভোচারী গ্যাগারিন স্বপ্ন সাধনায় আধ্যাত্মিক শক্তিবলে মহাশূন্যে বিচরণ করেছেন?
আসমান থেকে পৃথিবীতে কিংবা পৃথিবী থেকে আসমানে মানুষের আসা-যাওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। আমাদের নবীর আগেও তা’ সংঘটিত হয়েছে। হযরত আদম আ. ও তার স্ত্রী হাওয়া-তারা দু’জনেই মানুষ। সৃষ্টির পর থেকেই তারা সপ্তম আসমানে অবস্থিত জান্নাতে বসবাস করছিলেন। এক পর্যায়ে আল্লাহ তাদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আদম ও হাওয়া আ.কে আল্লাহ্ জান্নাত থেকে দুনিয়ায় নেমে আসতে বলেছেন; আর তারা হাত ধরাধরি করে নেমে এসেছে- ব্যাপারটাতো এমন নয়। সপ্তম আকাশ থেকে পৃথিবীতে নেমে আসা চাট্টিখানি কথা নয়। এখানেও যে কুদরতী সিঁড়ির প্রয়োজন ছিলো, তা’ অবান্তর নয়। এছাড়া হযরত ঈসা আ.কে ইহুদিরা হত্যা করতে চেয়েও হত্যা করতে পারেনি। আল্লাহ স্বীয় অসীম কুদরতে ঈসা নবীকে সশরীরে আসমানে তুলে নিয়েছেন। সূরা নিসার ১৫৬-১৫৮নং আয়াতে তার সাক্ষ্য রয়েছে।
নব্য আবিষ্কারের যুগে মেরাজ সম্পর্কে যুক্তিবাদীদের আরেকটি জিজ্ঞাস্য ছিলো যে, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কৃত যান্ত্রিক উপকরণ ব্যতীত ভ্যুলোক থেকে আরশে আজিম পর্যন্ত হযরত মুহাম্মদ সা.-এর পক্ষে সশরীরে মেরাজে গমন করা কি সম্ভব? এ প্রশ্নের জবাব খুবই সহজ। প্রথমত মেরাজ হলো একটি মুজিযা। আর নবীদের মুজিযাবলির প্রকাশ একমাত্র আল্লাহ। নবীগণ হলেন প্রকাশনার ক্ষেত্র মাত্র। মানুষের জন্য যা’ অসম্ভব, আল্লাহ্র পক্ষে তা সম্ভব। আল্লাহর কুদরতি ক্ষমতার সামনে অসম্ভব বলে কিছুই নেই। সর্বজিনিসের ওপর আল্লাহ ক্ষমতাবান। আর রাসূলের মেরাজ সম্পর্কিত আয়াতে তো স্বয়ং আল্লাহ বলে দিয়েছেন- সমস্ত দুর্বলতা থেকে পবিত্র যে আল্লাহ তিনিই নিজের বান্দাকে রাতারাতি নিয়ে গেছেন। এখানে নবী মেরাজে ‘গেছেন’ বলা হয়নি; বরং তাকে স্বয়ং ‘আল্লাহ নিয়ে গেছেন’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর মেরাজ হলো মুজিযা আর মুজিযার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই।
বৈজ্ঞানিকরা যেসব নিয়মতত্তে¡র আবিষ্কার করেন, মেরাজ সেসবের বিরোধী। যেমন আগুন মানুষকে পোড়ায় কিন্তু ইব্রাহীম (আ)কে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপের পরও তিনি পোড়া যাননি। এসবই বিজ্ঞানীদের জ্ঞান বা সিদ্ধান্ত বিরোধী। নবী-রাসূলগণের এ জাতীয় অসংখ্য মুজিযা আছে, যা’ বিজ্ঞানের সূত্রে ব্যাখ্যা করা যায় না। দ্বিতীয়ত. মুহাম্মদ (সা) মানুষের আবিষ্কৃত কোনো রকেট নিয়ে আকাশ ভ্রমণ করেননি, করেছিলেন জিব্রাঈল কর্তৃক আনীত আল্লাহ্ প্রদত্ত ‘বোরাকে’ চড়ে। যার গতিবেগ রকেটের গতিবেগের মতো ছিলো না। ছিলো সেকেন্ডে কোটি কোটি মাইল। চন্দ্র অভিযানে অ্যাপোলো-১৬ যেমন বিকল হয়ে পড়েছিলো, অরিয়ন-এর এলুমিনিয়াম আস্তরগুলো যেমন খুলে খুলে পড়ে যাচ্ছিলো ও নভোচারীদের জীবনের ওপর মহাবিপদ এসেছিলো, তেমন ঘটনা বোরাকের ক্ষেত্রে ঘটেনি। তেমন মহাবিপদও নভোভ্রমণে হযরতের জীবনের ওপর আসেনি। দু’ লক্ষ চল্লিশ হাজার মাইল অতিক্রম করতে যে কষ্ট পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের স্বীকার করতে হয়, যে উদ্বেগ, অস্বস্তি ও ভীতির মাঝে সময় গুণতে হয়, তদ্রæপ ঝুঁকি হযরত সা.কে নিতে হয়নি। কোটি কোটি মাইল পথ অতিক্রম করে, আকাশের কঠিন দ্বার উন্মোচন করে নবীজী আকাশের শেষপ্রান্তে এমনকি আরশে আজীমে উপনীত হন। ক্লান্তি, জড়তা, অস্থিরতা তাকে নিবৃত্ত করতে পারেনি। নভোচারীদের মহাশূন্যে বিচরণের পূর্বে তাদের দেহকে তন্ন তন্ন করে অভিজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা পরীক্ষা করা হয়। শুধু একদিন-দু’দিন পরীক্ষা করে উপযুক্ত বলে তাদের সার্টিফিকেট দেয়া হয় না। মাসের পর মাস তাদের শারীরিক সহিষ্ণুতার কৌশল, রক্তচাপ, হৃদক্রিয়া, বৃদ্ধির পরিমাণ, পঞ্চেন্দ্রিয়ের উপযুক্ততা যাচাই করে নভোভ্রমণের উপযুক্ত কিনা, তা’ বিচার করা হয়। এরপর উপযুক্তদেরকে সর্বপ্রকার ব্যবস্থাদি দিয়ে মহাকাশ বিচরণে পাঠানো হয়। হযরত মুহাম্মদ সা.-এর জন্য বিংশ শতাব্দীর নভোচারীদের চেয়েও ভিন্নতর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিলো। নিশ্চয় গ্যাসীয় বস্তুর মাঝে টিকে থাকার মতো কুদরতি ঔষধ তার শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছিলো। নবীজীকে সর্বকাজে উপযোগী ও সর্বক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরূপে প্রকাশ করতেই আল্লাহর সর্বাপেক্ষা প্রিয়, সুনিপুণ ও শক্তিশালী ডাক্তার জিব্রাঈল নবীজীর বক্ষ অপারেশন করেছিলেন এবং তার জড়ধর্মী স্বভাব দূরীভূত করে শক্তিশালী আলোর স্বভাবে রূপান্তরিত করেন। 

 

#চলনবিলের আলো / আপন

সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ©2017-2025 (এটি গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ) অনলাইন নিবন্ধন আবেদনকৃত। আবেদন নম্বর- ২১৮৮।