শনিবার , ৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২২শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল || ১৪ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

ইসলামে অসহায় ও এতিমদেরকে  ভালোবাসার গুরুত্ব ও ফজীলাত – মাওলানা:শামীম আহমেদ 

প্রকাশিত হয়েছে- রবিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২২

ইসলাম মানবকল্যাণের ধর্ম। ইসলামী সমাজদর্শন চায় মানবসমাজকে দয়া-মায়া-মমতা ভালোবাসার ডোরে আবদ্ধ করে একটি সুখীসমৃদ্ধ কল্যাণকামী সমাজ গঠন করতে। ইসলাম এতিম অসহায় শিশুর অধিকারের ব্যাপারে পবিত্র  কোরআন, হাদিস ও ফিেহর কিতাবে জোর তাগিদ দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, প্রশাসনিকভাবে তাদের অধিকার সংরক্ষণের ভিত্তি রচিত করেছে। বাংলা অভিধান অনুযায়ী মাতৃ-পিতৃহীন বালক-বালিকাকে এতিম বলে। ইসলামের দৃষ্টিতে এমন শিশুকে এতিম বলা হয় যার পিতা মারা গেছে। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত সে এতিম হিসাবে গণ্য হবে। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তাকে আর এতিম বলা হবে না। হানজালা ইবনে হুযাইম আল হানাফী (রা.) থেকে বর্ণিত।

তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, স্বপ্নদোষ হলে কোনো ছেলে শিশু এতিম থাকে না আর ঋতুস্রাব হলে কোনো মেয়ে শিশু এতিম থাকে না। (সিলসিলা সহিহাহ, পৃষ্ঠা-৩১৮০) অর্থাৎ ছেলেদের স্বপ্নদোষ আর মেয়েদের ঋতুস্রাব হওয়া প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার অন্যতম আলামত। এই আলামত পাওয়া গেলে ইসলামের দৃষ্টিতে তাদেরকে এতিম বলা যাবে না। আবার যে শিশুর মা মারা গেছে আর বাবা বেঁচে আছে তাকে ইসলামের দৃষ্টিতে এতিম বলা হবে না। মা বর্তমান থাকা অবস্থায় অনেক সম্পত্তি থাকলেও বাবার মৃত্যুতে সেই সন্তান এতিম হিসেবেই গণ্য হবে।

আমাদের প্রিয়নবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিশুকালে এতিম ছিলেন। জন্মের পূর্বেই পিতাকে হারান। তিনি সারাটি জীবন সমাজের এতিম অসহায়দের জন্য কাজ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘তারা তোমাকে এতিম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, তাদের ইসলাহ তথা সুব্যবস্থা (পুনর্বাসন) করা উত্তম…।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-২২০) অন্যত্র আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘পিতৃহীনদেরকে পরীক্ষা করতে থাকো, যে পর্যন্ত না তারা বিবাহযোগ্য হয়। অতঃপর তাদের মধ্যে ভালো-মন্দ বিচারের জ্ঞান দেখলে, তাদের সম্পদ তাদেরকে ফিরিয়ে দাও। তারা বড় হয়ে যাবে বলে অপচয় করে ও তাড়াতাড়ি করে তা ভক্ষণ করো না। যে অভাবমুক্ত, সে যেন যা অবৈধ তা থেকে নিবৃত্ত থাকে এবং যে বিত্তহীন, সে যেন সঙ্গত পরিমাণে ভোগ করে। আর তোমরা যখন তাদেরকে তাদের সম্পদ সমর্পণ করবে, তখন তাদের ওপর সাক্ষী রেখো। হিসাব গ্রহণে আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা নিসা, আয়াত-৬) অর্থাৎ নির্বোধ অবস্থায় সম্পদ বিনষ্টের ভয়ে এতিমদের সম্পদ প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে তাদের হাতে অর্পণ না করা।

আলোচ্য আয়াতের তাফসিরে বলা হয়েছে, যারা দরিদ্র, অন্যের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে তারা এতিমদের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করতে গিয়ে যদি নিজের জীবিকা নির্বাহে ব্যাঘাত ঘটে তাহলে তারা ন্যায়সঙ্গতভাবে এতিমদের সম্পদ থেকে নিতে পারবে। আর যদি কেউ না নেয় আরো উত্তম। আম্মাজান হজরত আয়েশাহ (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অভাবমুক্ত হবে সে যেন নিজেকে সম্পূর্ণ বিরত রাখে। আর যে ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত হবে সে সঙ্গত পরিমাণ ভোগ করে।’ এ আয়াতটি নাজিল হয়েছে এতিমের সম্পদকে কেন্দ্র করে, যদি তত্ত্বাবধায়ক দরিদ্র হয় তাহলে তত্ত্বাবধানের বিনিময়ে ন্যায্য পরিমাণে তা থেকে ভোগ করবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৪৫৭৫, সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-৩০১৯)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু জার (রা.)‎-কে বলেছেন, ‘হে আবু জার! আমি দেখছি তুমি দুর্বল। আর আমি তোমার জন্য তাই পছন্দ করি যা নিজের জন্য করি। কোনো দুজন মানুষের তুমি আমির হয়ো না এবং এতিমদের মালের দায়িত্ব গ্রহণ করো না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-১৮২৬) এতিমের সাথে কঠোর ও রূঢ় আচরণ ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘(হে নবী) আপনি এতিমের প্রতি কঠোর হবেন না।’ (সুরা দুহা, আয়াত-৮) এতিমদের প্রতি যে সম্পদ ব্যয় করবে তা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই হওয়া উচিত। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা আহার্যের প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও (আল্লাহর ভালোবাসায়) অভাবী, এতিম ও বন্দিকে আহার্য দান করে। (এবং তারা বলে) শুধু আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তোমাদের আহার্য দান করি। বিনিময়ে তোমাদের থেকে কোনো প্রতিদান চাই না।’ (সুরা দাহর, আয়াত-৮, ৯)

সাহল বিন সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আমি ও এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকব [তিনি তর্জনী ও মধ্য অঙ্গুলি দিয়ে ইঙ্গিত করেন এবং এ দুটির মধ্যে তিনি সামান্য ফাঁক করেন]।’ (বুখারি, হাদিস নং- ৫৩০৪) এতিমের সাহায্যকারী মর্যাদা সম্পর্কে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, ‘বিধবা, এতিম ও গরিবের সাহায্যকারী ব্যক্তি আল্লাহর পথে মুজাহিদের সমতুল্য। অথবা তার মর্যাদা সেই (নামাজের জন্য) রাত জাগরণকারীর মতো, যে কখনো ক্লান্ত হয় না। অথবা তার মর্যাদা সেই রোজাদারের মতো, যে কখনো ইফতার (রোজা ভঙ্গ) করে না।’ (মুসলিম, হাদিস নং- ৫২৯৫) এতিমের প্রতিপালন জান্নাতে যাওয়ার একটি সহজ উপায়। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো এতিমকে আপন মাতা-পিতার সঙ্গে নিজেদের (পারিবারিক) খাবারের আয়োজনে বসায় এবং (তাকে এই পরিমাণ আহার্য দান করে যে) সে পরিতৃপ্ত হয়ে আহার করে, তাহলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-১৮২৫২) অন্যত্র নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘মুসলিমদের ওই বাড়িই সর্বোত্তম, যে বাড়িতে এতিম আছে এবং তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা হয়। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট ওই বাড়ি, যে বাড়িতে এতিম আছে অথচ তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়।’ অতঃপর তিনি তাঁর অঙ্গুলির মাধ্যমে বলেন, ‘আমি ও এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এমনভাবে অবস্থান করব।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-৩)

 

 

#চলনবিলের আলো / আপন

সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ©2017-2025 (এটি গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ) অনলাইন নিবন্ধন আবেদনকৃত। আবেদন নম্বর- ২১৮৮।