বড় ছেলেকে হারিয়ে একমাত্র ছেলে সুহাদ হোসেন খান(৩৫)কে নিয়ে বাচার স্বপ্ন দেখেছিলেন বিধবা মা। ছেলে মস্ত বড় হাউজিং ইলেকট্রিক ঠিকাদার। স্ত্রী,সন্তান নিয়ে থাকেন ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় ফ্ল্যাট বাসায়। অন্ধ ও পঙ্গু গর্ভধারিনী বৃদ্ধা মা মোরশেদা খানম পিংকুলের(৬০) খোজ নেয় না ৮ বছর। রাক্ষুসী যমুনায় বাড়িঘর হারিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চৌহালী উপজেলার ঘোরজান ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের চর জাজুরিয়া গ্রামের মৃত মুনা খানের বাড়ির আঙ্গিনায় খোলা আকাশের নিচে পলিথিন টানিয়ে থাকেন। কেউ খেতে দিলে এক বেলা খেতে পান, না দিলে রাত কাটে অনাহারে। এ ভাবেই চলছে তার জীবন। চলতি মাসে শীতের প্রকপ বেড়ে গেলে তার কষ্টও বেড়ে যায়। এতে তিনি চরম অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। ফলে কয়েকদিন আগে এলাকাবাসির দানের টাকায় তাকে ৬টিনের একটি ছাপড়া তুলে দেয়া হয়। সেটার ৩দিকে বেড়া থাকলেও সামনের অংশে বেড়া ও দরজা নেই। ফলে সেখান দিয়ে হু হু করে ঠান্ড বাতাস ঢোকে। তাই পলিথিন দিয়ে বাতাস ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়া চারদিকের বড় বড় ফাঁক দিয়ে হু হু করে ঠান্ডা বাতাস ঢোকায় সেখানে বাস করা দূরুহ হলেও এখানেই খেয়ে না খেয়ে রাতদিন পড়ে থাকেন তিনি। মৃত মুনা খানের অভাবী স্ত্রী লাইলী খানম(৬০) নিজেই দু‘বেলা পেটভোড়ে খেতে পায় না। তারপরেও তিনি এই অসহায় অন্ধ ও পঙ্গু বৃদ্ধা মোরশেদা খানমের দেখভাল করেন। তার দিনমজুর ছেলের সংসারে ৫ সদস্য। তাদেরই ঠিকমত দিনপাত চলে না। তার উপরে এই অন্ধ ও পঙ্গু বৃদ্ধার বোঝা তার কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
এ বিষয়ে হতদরিদ্র লাইলী খানম,রেহানা বানু ও মাসুদ খান বলেন,টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার মামুননগর ইউনিয়নের বলরামপুর গ্রামের আওলাদ হোসেনের সাথে চৌহালীর খান পরিবারের মোরশেদা খানম পিংকুলের বিয়ে হয়। এক সময়ের খরস্রােতা যমুনার শাখা নদীর ভাঙ্গণে বাড়িঘর জমিজমা বিলিন হয়ে গেলে চৌহালী উপজেলার ঘোরজান ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের চর জাজুরিয়া গ্রামের এক আত্নীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এরপর স্বামী ও বড় ছেলের মৃত্যুতে তিনি খুবই অসহায় হয়ে পড়েন। নিজে খেয়ে না খেয়ে ও আনসার ভিডিপির চাকরি ও বিভিন্ন এনজিওর কাজ করে ছোট ছেলে সুহাদ হোসেন খানকে মানুষ করেন। সে লেখাপড়া তেমন না করে ২৫ বছর বয়সে কাজের সন্ধানে ঢাকায় পাড়ি জমান। সেখানে হাউজিং কোম্পনিতে ইলেকট্রিক কাজ করে তিনি বেশ টাকা পয়সার মালিক হন। এরপর নিজেই হাউজিং ইলেকট্রিক ঠিকাদারের কাজ করেন। বিয়ে করে এখন ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় ফ্ল্যাট বাসায় স্ত্রী,১ ছেলে ও ১ মেয়ে নিয়ে থাকেন। কিন্তু দীর্ঘ ৮ বছর ধরে মায়ের কোন খোজ ও ভরন-পোষণ করেন না। তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন কাজ হয়নি। তিনি কোন পরিচয় ও বাসার ঠিকানা দেন না। ফলে স্বামী সন্তানের শোকে কাঁদতে কাঁদতে তিনি অন্ধ ও অসুস্থ্য হয়ে গেছেন। টাকার অভাবে চিকিৎসা না করতে পেরে তার দুই পা পঙ্গু হয়ে গেছে। তিনি আর হাটতে ও দাড়াতে পারেন না। সারাক্ষণ বিছানায় শুয়ে তার দিন কাটে। তার সেবা যত্ন করার মত কেউ নেই। ফলে অযত্ন,অবহেলা আর বিনা চিকিৎসায় দিন দিন তিনি মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ছেন।
এ বিষয়ে খাসকাউলিয়া গ্রামের বাসিন্দা চৌহালী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি হযরত আলী মাস্টার বলেন,আমি একটানা ২৭ বছর ও পরে ৩ বছর ভারপ্রাপ্ত মোট ৩০ বছর চৌহালী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলাম। সে সময়ে সহযোদ্ধা চৌহালী উপজেলার ঘোরজান ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী ছিলেন মোরশেদা খানম পিংকুল। তিনি ১৯৯২ সাল থেকে টানা ১০ বছর এ পদে দায়ীত্ব পালন করেন। পাশাপাশি তিনি চৌহালী উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগেরও নেত্রীত্বে ছিলেন। আওয়ামীলীগের দূর্দিনের কান্ডারী মোরশেদা খানম পিংকুল আওয়ামীলীগের সকল আন্দোলন সংগ্রামের সম্মুখ সারির সহযোদ্ধা ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন চৌহালী উপজেলা আনসার ও ভিডিপির দলপতি ছিলেন। শত শত অসহায় অনাহারী নারীদের তিনি সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। তাদের মুখে আহার তুলে দিতে তিনি অফিসে অফিসে ঘুরে বিধাব ভাতা কার্ড,বয়স্ক ভাতার কার্ড,স্বামী পরিত্যাক্তা ভাতার কার্ড,ভিজিডি ও ভিজিপি কার্ড করে দিয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি রিলিফ ও ত্রাণ পাইয়ে দিয়েছেন বহু অসহায় মানুষকে। গর্ভবতী মা ও দূস্থ রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। আজ তার এ অসহায় অবস্থায় তার বিত্তবান একমাত্র ছেলে তার পাশে নেই। সে প্রায় ৮ বছর ধওে তার মায়ের কোন খোজ খবর নেয় না। এখন তার জীবন জীবিকা চালে অন্যের দয়ায়। এটা খুবই কষ্টদায়ক,দুঃখজনক ও বেদনা দায়ক বিষয়। আমি এই অসহায় সমাজসেবী বৃদ্ধা মহিলার পাশে এসে দাড়াতে দেশের ধর্ণাঢ্য ও বিত্তবানদের প্রতি বিনিত অনুরোধ করছি।
এ বিষয়ে চৌহালী আওয়ামীলীগের সভাপতি তাজ উদ্দিন বলেন,বিষয়টি আমার জানা নাই। আমি খোজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) আনিছুর রহমান বলেন,ওনার পক্ষ থেকে নিকট আত্নীয়দের কেউ আবেদন করলে ঘরের জন্য টিন ও বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।
#চলনবিলের আলো / আপন