শুক্রবার , ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহি হারিকেন

প্রকাশিত হয়েছে- শুক্রবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২১
ছবি:- হারিকেন হাতে উপজেলার অষ্টমনিষার বাসিন্দা অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী নারায়ন চন্দ্র পাল।

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহি হারিকের স্থান (জায়গা) দখল করে নিয়েছে বিদ্যুৎ ও সোলার লাইট। কালের স্রোতে হারিয়ে যেতে বসেছে এক সময়ের আদরের লালিত হারিকেন। গ্রাম বাংলার ছাত্র-ছাত্রীসহ সকল পরিবারের মাঝেই ছিল হারিকেন, সেই আলোকিত বাতি এখন বিলুপ্তির পথে। সন্ধ্যার পর হতেই রাতের অন্ধকার দূর করতে একটা সময় দেশের প্রতিটি গ্রামের মানুষের অন্যতম ভরসা ছিল হারিকেন, দোয়াত ও কুপি বাতি। ৯০ দশকের পূর্বে ও কিছুকাল পর দেশে বিদেশি চাকরিসহ নানা পেশায় উচ্চপর্যায়ে কর্মরত থাকাদের মধ্যে অনেকেই পড়ালেখা করেছেন এই হারিকেনের মৃদু আলোয়। গৃহস্থালি এবং ব্যবসার কাজেও হারিকেনের ছিল ব্যাপক চাহিদা। বিয়ে জন্মদিন বা পারিবারিক কোন অনুষ্ঠানে লোকের সমাগম হলে ব্যবহার হতো হ্যাজাক, পাশাপাশি জমা রাখা হতো এই হারিকেন। যুগের পরিবর্তনের পাশাপাশি হারিকেনের স্থান দখল করেছে নানা ধরনের বৈদ্যুতিক, রিচার্জার বাতি। বৈদ্যুতিক ও চায়না বাতির কারণে গ্রাম ও শহরে হারিকেনের ব্যবহার বন্ধ হয়েছে। সেই আলোর প্রদীপ হারিকেন এখন গ্রাম থেকেও প্রায় বিলুপ্ত হচ্ছে।

হারিকেন জ্বালিয়েই বাড়ির উঠানে বা বারান্দায় পড়াশোনা করত শিক্ষার্থীরা। রাতের বেলায় পথ চলার জন্য ব্যবহার করা হত হারিকেন। হারিকেনের জ্বালানি হিসেবে কেরোসিন তৈল(ডিজেল)আনার জন্য প্রায় বাড়িতেই থাকত কাচের বিশেষ ধরনের বোতল। সেই বোতলে রশি লাগিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হতো বাড়ির নিদিষ্ট স্থানে। গ্রাম গঞ্জের হাটের দিনে সেই রশিতে ঝোলানো বোতল হাতে নিয়ে যেতে হতো হাট-বাজারে। এ দৃশ্য বেশি দিন আগের নয়। পল্লী বিদ্যুতায়নের যুগে এখন আর এমন দৃশ্য চোখে পড়ে না। বাংলার গ্রামীণ ঐতিহ্য দোয়াত, কুপি ও হারিকেন এখন শুধুই স্মৃতি হিসেবে অনেকের বাড়িতেই দেখা যাচ্ছে। তবে অনাদর আর অবহেলার পাত্র হিসেবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগের লোগোটি এখনএ হাতে হারিকেন ও বস্তাবন্দি চিঠিসহ লাঠি নিয়ে ছুটে চলে তার কর্ম পালনে। নিত্য নতুন প্রযুক্তি মানুষকে উন্নত করছে তাই হারিকেন ছেড়ে মানুষ এখন সৌর বিদ্যুৎ সহ বিদ্যুতের দিকে ঝুঁকছে। তাপবিদ্যুৎ, জলবিদ্যুত, সৌরবিদ্যুৎসহ জ্বালানি খাতে ব্যাপক উন্নয়নে ঐতিহ্যবাহী হারিকেন বিলুপ্তির পথে। বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার , যেমন চার্জলাইট, সৌরবিদ্যুৎসহ বেশ কিছু আলোর জোগান থাকায় এখন আর কেউ-ই ঝুঁকছেন না হারিকেন, দোয়াত, কুপি বাতি বা হ্যাজাকের দিকে। দেশের নতুন প্রজন্ম হয়তো জানবেও না হারিকেন কী ও হারিকেনের ইতিহাস!

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার অষ্টমনিষার বাসিন্দা অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী নারায়ন চন্দ্র পাল (নারু পাল) জানান, আমাদের বাড়িতে দেশ স্বাধীনের পূর্ব হতেই কেরোসিনের বাতি এবং পরবর্তীতে হারিকেন ব্যবহার করা হতো। দিনদিন প্রযুক্তির উন্নতি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য এখন আর উক্ত সরঞ্জাম গুলোর ব্যবহার না করলেও স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছি। কালের বিবর্তনের সাথে সাথে সবকিছুই পরিবর্তন ঘটেছে।

উপজেলার বিভিন্ন বাজারের একাদিক ব্যবসায়ীরা জানান, আমরা র্দীর্ঘ দিন যাবৎ বাবসা করছি সেই ১৯৯০-৯৫ সালের কথা দোকানে হারিকেন, কুপি, হেজাক, দোয়াত বাতি বিক্রি করতাম। আজ ৩৫/৪০ বছর পর এসে দেখি হারিকেন, কুপি বেচা কেনা নেই। অনেকেই বলেন বাংলার ঐতিহ্য ও অতীতের চিতি হারিকেন কালের স্বাক্ষী তা স্মৃতি চারণ করে রাখা দরকার। কালের পরিবর্তনে দেশ এগিয়ে চলছে তাই অতীতের চিত্র হারিকেন হারিয়ে যাচ্ছে। বাপ দাদার আমলের স্মৃতি হারিকেনের আলোতে আলোকিত হয়েছি পড়াশোনা করে, সেই আলোর হারিকেন ও কুপী বাতি আজ বিলুপ্তির পথে, অতীতের স্মৃতি হারিকেন নতুন প্রজন্মের জন্য ধরে রাখতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

অষ্টমনিষা হাসিনা-মোমিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেক বলেন, হারিকেন আমাদের পরম বন্ধু ছিল, হারিকেন জ্বালিয়ে আমরা লেখাপড়া করেছি। এখনকার ছাত্রছাত্রীদের কাছে হারিকেন এর কথা কাল্পনিক মনে হবে। ঘরে বিদ্যুৎ, সোলার থাকায় আজ হারিকেন এর কোন প্রয়োজন বা কদর নেই, তবে ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য হারিকেন এর বিষয়ে ইতিহাসে স্থান দেওয়া উচিত।

ভাঙ্গুড়া পৌর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও পৌর মেয়র গোলাম হাসনাইন রাসেল বলেন, হারিকেন এর ঐতিহ্য বাংলার মানুষের অন্তরে মিশে আছে এবং থাকবে। সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ এর ব্যবস্থা করেছে। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে হারিকেন ধরে রাখার কোন ব্যবস্থা নেই, এই হারিকেন এর ঐতিহ্য যুগের পর যুগ ধরে রাখার জন্য জাতীয় যাদুঘরে রাখার ব্যবস্থা করতে পারেন সরকার।

 

 

#চলনবিলের আলো / আপন

উপদেষ্ঠা সম্পাদক মোঃ গোলাম হাসনাইন রাসেল-০১৭১১-৪১৭৮৮০, সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

২০২৪ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ