পাবনার ভাঙ্গুড়ায় শ্বশুর কর্তৃক পুত্রবধুকে (১৯) ধর্ষনের ঘটনার সালিশে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায় আপোষ মিমাংসা করার অভিযোগ উঠেছে ভাঙ্গুড়া সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক টুকুন ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সুমন আহম্মেদের বিরুদ্ধে। এই সময় উপস্থিত ছিলেন অভিযুক্ত শ্বশুরের পক্ষে মন্ডতোষ গ্রামের মহুরী শের মাহমুদ, আবু বক্কর, সাবেক ইউপি সদস্য সামাদ আলী ও ইদ্রিস মিয়া। ধর্ষনের অভিযুক্ত শ্বশুর আবুল কালাম উপজেলার মন্ডতোষ গ্রামের মৃত বাহাদুর আলীর ছেলে। ধর্ষনের শিকার ঐ গৃহবধু উপজেলার নৌবাড়িয়া জনৈক ব্যক্তির মেয়ে।
ধর্ষনের শিকার ঐ গৃহবধু ও তার নানার সাথে কথা বলে জানা যায়, গৃহবধু খুব ছোট ছিল এসময় তার মায়ের সাথে বাবার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এর পরে ভাঙ্গুড়া সদর ইউনিয়নের কলকতি নানার বাড়িতে অবহেলায় বেড়ে ওঠে সে । প্রায় ৮ মাস আগে নানা উপজেলার মন্ডতোষ গ্রামের আবুল কালামের ছেলে ফিরোজ আহমেদের (৩২) সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পরে ঐ নারী জানতে পারে তার স্বামী আগের স্ত্রীর সাথে মোবাইল ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ করে। বিষয়টি নিয়ে স্বামীর সাথে তার ঝগড়া চলছিলো। এর কিছুদিন পর ফিরোজ কাজের জন্য ঢাকায় চলে যায়। এরপর থেকেই লম্পট শ্বশুর তাকে বিভিন্ন ভাবে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো। স্বামী না থাকায় সে নিজ ঘরে একাই থাকতো। এ সুযোগে গত মাসের মাঝামাঝি রাত আনুমানিক বারোটার দিকে তার শ্বশুর তাকে ডাকাডাকি করলে সে দরজা খুলে দেয়। এরপর তার শ্বশুর কালাম ঘরে ডুকে ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দেয়। এরপর সে নিজ পুত্রবধুকে জোরপূর্বক ধর্ষন করে। এ সময় গৃহবধু চিৎকার দিলে কালাম তার মুখ চেপে ধরে। গৃহবধুর ভাষ্যমতে ঘটনার দিন বাহিরে ঝড়ো আবহাওয়া থাকায় তার চিৎকার কেউ শুনতে পায় নাই। ধর্ষণ শেষে কালাম বাইরে আসলে ঐ নারী কান্না করতে থাকলে তার শ্বাশুরী ফিরোজা বেগম স্বামীর পক্ষ থেকে তার পা ধরে ক্ষমা চায় ও এই ঘটনা কাউকে জানাতে নিষেধ করে। এ সময় কালাম ফিরে এসে তাকে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখায়। ঘটনার তিন দিন পর তার শ্বাশুরী কথিত এক কবিরাজকে বাড়িতে এনে ধর্ষণের শিকার ঐ পুত্রবধুকে ঔষধ খাওয়ায়। এরপর তার শ্বাশুরী তাকে উপজেলার বড়ালব্রীজ রেল স্টেশনে এক অপরিচিত যুবকের কাছে ট্রেনের টিকিট সহ রেখে আসে। ঐ নারী কিছুটা সুস্থ হলে স্টেশনে কান্নাকাটি করতে থাকে। আসে পাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্টেশনের পাশে তার এক দুর-সম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে আসে। সেখান থেকে সে নানা বাড়িতে ফিরে গিয়ে ঘটনার বিস্তারিত পরিবারের লোকেদের জানায়। পরে সে তার শ্বাশুরীকে ফোন দিয়ে ঘটনা কাউকে জানায়নি বলে তাকে নানা বাড়িতে আসতে বলে এবং পরিবারের পরামর্শে তার ও শ্বাশুরীর কথোপকথন রেকর্ড রাখে। তার কথায় আস্বস্ত হয়ে তার শ্বাশুরী ফিরোজা ঐ গৃহবধুর নানার বাড়িতে আসলে তাকে ঘরে আটকে রাখে। অবস্থা বেগোতিক দেখে ফিরোজা তার ভাই সাবেদুল ইসলামকে ঘটনা জানিয়ে তাদের উদ্ধার করতে বলে। সাবেদুল তখন মন্ডতোষ গ্রামের প্রভাবশালী শের-মাহমুদ, বক্কার, সাবেক ইউপি সদস্য সামাদ ও ইদ্রিস সহ বেশ কিছু লোকজন নিয়ে ঐ নারীর নানার বাড়িতে উপস্থিত হয়। সেখানে একটি সালিশ বৈঠকে কালামকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। বিষয়টি জানতে পেরে ভাঙ্গুড়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেখানে উপস্থিত হয়। চেয়ারম্যান ধর্ষনের শিকার ঐ কিশোরীর কাছ থেকে ঘটনা শুনে মন্ডতোষ গ্রামের প্রধানদের কালামকে সালিশে হাজির করতে চাপ দিলে কালাম সেখানে উপস্থিত হয়। ঘটনা শুনে গ্রামবাসী উত্তেজিত হয়ে উঠলে সুযোগ বুঝে কালাম সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে প্রভাবশালী শের মাহমুদ চেয়ারম্যান টুকুনের কাছে জরিমানা টাকা দেয়ার কথা দিয়ে শালিস শেষ করে চলে যায়।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ভাঙ্গুড়া সদর ইউনিয়নের চেয়রম্যান গোলাম ফারুক টুকুন বলেন, ঐ ঘটনা শেষ করে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে আর কিছু বলার নেই।
পলাতক কালামেল সাথে মুঠোফনে কথা বলে জানাযায়, প্রথমে শালিসে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে আমার সামর্থ না থাকায় সুমনের (উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি) কাছে জানাই সে নেতাদের সাথে কথা বলে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা করেছে যার মধ্যে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা সুমনের কাছে দিয়েছি। বাকি ত্রিশ হাজার টাকা বাড়ি বিক্রি করে দেবো। তবে এ বিষয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সুমন কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন।
ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মু. ফয়সাল বিন আহসান বলেন এ বিষয়ে আমার জানা নেই, তবে লিখিত অভিযোগ পেলে আইন গত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
#চলনবিলের আলো / আপন