সোমবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল || ৩০শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

আটঘরিয়ায় হাতে হাসুয়া বাটাল কোমরে দড়ি বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ চাঁচা-ছোলা নলি বসানোর কাজ ব্যস্ত গাছিরা

প্রকাশিত হয়েছে- শনিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২১

শিশির ভেজা ঘাস ও কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীত আসছে। আগমনী বার্তা পেয়ে খেজুর গাছ প্রস্তুতে কাজ শুরু করে দিয়েছেন আটঘরিয়া উপজেলা গাছিরা। কারণ খেজুরের রস ও পিঠা না হলে শীত জমে না। শীতের আবহে সবকিছুই যেন বদলাতে শুরু করেছে। হাতে হাসুয়া, বাটাল, নিয়ে ও কোমরে দড়ি বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ চাঁচা-ছোলা ও নলি বসানোর কাজ করছেন গাছিরা। কয়েকদিন পরেই গাছে বাঁধানো হবে ভাড়। এরপর চলবে রস সংগ্রহের কাজ। সেই রস থেকেই খেজুরের গুড় পাটালি তৈরির দৃশ্যও চোখে পড়বে।

গাছি গোলাম গোলাস হোসেন বলেন, শীত আসার আগে এই সময় থেকে গাছ পরিচর্যা ও কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করি। এরপর গাছ থেকে রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির কাজ শুরু হবে। গাছি বজলুর রহমান বলেন, প্রতিদিন আমরা ২০ থেকে ২৫ টি গাছ প্রস্তুত করি। একটি গাছ থেকে এক ভাড় রসে এক কেজি গুড় তৈরি হয়। ১০-১২ ভাড় রস পেলেই ১০ কেজি গুড় উৎপাদন করা যায়। এতে হাজার খানেক টাকা আয় হয়।

উপজেলার একদন্ত ইউনিয়নের কৃষক আলী আজগার বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস ও গুড় আজ বিলুপ্তির পথে। আগের মতো খেজুর গাছ আর নেই। প্রতিদিন ইট ভাটায় জ্বালানির কাজে নিধন হচ্ছে এলাকার শত শত খেজুর গাছ। ইতিমধ্যেই শহরের লোকজন গ্রামের গাছিদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছেন। কেউ কেউ গাছিদের কাছে অগ্রিম টাকা তুলে দিচ্ছেন ভালো রস, গুড় ও পাটালি পাওয়ার আশায়। অগ্রিম টাকা পেয়ে অনেক গাছি রস সংগ্রের উপকরণ কিনছেন।

তবে খোজ নিয়ে জানা গেছে, আগাম রস সংগ্রহ করতে উপজেলার গ্রামীণ জনপদের সর্বত্রই খেজুরগাছ ঝোড়া শুরু হয়েছে। গাছিরা আগে ভাগে রস সংগ্রহের উপযোগী করে গড়ে তুলছেন গাছ। আর কয়েকদিন পর থেকেই গ্রামবাংলায় শুরু হবে এক উৎসব মুখর পরিবেশ। চারদিকে খেজুরের রসে তৈরি হবে লোভনীয় নলেন গুড় ও পাটালি। রস জ্বালিয়ে ভেজানো পিঠা ও পায়েস খাওয়ার ধুম পড়বে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। দানা, ঝোলা ও নলেন ¯^াদ ও ঘ্রাণে গ্রাম বাংলার রসনা তৃপ্তিতে খেজুরের গুড়-পাটালির কোনো বিকল্প নেই।

একসময়ে আটঘরিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে খেজুরের রস, গুড় ও পাটালি উৎপাদনে প্রসিদ্ধ ছিল। অতীতে এখানকার খেজুর রসের যে যশ ছিল, দিনে দিনে এখন তা হারাতে বসেছে। সম্ভাবনাময় এ খাতে সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় বর্তমান আর আগের মতো রস, গুড় উৎপাদন কম হচ্ছে না। সুঘ্রাণ নলেন গুড় উপজেলার নির্দিষ্ট কয়েকটি গ্রাম ছাড়া পাওয়া যায় না। তা আবার চাহিদার তুলনায় অত্যন্ত কম। তারপরও যে রস ,গুড় ও পাটালি তৈরি হয়, তা দিয়ে শীত মৌসুমে রীতিমতো কাড়াকাড়ি শুরু হয়।

আটঘরিয়া পৌরসভার মকবুল প্রামানিকের বাড়ীতে আসা গাছি আব্দুল কাদের বলেন, এ বছর একটু আগে ভাগেই গাছ ঝোড়া বা কাটা শুরু করেছি। কয়েক দিনের মধ্যেই রস সংগ্রহের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। একই গ্রামের গাছি রহিম শেখ বলেন, ভাটার কারণে অনেক খেজুরগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এখন তেমন বেশি গাছ না থাকায় অনেকে খেজুর রস সংগ্রহে তেমন আগ্রহ দেখান না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সজীব আল মারুফ জানান, খেজুরের গাছ ঝোড়া হয় রসের জন্য। খেজুরের রস থেকে গাছিরা পাটালী তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে। এটা একটা লাভজনক ব্যবসা। পাবনা-লালপুর ও আটঘরিয়ায় খেজুরের রস একটি ঐতিহ্য আছে। তাই এটি ধরে রাখতে বেশি করে খেজুরগাছ রোপণে আমরা চাষিদের উদ্বুদ্ধ করছি। এখানকার কৃষকরা ভেজাল গুড় উৎপাদন করে না। গুড়ে ভেজাল মেশানোর অপকারিতাও কৃষকদের মধ্যে অবহিত করা হয়। এ ছাড়া প্রতিবছর শীতের ছয় মাস প্রায় কয়েক হাজার পরিবার গুড় উৎপাদনের উপার্জন দিয়ে জীবনযাপন করে।

 

 

#চলনবিলের আলো / আপন

সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ©2017-2025 (এটি গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ) অনলাইন নিবন্ধন আবেদনকৃত। আবেদন নম্বর- ২১৮৮।