বান্দরবানের লামায় এতিমের ভুয়া তালিকা দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে “রুপসী পাড়া ইসলামিয়া এতিমখানা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ” কেন্দ্রের এতিমখানাটিতে। দীর্ঘ বছর যাবত একইভাবে বরাদ্দে অর্থ আত্মসাৎ করা হলেও নিয়মিত ওই ভুয়া তালিকায় কমিটি বরাদ্দের সুপারিশ করে আসছে।
উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, লামা উপজেলায় সমাজসেবার নিবন্ধনকৃত এই এতিমখানাটি আছে। সমাজসেবার নিয়মানুযায়ী নিয়মিত উপস্থিত এতিম শিশুদের মধ্যে অর্ধেক শিক্ষার্থী বা ১৮ জন শিক্ষার্থী প্রতি ছয় মাস পরপর ২ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা করে বছরে মোট ৪ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা বরাদ্দ পায়।
২০১৯-২০ অর্থবছরে সমাজসেবার আওতায় ওই এতিমখানার ১৮ জন এতিম শিশুর নামে দুই দফায় ৪ লক্ষ ৩২ হাজার ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট বা টাকা বরাদ্দ আসে।
জানা যায়, সমাজসেবা অধিদফতরের নিয়মানুযায়ী যেসব শর্তে বরাদ্দ আসে তার বেশিভাগ নেই ঐ এতিমখানাতে। তারপরও বিভিন্ন তদবিরে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে এতিমখানায়।
অভিযোগ রয়েছে, বছরের পর বছর নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে এতিমখানার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, সম্পাদক ও সদস্যরা এতিমের বরাদ্দের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ফলে প্রকৃত এতিমরা সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আরও “কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র” টি নামে কাগজে থাকলেও বাস্তবে কোন কার্যক্রম নেই।
অভিযোগ উঠেছে, করোনাভাইরাসের শুরু থেকেই এতিমখানাগুলোতে কোনো এতিম শিশু থাকছে না। তারপরও ভুয়া উপস্থিতি দেখিয়ে ওই বরাদ্দের টাকা ম্যানেজিং কমিটি আত্মসাৎ করছে।
সরেজমিনে ও রুপসী পাড়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বর্ণিত কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ গোলজার হোসেন ও মোঃ মুজিবুর রহমান জানান, “রুপসী পাড়া ইসলামিয়া এতিমখানা” ইউনিয়নের রুপসী পাড়া বাজারস্থ এতিম খানায় মূলত ৬/৭ জন ছাত্র হলে বর্ণিত কমিটির সদস্যরা ভূয়া জাল জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র সৃষ্টি করে ১৮ জন এতিমের ভাতা বাবৎ বছরে ৪ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা সমাজসেবা দপ্তর হতে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে। দুই তিন জন প্রবাসীর স্বচ্ছ পরিবারের সন্তানের নামও তালিকায় রয়েছে।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, উক্ত এতিমখানায় স্থানীয় দানশীল ব্যক্তি ও আলীকদম জোন থেকে এতিমের জন্য বরাদ্দকৃত ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা অভিযুক্তরা আত্মসাৎ করে। উক্ত প্রতিষ্ঠানে এতিমের জন্য ভূয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে ৭ (সাত) লক্ষ টাকা বার্ষিক খরচ দেখাচ্ছে। যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।
করোনাকালীন বন্ধ এতিমখানায় বরাদ্দ ও ভুয়া এতিমের তালিকার বিষয় জানতে চাইলে এতিমখানার সম্পাদক ও পরিচালক আবু জাফর মৌখিকভাবে জানান, আমাদের বছরে অনেক খরচ রয়েছে। করোনার সময় সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য এতিম শিশুদের তার নিকটাত্মীয় অথবা সমাজের কেউ নিজ ইচ্ছায় দায়িত্ব নিলে তার কাছে রাখতে বলা হয়েছে। এখন প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে।
জানতে চাইলে লামা উপজেলা সমাজসেবা অফিসার (অঃদা) তানভীর হাসান জানান, অভিযোগের বিষয়ে আমি অবহেলিত হয়েছি। একটি ট্রেনিং এ রয়েছি। সেক্ষেত্রে ইউএনও স্যারের সাথে আলোচনা করে সঠিক তদন্ত করা হবে।
লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ রেজা রশিদ প্রতিবেদককে বলেন, এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সেক্ষেত্রে তদন্ত করা হচ্ছে।
#চলনবিলের আলো / আপন