সোমবার , ২৪শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - হেমন্তকাল || ৩রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

আগৈলঝাড়ায় বিপন্ন প্রজাতির চিত্রা হরিণের মাংস বিক্রি ও চামড়া পাচার এনজিও পরিচালক জেমস মৃদুল হালদারকে ২মাসের জেল ও ৫০ হাজার টাকা জরিমান ভ্রাম্যমান আদালতে লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশ দুদককে খতিয়ে দেখতে পরিবার সদস্যদের আহ্বান রুবিনা আজাদ, আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল

প্রকাশিত হয়েছে- বুধবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

বরিশালের আগৈলঝাড়ায় বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের আধারে অবৈধভাবে বিপন্ন প্রজাতির চিত্রা হরিণ হত্যার পরে পাচারের সময় একটি এনজিও থেকে ৬টি হরিণের চামড়া উদ্ধার ও ৩৭কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় এনজিও আলোশিখার পরিচালক জেমস মৃদুল হালদার ও তার তিনজন কর্মচারীসহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গ্রেফতারকৃতদের বুধবার দুপুরে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে বিচার সম্পন্ন করে হরিণ পালনের লাইসেন্স বাতিল করতে সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক মো. আবুল হাশেম।

ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক মো. আবুল হাশেম জানান, বুধবার দুপুরে তিনি ঘটনাস্থল এনজিও আলোশিখায় গিয়ে বন সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২এর ৬ এর ১ ও ১০ ধারায় এনজিও পরিচালক ও খামারের মালিক জেমস মৃদুল হালদারকে উপরোল্লিখিত আইন লংঘন করে দোষী সাব্যস্ত করে ২মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করছে। একই আদালত অভিযুক্ত মৃদুল হালদারের কর্মচারী সুনীল চন্দ্র হালদার ও খোকন সরকারকে ৫হাজার টাকা করে জরিমানা করেছে। ওই আদালত অপর কর্মচারী বিপ্লব সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় তাকে বেকসুর খালাস প্রদান করে উদ্ধারকৃত ৬টি হরিণের চামড়া উপজেলা বনায়ন অফিসার মনীন্দ্র নাথ রায়ের জিম্মায় রাখার রায় প্রদান করেছে।
দন্ডিত কর্মচারী সুনীল চন্দ্র হালদার ও খোকন সরকার ৫হাজার টাকা করে ১০ হাজার ও মৃদুল হালদার ৫০হাজার টাকা আদালতে জমা প্রদান করেছেন বলে জানিয়েছেন ভ্রাম্যমান আদালতের পেশকার মো. সিদ্দিকুর রহমান। ওই দুই কর্মচারী অর্থদন্ড জমা দিয়ে মুক্ত হয়েছেন। পাশাপাশি আদালত উদ্ধারকৃত ৩ কেজি হরিণের মাংস জ¦ালানী দিয়ে পুড়িয়ে বিনস্ট করে তা মাটির গর্তে ঢেকে রাখারও আদেশ দেন।

জীববৈচিত্র্য, বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধানকল্পে প্রণীত আইনে মামলা দায়ের না করে টক অব দ্যা টাউনের ঘটনায় ভ্রাম্যমান আদালতে বিচারের ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাজহারুল ইসলাম জানান, উপজেলার রাজিহার গ্রামের প্রতিষ্ঠিত এনজিও ‘‘আলোশিখা রাজিহার সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র’’র অভ্যন্তরে হরিণের খামার থেকে কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতি ছাড়া গোপনে হরিণ জবাই করে সেই মাংস বিক্রির সময় মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটার দিকে স্থানীয় জনগনের হাতে ধরা পরে ওই খামারের কর্মচারী মো. হায়দার। স্থানীয়রা হরিণের মাংসসহ আটকে করে পুলিশে খবর দেয়া হলে কৌশলে হায়দার পালিয়ে যায় সে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে এনজিওর মালিক মৃদুল হালদারের দেয়া তথ্য মতে ওই এনজিও’র ফ্রিজ থেকে ৩৭ কেজি হরিণের মাংস ও ছাদের স্টোর রুম থেকে ৬টি হরিণের চামড়া উদ্ধার করে পুলিশ।

থানা পুলিশ পরিদর্শক মো. গোলাম ছরোয়ার অভিযানের সত্যতা স্বীকার করে বলেন- এ ঘটনায় রাজিহার গ্রামের মৃত স্যামুয়েল হালদারের ছেলে ও হরিণ খামারের মালিক ওই এনজিও’র নির্বাহী পরিচালক জেমস মৃদুল হালদার (৪৮), তার কর্মচারী একই উপজেলার আহুতি বাটরা গ্রামের রাম চন্দ্র হালদারের ছেল সুনীল চন্দ্র হালদার (৫৫), রাজিহার গ্রামের মৃত চৈতণ্য সরকারের ছেলে খোকন সরকার (৩৮) ও ডাসার থানার নবগ্রামের মৃত অজিত সরকারের ছেলে বিপ্লব সরকারকে (৩৫)কে আটক করা হয়। ঘটনার সাথে জড়িত কর্মচারী হায়দার পুলিশ যাবার আগেই পালিয়ে যায়।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছ, খামারের মালিক জেমস মৃদুল হালদার অন্তত এক যুগ আগে নিজ বাড়িতে হরিণের খামার গড়ে তোলেন। মৃদুল তার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অবৈধভাবে খামার থেকে হরিণ জবাই করে সেই মাংসে অতিথিদের আপ্যায়িত করার অভিযোগ রয়েছে। ওই খামার থেকে ইতোপূর্বেও রাতের আধারে গোপনে বিভিন্ন সময়ে সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে আবার অনেক সময় কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে হরিণের মাংস ও চামড়া বিক্রি করাসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে হরিণ বিক্রি করলেও তা খাতা কলমে বিভিন্ন ব্যক্তিকে দান করা করা হয়েছে দেখিয়ে সরকারের বিপুল পরিমান রাজস্ব ফাকি দিয়ে আসছিল।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, দু বছর আগে ওই খামারে প্রজনন সক্ষমতার ২৮টি হরিণ ছিল। এর মধ্যে খামারের মালিক মৃদুল হালদার বরিশাল জেলা প্রশাসককে ২টি এবং বিভিন্ন জনকে ৬টি হরিণ দানকরাসহ মোট ৮টি হরিণ কাগজে কলমে দান করা দেখিয়েছেন। ওই দানের পরেও প্রজনন ক্ষমতা সম্পন্ন ২০টি হরিণ থেকে কতটি হরিণ সাবক জন্ম হয়েছে এবং বর্তমানে কতটি বাচ্চা খামারে রয়েছে অজ্ঞাত কারনে তার কোন হিসাব মিলিয়ে দেখেন নি ভ্রাম্যমান আদালত বা উপজেলা বনায়ন কর্মকর্তা।

এদিকে দন্ড প্রাপ্ত এনজিও পরিচালক জেমস মৃদুল হালদারের বিরুদ্ধে এনজিওর নামে দাতা দেশগুলোর অর্থ আত্মসাৎ, নিজস্ব লোকজনের মাধ্যমে এনজিও পরিচালনা পর্ষদ গঠন, অর্থ পাচার ও মা, ভাই-বোনদের সাথে জমি ও অর্থ নিয়ে প্রতারণা ও স্বাক্ষর জাঁলিয়াতির বিস্তর অভিযোগ সামনে এসেছে। মৃদুলের প্রতারনার অভিযোগে মৃদুলের মা ও ভাই বোনেরা ইতোমধ্যেই আদালতের শরনাপন্ন হয়েছে। জেমস মৃদুলের নেতিবাচক কর্মকান্ড দুদকের অনুসন্ধানের দাবিও করেছেন তার পরিবার সমস্যরা।

থানা অফিসার ইন চার্জ মো. গোলাম ছরোয়ার জানান, ভ্রাম্যমান আদালতে দন্ডিত জেমস মৃদুল হালদারকে বুধবার বিকেলে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

 

 

#চলনবিলের আলো / আপন

সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ©2017-2025 (এটি গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ) অনলাইন নিবন্ধন আবেদনকৃত। আবেদন নম্বর- ২১৮৮।