সোমবার , ২৪শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - হেমন্তকাল || ৩রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ব্যবসায়ি লেলিন ভূঁইয়ার অনিয়মের সাতকাহন

প্রকাশিত হয়েছে- বুধবার, ৪ আগস্ট, ২০২১

খুলনার ফুলতলা উপজেলার পয়গ্রাম কসবা মৌজায় সরকারি খাস জমি থেকে গাছপালা কর্তন সহ মাটি কেটে নিয়ে ইটের ভাটায় নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে দামোদার গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের পূত্র ব্যবসায়ি লুৎফর রহমান ওরফে লেলিন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে। এ বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষ জেনেও অনেকটা নিরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন বলে স্থানীয় সূত্রে প্রকাশ।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানযায়, ফুলতলার পয়গ্রাম কসবা এলাকায় প্রবেশ করলে দেখাযায় চারিদিকে শুধু লেলিন ভূঁইয়ার জমির সাইনবোর্ড। তবে কিছু সরকারি খাস জমিও তাঁর দখলে রয়েছে। সেই সকল খাসজমি থেকে ফলজ ও বনজ গাছপালাসহ মোটা মোটা ডাল পালা কেটে নিয়ে বৃক্ষ উজাড় অভিযানে নেমেছেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, দখলকৃত খাসজমি থেকে মাটি কেটে ইটের ভাটায় ইট তৈরিতে ব্যবহার করে আসছেন। এধরনের কর্মকান্ডে স্থানীয়রা কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে জানিয়ে কোন সুফল পাননি।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, পয়গ্রাম কসবার মৃত ছাদেক শেখের পূত্র শেখ লুৎফর রহমান তাঁর রেকর্ডীয় ২৭ শতক ভূ-সম্পত্তি, যার খতিয়ান নং-৩২৭, আর.এস দাগ নং ৮৪২ দীর্ঘ ২৭ বছর ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) দিয়ে আসছেন সরকারকে। ওই ২৭ শতক জমির পাশে লেলিন ভূঁইয়ার জমি থাকার কারণে লেলিনের নজর পড়ে। দীর্ঘ দিন পায়তাঁরা করে আসছে জমিটি নামমাত্র দাম দিয়ে ক্রয়ের জন্য। ছাদেক শেখের পূত্র শেখ লূৎফর রহমানের মৃত্যুর পর তাঁর ওয়ারেশগণ লেলিন ভূঁইয়ার কাছে ওই জমি বিক্রি করতে রাজি হয়নি। এদিকে থেমে থাকেনি লেলিন ভূঁইয়ার নীল নকশা।
ভুক্তভোগীরা জানায়, দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর তৎকালীন ফুলতলা তহশীল অফিসের নায়েব গাজী সাকিল আহম্মদ, উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মিজান সহ অন্যান্যদের ম্যানেজ করে সুচতুর লেলিন ভূঁইয়া ৩২৭ নং খতিয়ানের, হাল দাগ ৮৪২ এর ওই ২৭ শতক জমির ইজারা নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। মরহুম শেখ লুৎফর রহমানের রেকর্ডকৃত সম্পত্তি হওয়ার পরেও এবং এই জমি নিয়ে বিজ্ঞ আদালতে মামলা চলমান থাকার মধ্যে দিয়ে কর্তৃপক্ষ লেলিন ভূঁইয়াকে ইজারা দিয়েছেন। ইজারার কাগজ হাতে পেয়ে লেলিন ভূঁইয়া ও তার পোষ্য কিছু ব্যাক্তিরা জমি দখল করেন। এছাড়া ইজারাকৃত জমির থেকে গাছপালা ও ডালপালা কাটতে শুরু করেন। বিষয়টি বর্তমান ফুলতলা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব মো. ইলিয়াজ ঘটনাস্থলে আসলে সকল সত্যতা পান। তবে রহস্যজনক কারণে নায়েব ইলিয়াজকে কর্তৃপক্ষ বৃক্ষকর্তনের বিষয় প্রতিবেদন রিপোর্ট প্রদান করতে কোন নির্দেশনা প্রদান করেনি বলে তথ্য পাওয়া যায়। এখানেই শেষ নয়, লেলিন ভূঁইয়ার অনিয়মের ফিরিস্তি। পয়গ্রাম কসবা মৌজার আর.এস ৮৪৯,৮৫০,৮৫২,৮৫৩, দাগের ক” তফশিলভুক্ত সরকারি খাস জমি থেকে বিপুল পরিমানের মাটি কেটে ট্রাক ভর্তি করে নিজের ইটের ভাটায় নিয়ে গেছেন ব্যবসায়ি লেলিন। যেখানে ভূমি আইনে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে কোন ইজারাকৃত খাস সম্পত্তির গাছপালা কর্তন বা আকৃতির পরিবর্তন করা যাবে না। এসব আইনকে বৃদ্ধাআঙ্গুল দেখিয়ে দেধারছে দিনের পর দিন তাঁর দখলকৃত খাস জমি থেকে বৃক্ষ উজাড় সহ মাটি কেটে নিয়ে আসছেন। বিষয়টি নিয়ে ফুলতলা উপজেলা ভূমি কমিশনার (এসি ল্যান্ড) রুলি বিশ্বাসের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি ফোনে কোন মন্তব্য করেনি। তবে এসি ল্যান্ড সরাসরি কাগজাদি নিয়ে তাঁর কার্যালয়ে দেখা করতে বলেন।

ভুক্তভোগি রেজাউর রহমান রিটু এ প্রতিবেদককে জানান, আমার বাবা শেখ লুৎফর রহমানের মৃত্যুর পর থেকে লেলিন ভূঁইয়া আমাদের ওই ২৭ শতক জমি দখলের জন্য চেষ্টা করেন । বিভিন্ন সময় আমাকে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে। রেজাউর আরো জানান, লেলিন ভূইঁয়া কিভাবে আমাদের রেকর্ডীয় জমির ইজারা নিয়ে আসলো তা আমাদের বোধগম্য নয়। তবে এর পেছনে যাদের হাত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে।

ফুলতলা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাহামুদুর রহমান চয়ন বলেন, ওই জমিটি (২৭শতক, খতিয়ান নং-৩২৭, আর.এস দাগ নং ৮৪২) শেখ লুৎফর রহমানের জমি, হঠাৎ করে লেলিন ভূঁইয়া ইজারা নিয়ে আসছে। মূলত লেলিন ভূইয়ার আশে পাশে জমি রয়েছে। আর এই জমিটি নিতে পারলে বড় ধরনের প্লাটফরম তৈরি হবে। ফলে সিস্টেম করে দখল নেওয়ার পাঁয়তারা করেছে লেলিন ভূঁইয়া।

ফুলতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ আবুল বাশার বলেন, ওই জমি (২৭শতক, খতিয়ান নং-৩২৭, আর.এস দাগ নং ৮৪২) শেখ লুৎফর রহমানের সম্পত্তি। তিনি আরো বলেন, লেলিন ভুঁইয়া ওই জমির দখলে কখনও ছিল না।

ব্যবসায়ি লেলিন ভূঁইয়া এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, আমি সরকারি খাস জমি থেকে কোন গাছপালা কাটেনি বরং কয়েকটি ডালপালা কেটেছি। এছাড়া মাটি কাটার বিষয় বলেন, মাটি যা কাটা হয়েছে তা সম্পূর্ন আমার নিজ নামীয় সম্পত্তি থেকে। শেখ লুৎফর রহমানের জমি দখলের বিষয় বলেন, আমি সরকারের কাছে আবেদন করেছি ইজারা নেওয়ার জন্য, সরকার আমাকে ইজারা দিয়েছে তাই জমি দখলে নিয়েছি।

ব্যাবসায়ি লেলিন ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে জমি দখল সহ আরো নানা অনিয়ম ও অভিযোগের তথ্য উঠে এসেছে গণমাধ্যমকর্মীদের হাতে। এ যেন কেঁচো খুড়তে কেউটের সন্ধান মিলেছে। তাই লেলিন ভুঁইয়ার অনিয়মের হালহকিত এখানেই শেষ হচ্ছে না। আগামী প্রতিবেদনে বিস্তারিত আসছে।

 

 

#চলনবিলের আলো / আপন

সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ©2017-2025 (এটি গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ) অনলাইন নিবন্ধন আবেদনকৃত। আবেদন নম্বর- ২১৮৮।