নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী সুরাজ আলী অভিযোগ করে বলেছেন, নগরীর বিসিক শিল্প এলাকায় অবস্থিত পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত এএসআই ইউসুফ আলী আমার স্ত্রী রেশমা খাতুনের সাথে পরোকীয়া সম্পর্কে গড়ে তুলে তাকে মাদক ব্যবসায় নামিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এএসআই ইউসুফ আমার স্ত্রীকে আমার কাছ থেকে আলাদা করে ফেলেছেন। আমার সংসার ভেঙ্গেছেন। এসময় কান্না জড়িত কণ্ঠে ভুক্তভোগী সুরাজ আলী বলেন, এএসআই ইউসুফ ও আমার স্ত্রী রেশমা খাতুন বিভিন্ন সময়ে আমাকে মাদক ও অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোসহ প্রাণনাশের হুমকি প্রদান অব্যাহত রেখেছেন। এ অবস্থায় আমি এবং আমার ১৩ বছরের সন্তান চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। গতকাল রোববার (১৪ জুন’২০২০) দুপুরে নগরীর একটি কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এতে লিখিত বক্তব্যে সুরাজ আলী বলেন, দ্রুত অভিযুক্ত ইউসুফ ও রেশমার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
প্রশাসনের কাছে আমার ও আমার ছেলের নিরাপত্তা চাই। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সুরাজ আলীর ছেলে ইসমাইল হোসেন সেজান ও সুরাজের বন্ধু জসিম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে সুরাজ আলী বলেন, এএসআই ইউসুফ নির্বিঘেœ পরোকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ও মাদক ব্যবসা অব্যাহত রাখলেও তার বিরুদ্ধে এখনও কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তাই নিরুপায় হয়ে আমি প্রতিকার পেতে এবং অভিযুক্ত এএসআই ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত বৃহস্পতিবার (১১ জুন) মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি। একইসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, রাজশাহী মহানগর (আরএমপি) পুলিশ কমিশনার, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগের অনুলিপি প্রদান করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ও মহাপুলিশ পরিদর্শকের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন রামচন্দ্রপুর (কালুমিস্ত্রির মোড়) এলাকার বাসিন্দা মো: সুরাজ আলী। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। স্ত্রী ও এক পুত্র সন্তান নিয়ে তাদের দাম্পত্য জীবন ও সংসার ভালোই চলছিল। সুরাজের বাসার পাশেই বোসপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি।
এই ফাঁড়ির ইনচার্জ ছিলেন এসআই রতন। বাসা ও ফাঁড়ি কাছাকাছি হওয়ায় সুরাজের সাথে এসআই রতনের সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। সেই সুবাদে সুরাজের বাসার নিচ তলা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন রতন। এরই এক পর্যায়ে এসআই রতনের মাধ্যমে সুরাজের সাথে এএসআই ইউসুফের পরিচয় হয়। এরপর থেকে ইউসুফ মাঝে মধ্যে এসআই রতনের সাথে দেখা করার জন্য তার ভাড়া বাসায় যাতায়াত করতেন। এরই সূত্র ধরে এএসআই ইউসুফ এসআই রতনের মাধ্যমে সুরাজের কাছে প্রস্তাব দেন যে, তার (ইউসুফ) স্ত্রী চিকিৎসার জন্য রাজশাহী আসবেন। কিছুদিন রাজশাহী থাকতে হবে। তাই সুরাজ তার বাসায় অসুস্থ স্ত্রীসহ ইউসুফকে থাকার অনুমতি দিলে উপকার হবে। কথা অনুযায়ী, স্ত্রীকে হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসার জন্য সপ্তাখানেক সুরাজের বাসায় সস্ত্রীক অবস্থান করেন ইউসুফ। তখনই সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে সুরাজের স্ত্রী মোসা: রেশমা খাতুনের সাথে পরোকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেন ইউসুফ। চিকিৎসা শেষে স্ত্রীকে গ্রামের বাড়ি বগুড়ায় পাঠিয়ে দেন ইউসুফ।
আর এরপর থেকে অব্যাহতভাবে রেশমার সাথে চলতে থাকে পরোকীয়া সম্পর্ক। পরোকীয়া সম্পর্কের সুবাদে নানা প্রলোভন দেখিয়ে রেশমাকে দিয়ে মাদক ব্যবসা বিশেষ করে ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রি শুরু করান ইউসুফ। গত ৩ মার্চ রাতে ৭০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েন রেশমা। তাকে ছাড়াতে ইউসুফের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মত। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি। কিছুদিন জেলহাজতে থাকার পর জামিনে ছাড়া পেয়েছেন রেশমা। তবে এখানেই থেমে থাকেননি ইউসুফ। সুরাজ-রেশমার দাম্পত্য জীবনে অশান্তি জিইয়ে রাখতে নতুন নতুন বীজ বপন করেন। তার লক্ষ্য ছিল- এই দম্পতিকে আলাদা করে ফেলবেন। সফলও হয়েছেন তিনি। এই দম্পতি বর্তমানে আলাদাই থাকেন। সম্প্রতি স্বামী তালাকনামা পাঠিয়েছেন; কিন্তু তা এখনও কার্যকর হয়নি। ভুক্তভোগী সুরাজ আলী বলেন, দাম্পত্যজীবন টিকিয়ে রাখতে ও ১৩ বছরের সন্তানের ভবিষ্যত চিন্তা করে উচ্চ আদালত থেকে স্ত্রীকে জামিনে মুক্তি করাই। কিন্তু ২৮ মে জামিনে জেলহাজত থেকে বের হওয়ামাত্রই আমার স্ত্রী রেশমাকে নিয়ে চলে যান ইউসুফ। শেষে বাধ্য হয়ে আমি আমার স্ত্রী রেশমার কাছে তালাকের নোটিশ পাঠিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, ইউসুফ ও রেশমা বিভিন্ন সময়ে আমাকে মাদক ও অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোসহ প্রাণনাশের হুমকি প্রদান অব্যাহত রেখেছেন। এ অবস্থায় আমি এবং আমার সন্তান চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তিনি দ্রুত অভিযুক্ত ইউসুফ ও রেশমার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস এরআগে জানিয়েছিলেন, অভিযোগের কপি হাতে পাওয়ার পরপরই তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।