বৃহস্পতিবার , ৬ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২১শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - হেমন্তকাল || ১৫ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

পাবনা – ৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল আজম আর নেই

প্রকাশিত হয়েছে- রবিবার, ১৪ জুন, ২০২০

নিউজ ডেস্ক:

পাবনা-৩ আসন থেকে (চাটমোহর উপজেলা, ফরিদপুর উপজেলা ও ভাঙ্গুড়া উপজেলা) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষে পঞ্চম জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সদস্য সাইফুল আজম আজ রোববার সকালে ঢাকার মহাখালি ডিএসএইচও’র তার নিজস্ব বাস ভবনে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যু কালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি দীর্ঘদিন নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন। সাইফুল আজম ১৯৪১ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পূর্ব বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ) পাবনা জেলার খগড়বাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[১] উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পর ১৯৫৬ সালে তিনি পশ্চিম পাকিস্তান যান। ১৯৬০ সালে তিনি জিডি পাইলট ব্রাঞ্চের একজন পাইলট হন। ১৯৬৭ সালের ৬ জুন তাকে ইরাকি বিমান বাহিনীতে বদলি করা হয়। বিমানঘাঁটি আক্রমণের সময় তিনি পশ্চিম ইরাকে ছিলেন।

 

ইসরায়েলি পাইলট ক্যাপ্টেন গিডিওন ড্রোর সাইফুল আজমের উইংমেনসহ দুজন ইরাকি যোদ্ধাকে গুলি করতে সক্ষম হন, কিন্তু তিনি গুলি করে তাকে ভূপাতিত সাইফুল আজম একটি ইসরায়েলি বিমান ভূপাতিত করেন এবং আরেকটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইফুল আজম (জন্ম ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ) একজন অবসরপ্রাপ্ত বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা। ১৯৭১ সালের পূর্বে তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল ফখরুল আজম (মেয়াদ ২০০২-২০০৭) তার ভাই । প্রথম কর্মজীবন সাইফুল আজম তার বর্ণাঢ্য জীবনে নিজেই কিংবদন্তীর ইতিহাস তৈরি করেছিলেন। পৃথিবীর বাইশজন “জীবিত ঈগলের” তিনি ছিলেন অন্যতম” সিসেনা টি-৩৭ বিমানের প্রশিক্ষণ ও অ্যারিজোনার লুক এয়ার ফোর্স বেসে এফ-৮৬ সেব্রেসের উপর আরও পড়াশোনার পর ১৯৬৩ সালে তিনি সংক্ষিপ্তকালের জন্য ঢাকায় নিযুক্ত হন। এরপর তিনি করাচির মাউরিপুরে টি-৩৩ এর প্রশিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। এখানে কর্মরত থাকার সময় ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে যুদ্ধের সময় এফ-৮৬ নিয়ে ভারতে উড্ডয়নে অংশ নেন।[১] ভারতীয় বিমান বাহিনীর অফিসার মায়াদেবের বিমানকে তিনি ভূপাতিত করেন।

 

তাকে পাকিস্তানের তৃতীয় সর্বোচ্চ সামরিক পদক সিতারায়ে জুরাত প্রদান করা হয়। ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ২য় স্কোয়াড্রনের কমান্ড লাভ করেন। ১৯৬৬ সালের নভেম্বরে তাকে জর্ডানের বিমান বাহিনীতে ডেপুটেশনে পাঠানো হয়। ডেপুটেশনে পাঠানো দুজন পাকিস্তানি অফিসারের মধ্যে তিনি একজন ছিলেন। অন্যজন ছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট এম. সরোয়ার শাদ। ১৯৬৭ সালে ছয়দিনের যুদ্ধ শুরু হলে তিনি হকার হান্টার নিয়ে জর্ডানের বিমান বাহিনীর পক্ষে উড্ডয়ন করেন। দুই দিনের ব্যপ্তিতে তিনি দুইটি ভিন্ন স্থানে আক্রমণ পরিচালনা করেন। এজন্য তাকে জর্ডানের অর্ডার অব ইসতিকলাল ও ইরাকি সাহসিকতা পদক নুত আল শুজাত প্রদান করা হয়। ১৯৬৭ সালের ৫ জুন ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর হামলা থেকে জর্ডানের মূল বেস মাফরাকের প্রতিরক্ষার জন্য তাকে ডাকা হয়। চারটির মধ্যে একটি বিমান পাকিস্তানিরা উড্ডয়ন করে। সাইফুল আজম একটি ইসরায়েলি বিমান ভূপাতিত করেন এবং আরেকটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ১৯৬৭ সালের ৬ জুন তাকে ইরাকি বিমান বাহিনীতে বদলি করা হয়। বিমানঘাঁটি আক্রমণের সময় তিনি পশ্চিম ইরাকে ছিলেন। ইসরায়েলি পাইলট ক্যাপ্টেন গিডিওন ড্রোর সাইফুল আজমের উইংমেনসহ দুজন ইরাকি যোদ্ধাকে গুলি করতে সক্ষম হন, কিন্তু তিনি গুলি করে তাকে ভূপাতিত করেন। তিনি ক্যাপ্টেন গোলানের বোমারু বিমানকেও ভূপাতিত করেন। তাদের দুজনকেই যুদ্ধবন্দি হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়।

 

পরবর্তী জীবন ১৯৬৯ সালে তিনি পাকিস্তানে ফিরে আসেন এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত সময় ফ্লাইট কমান্ডার হিসেবে বিভিন্ন স্থানে কর্মরত ছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে ডিরেক্টর অব ফ্লাইট সেফটি ও ডিরেক্টর অব অপারেশন্স হিসেবে যোগ দেন। এরপর তিনি ঢাকা বিমানঘাঁটির কমান্ড লাভ করেন এবং ১৯৭৭ সালে গ্রুপ ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি পান। ১৯৭৯ সালে তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনী থেকে গ্রুপ ক্যাপ্টেন হিসেবে অবসর নেন। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে তিনি সরকারি দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখেন। তিনি নিম্নোক্ত পদে আসীন ছিলেন: চেয়ারম্যান, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি (সিএএ), দুইবার ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (এফডিসি) পাবনা-৩ আসন থেকে (চাটমোহর উপজেলা, ফরিদপুর উপজেলা ও ভাঙ্গুরা উপজেলা) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষে পঞ্চম জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,রাস্তা,ব্রিজ-কার্লভাট,কৃষি খাত,স্বাস্থ্য,যোগাযোগ ও বিভিন্ন দপ্তরের ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেন। তিনি ব্যক্তি জীবনে সৎ,কর্তব্যনিষ্ঠা পরায়ন ও পরোপকারী ছিলেন।

 

পরে তিনি নাতাশা ট্রেডিং এজেন্সির ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে ও নিজ স্ত্রীর সাথে একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে ব্যবসায় যোগ দেন। কর্মক্ষেত্রে অর্জন সাইফুল আজম একমাত্র সামরিক পাইলট যিনি যুদ্ধে চারটি বিমান বাহিনীর (বাংলাদেশ, জর্ডান, ইরাক ও পাকিস্তান) জন্য কাজ করেছেন। সেই সঙ্গে দুইটি ভিন্ন প্রতিপক্ষের (ভারত ও ইসরায়েল) বিরুদ্ধে লড়াই করার অনন্য কৃতিত্ব তার রয়েছে। ২০১২ সালে পাকিস্তান সরকারের মতে যেকোনো পাইলটের চেয়ে বেশি ইসরায়েলি বিমান ভূপাতিত করার রেকর্ড তার রয়েছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী ২০০০ সালে তাকে সম্মানিত করে এবং তিনি “পৃথিবীর বাইশজন “জীবিত ঈগলের” অন্যতম”।

সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ©2017-2025 (এটি গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ) অনলাইন নিবন্ধন আবেদনকৃত। আবেদন নম্বর- ২১৮৮।