পাবনা চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনিয়ম সেচ্ছাচারিতা স্বজনপ্রীতি ও শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা পকেটস্থ করাসহ নানান অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাইকোলা ডিগ্রী কলেজে গোপনে কমিটি গঠন করায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। করোনাকালীন সময়ে অধ্যক্ষ কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে, অত্যন্ত গোপনে গভর্নিং বডি গঠণ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক তা অনুমোদন করিয়েছেন। অধ্যক্ষ গভর্নিং বডি গঠণের বিষয়টি স্বীকার করলেও গভর্নিং বডির অভিভাবক সদস্য নির্বাচন, প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ নির্বাচনী তফসিল প্রকাশ বা নোটিশ প্রদানের কোন প্রমাণাদি দেখাতে পারেননি। এনিয়ে অভিভাবক এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে গেয়ে জানাযায়, ছাইকোলা ডিগ্রী কলেজের গভর্নিং বডির মেয়াদ গতকাল রবিবার শেষ হয়েছে। এর আগেই কলেজে অধ্যক্ষ বর্তমান কমিটির কাউকে কোন কিছু না জানিয়ে নির্বাচন পরিচালনার জন্য কোন কমিটি বা প্রিজাইডিং অথবা রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ না করে অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য কোন প্রকার নির্বাচনী তফসিল ঘোষনা না করে নিজের ইচ্ছেমতো একটি কমিটি গঠণ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে তা অনুমোদন করেছেন। কমিটি গঠণ ও অনুমোদনের বিষয়টি জানেন না কলেজেরর নতুন গভর্নিং বডির সভাপতি আব্বাস উদ্দিন নিজেও।
কলেজের নতুন সভাপতি আব্বাস আলী মাষ্টার জানান, নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে তফশীল ঘোষণা হয়েছে কিনা নির্বাচন হয়েছে কিনা নতুন কমিটি পাস হয়েছে কিনা কিছুই আমার জানা নাই। সব অধ্যক্ষ জানে। কিছু কাগজ পত্রে শুধু অধ্যক্ষ আমার স্বাক্ষর নিয়ে গেছে।
বর্তমান কমিটির সদস্যরা বিষয়টি জানতে পেরে অধ্যক্ষের সাথে কথা বলতে গেলে,অধ্যক্ষ তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। শুধু তাই নয় অধ্যক্ষ চরম স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে বর্তমান কমিটির সভাপতিকেই সভাপতি করে এই করোনাকালীন সময়ে কমিটি গঠণ করেছেন। অভিভঅবক সদস্যদের বাদ দিয়ে কোন প্রকার নির্বাচন না করে নিজের ইচ্ছেমতো ৩ জন অভিভাবক সদস্য মনোনীত করছেন। নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি ও নিজের ইচ্ছে মতো করেছেন। মনোনীত করেছেন বিদ্যোৎসাহী সদস্য।
স্থানীয় জনগণ একাধিক অভিভাবক প্রতিনিধি শিক্ষক প্রতিনিধি জানান, নতুনভাবে গভর্নিং বডি করার বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। অধ্যক্ষ চরম স্বেচ্ছাচারিতা আর অনিয়মের মাধ্যমে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতেই এই অপকর্ম করেছেন।
কলেজ গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি ছাইকোলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছাইকোলা ইউনিয় চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম কলেজকে নিজের তালুক বানিয়েছেন। কোন নিয়মনীতির বালাই নেই এই কলেজটিতে। তিনি বলেন এক সময় আমি সভাপতি ছিলাম তার দূর্নীতি আর অনিয়ম না মানার কারণে সভাপতি আর থাকতে পারিনি।নজরুল ইসলাম আরো বলেন শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা কলেজের কর্মচারীদের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে আত্মসাত করেছেন অধ্যক্ষ। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানোর পর তা রহস্যজনক কারণে ধামাচাপা পড়ে যায়।
সদ্য শেষ হওয়া অভিভাবক সদস্য ইউপি সদস্য ইউসুফ আলী জানান, অধ্যক্ষ তার ইচ্ছেমতোই সবকিছু করেন। হাজার হাজার টাকার কোন হিসাব নেই। মিটিং না করেই মাঝে মধ্যে আমার বাড়িতে গিয়ে নানা কথা বলে রেজুলেশনে স্বাক্ষর নিয়ে আসতো। কলেজের স্বার্থেই আমি সই করেছি। এখন শুনছি কলেজের পরিচালনা কমিটি গঠণ করা হয়েছে। অথচ এ বিষয়ে আমরা কেউই কিছু জানিনা।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মো. সাইফুল ইসলাম কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন প্রকার সদুত্তর দিতে পারেননি। এ ছাড়া তার কাছে নির্বাচনী তফসিল কমিটির রেজুলেশনসহ আনুসাঙ্গিক কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি বলেন, আমি চাটমোহরে থাকি। সমস্ত কাগজপত্র বাসায় রয়েছে। কলেজে রাখিনি। এক পর্যায়ে বলেন বর্তমান সভাপতিকে নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগ করা হয়। এ ছাড়া দু’জন শিক্ষককে সদস্য করা হয়। এর মধ্যে একজন সহকারী অধ্যাপক উত্তম গোস্বামী। আরেক জনের নাম তিনি বলতে পারেননি।
উত্তম গোস্বামী সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি কেন কমিটির সদস্য হবো আমি এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। অধ্যক্ষ উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক ফাহিমা সুলতানা জানান, নিয়ম না মেনে ছাত্র-ছাত্রী অভিভাবক সদস্য শিক্ষকদের না জানিয়ে কমিটি গঠনের কোন সূযোগ নাই। এমনটি হয়ে থাকলে এবং এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
#চলনবিলের আলো / আপন