সোমবার , ২৪শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - হেমন্তকাল || ৩রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

’৬৮ সালে কলেরায় মৃতের নাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ডাকাতের হামলায় নিহত ব্যক্তিও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা !

প্রকাশিত হয়েছে- শনিবার, ১৯ জুন, ২০২১

জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার রত্মপুর ইউনিয়নের বারপাইকা গ্রামের আব্দুল গফুর ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান সরকারের আমলে নিজ বাড়িতে বসে কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। অথচ তার নাম এসেছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়।

এছাড়া শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকায় নাম আসা অন্য তিনজনের কবরস্থান সরকারিভাবে বাঁধাই করার তালিকা হাতে পেয়ে সরেজমিন তদন্তে কবরের কোন অস্থিত্ব পাওয়া যায়নি। এনিয়ে চরম বিপাকে পরেছেন উপজেলা প্রশাসন। একইভাবে গৌরনদী উপজেলার চারটি কবরস্থানের মধ্যে একটি নিয়ে চরম বির্তকের সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা নন কিন্তু ডাকাতের হামলায় নিহত ব্যক্তির নাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় স্থান পাওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

শনিবার সকালে রত্নপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান বলেন, বারপাইকা গ্রামের আব্দুর রহমান শিকদারের পুত্র শহীদ গেজেটধারী আব্দুল গফুর স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে কলেরায় মারা গেছেন। তার নাম শহীদ গেজেটের তালিকায় আসা গোটা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কলঙ্কের। আব্দুল গফুরের সহপাঠি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মোঃ সোহরাব উদ্দিন বলেন, আব্দুল গফুরের ডান হাতের কব্জি ছিলোনা। সে বাম হাত দিয়ে খাবার খেত। ১৯৬৮ সালে সে নিজ বাড়িতে বসে কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তিনি আরও বলেন, উপজেলার ১৬ জন তালিকাভূক্ত বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে কিভাবে অস্থিত্বহীন তিনজন এবং ’৬৮ সালে মৃত ব্যক্তির নাম শহীদ গেজেটে এসেছে তা সত্যি রহস্যজনক। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানিয়েছেন, ঢাকায় বসবাসরত আব্দুল গফুরের সন্তানরা প্রতারনার মাধ্যমে শহীদ পরিবার হিসেবে সরকারি ভাতা গ্রহণ করছেন।

উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সুশান্ত বালা বলেন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকায় নাম আসা চারজনের কবরস্থান সরকারিভাবে বাঁধাই করার তালিকা হাতে পেয়ে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে জানতে পারি শহীদ আব্দুল মান্নান মোল্লা, শহীদ সামচুল হক মোল্লা, শহীদ তৈয়ব আলী বখতিয়ারের কবরস্থান তাদের বাড়ি কিংবা উপজেলার কোথাও নেই। তাদের স্বজনরা জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বা তারপরে ওই তিনজনের লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। সমাজসেবা অফিসার আরও বলেন, শহীদ আব্দুল গফুরের কবরের সন্ধানে তার নিজ বাড়ি বারপাইকা গিয়ে জানতে পারি তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিতৃর্কিত।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবুল হাশেম বলেন, অস্তিত্বহীন এবং বিতর্কিত ব্যক্তিদের কিভাবে মন্ত্রণালয় তালিকা করেছে তা আমার জানা নেই। আমরা বিতর্কিত ব্যক্তি ও অস্তিত্বহীন কবরের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে রিপোর্ট জমা দেবো। তারপর তারাই পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

অপরদিকে সড়কপথে দক্ষিণাঞ্চলের প্রথম সম্মুখ যুদ্ধে গৌরনদীর সাউদেরখালপাড় নামক এলাকায় বসে শহীদ হওয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা নাঠৈ গ্রামের সৈয়দ আবুল হাসেম এর কবরস্থান সরকারিভাবে বাঁধাই করার তালিকায় স্থান পায়নি। অথচ মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও ডাকাতের হামলায় নিহত বাটাজোর গ্রামের সোনামদ্দিনের নাম রহস্যজনক ভাবে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারিভাবে তার কবরস্থান বাঁধাই করার তালিকায় স্থান পেয়েছে। এনিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গৌরনদী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে রিপোর্ট জমা দেয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া তালিকার ভিত্তিতে গণপূর্ত বিভাগ দুই লাখ টাকা ব্যয়ে একেকটি কবরস্থান বা শ্মশান বাঁধাইয়ের কাজ বাস্তবায়ন করছে। জেলার অধিকাংশ উপজেলায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবরস্থান নিয়ে বিতর্ক থাকায় সঠিক শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থান সনাক্ত করার জন্যই জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোঃ ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের তালিকানুযায়ি তারা শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর বাঁধাই এর বাস্তবায়ন করছেন। এখানে কোনটা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে সেটা বাস্তবায়ন করা হবেনা।

 

 

#চলনবিলের আলো / আপন

সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ©2017-2025 (এটি গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ) অনলাইন নিবন্ধন আবেদনকৃত। আবেদন নম্বর- ২১৮৮।