শনিবার , ৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২২শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল || ১৪ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

গৃহিনীর বাচ্চা – শাবলু শাহাবউদ্দিন

প্রকাশিত হয়েছে- মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০

সবে রেবেকা সুলতানা বাড়ি ফিরেছে । দরজায় কলিং বেল বাজতেই রান্নাঘর
থেকে ছুটে আসলো পনেরো বছর বয়সের কাজের মেয়ে টুম্পা । স্বভাব চরিত্রে
মাটির মানুষ । কেন যে স্বামী বেচারীরকে ছেড়ে দিল কথাটি মাথায় আসে না
রেবেকার। টুম্পা এ বাড়ির কাজের মেয়ে না, মনে হয় যেন এই বাড়ির একজন
সদস্য । যতখন পর্যন্ত না কথা বলবে ততখন পর্যন্ত কেউ তার চাল চলনে
ধরতে পারবে না এই মেয়ে কে । যখন কথা বলবে তখন আর কারো বুঝতে বাকি
থাকবে না, এই মেয়ে কে হতে পারে । টুম্পার কথায় স্পষ্ট বুঝিয়ে দেয় সে
গ্রাম থেকে এসেছে , এই বাড়ির কাজের মেয়ে । প্রথম প্রথম খুব লজ্জা পেত
, বাড়িতে কোন গ্রেস্ট আসলে সামনে আসতো না, এখন আর এ সকল লজ্জা
ফজ্জার ধার ধারে না । প্রথম যখন এই বাড়িতে আসে এবং রেবেকার প্যান্ট
শার্ট পরে অফিসে বের হতে দেখে তখন যে কী একটা কাণ্ডকারখানা করে
ফেলেছিল, সে কথা মনে হলে টুম্পা আজও নিজে নিজেই লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে
নেয় । এখন সে নিজেই প্যান্ট শার্টে এমনকি সর্ট পোশাকও পড়ে রেবেকার
মত । রেবেকার স্বামী যতখন বাড়িতে থাকবে টুম্পা যতখন পর্যন্ত সর্ট
পোশাক পড়া নিষেধ । সর্ট পোশাকে নাকি রেবেকার চেয়ে টুম্পা গড়ন তার
স্বামীর বেশি মন কারে। হাজার সংস্কার এর মধ্যেও যে কুসংস্কারের বাস
তাকেই বলে নারী । নারীদের মন কুসংস্কারের আধুনিক মডেল হল সংস্কার ।
যে সংস্কারের আকারো নেই ওকারো নেই।
প্রথম যেদিন সে গ্রেস্ট রুমে গিয়ে দেখে রেবেকা এবং তার স্বামী ও কিছু
লোক সদর দরজার কাছে গোল টেবিলে বসে মদ খাচ্ছে , সে বেহুঁশ হয়ে গেছিল ।
হুঁশ ফেরার পরে বাড়ি থেকে পালাতে কত না চেষ্টা করেছিল সে কথা এখন তার
মনে হলে আজও নিজেকে ছেলে মানুষি বলে মনে হয় । শহরে আসার আগে
রেবেকা জানত মদ খেলে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়, জেলে থাকতে হয়; আর জেল
মানে তার কাছে জাহান্নমের মত কোন একটি কিছু । এখন সে নিজেই মদ খায় ।
রেবেকা দু'মাস পরে বাড়িতে ফিরছে, তার স্বামী এক বছরের সন্তান রেখে এই
বাড়ি ছাড়ছেন। কাজের এত চাপ যে আর তাঁর নিজের সন্তানকে একবারে জন্য

দেখাবার সময় হয় না । রেবেকা অবশ্যই আগে এক সপ্তাহ পর পর আসতো।
ছেলেকে দেখে যেত । এখন আর আসতে পারে না নিয়মিত । এই তো এ তারিখ
কারেক্ট একষট্টি দিনের মাথায় এসেছে । আসতে অবশ্যই আরো দেরি হত ।
কিন্তু টুম্পা যে ভাবে ফোনের পর ফোন করে যাচ্ছিল, তাতে না এসে আর পারা
গেলো না ।
রেবেকা ছেলে খুব অসুস্থ । বছর পাঁচেক বয়স । তার হয়তো চার বছরের মত
হলো বাবা-মাকে দেখেনি, দিন হিসাব করে ধরতে গেলে ।
দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই টুম্পা হাউ মাউ করে কেঁদে ফেললো,
– আফা, এনবার বোওঝি কায়েসরে বানচাতে পাহরলাম না।
টুম্পার কান্না দেখে রেবেকা থতমত হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
– কেন ? আমার সন্তানের কী হয়েছে?
– আফা তিন দিহন ওহইলো কিনছু খাহয় না । খালি ঘমহের মধ্ধি আবুলতাবুল
কহয় ।
– ওকে চিন্তা কিছুই নেই, আমি দেখতেছি । বলে ,রেবেকা নিজের পোশাক
পর্যন্ত পরিবর্তন না করে সোজা ছেলের রুমে প্রবেশ করে , ছেলেকে দেখতে
পেলো । ছেলে মুখ চেয়ে রেবেকা ডাক দিলো;
– কাওসার, কাওসার ।
কাওসার হালকা ঘুমের মাঝে থেকে গ্রাম্য ভাষায় কয়েকটি বিশ্রী ভাষায় গালি
দিলো । রেবেকার বুঝতে দেরি হল না । এই ভাষা তার ছেলে কোথায় থেকে
শিখেছে ।
রেবেকা ছেলের মুখে এবং চোখে হাত দিয়ে বুঝতে পারলো ছেলের সাথে কী
হয়েছে । ছেলের গা থেকে মদের গন্ধ । ছেলের চোখে অজস্র ঘুম ।
রেবেকা চড়া কণ্ঠে
– টুম্পা, কাওসার ঘুমের ওষুধ পেলো কোথায় থেকে এবং মদ খাইলো কেমনে ?

– আফা বিসসাষ করহেন আমি ওরে ঘুমহের ওসুদ দেহেই নাই । আপনি ঘুমহের
আগন যে, বরহি খান হেইটি তিনডি খাওয়াইছি । আরহ যহন ঘম থেহে দেকছি
উডছে না তহন মদ দিছি ।
রেবেকার মাথায় এবার আগুন উঠে গেলো টুম্পার কথা শুনে । বাড়িতে এমন
কাণ্ড শুরু করে দিল যেন, টুম্পা কান্না আওয়াজ এই বাড়ি থেকে ঐ বাড়িতে না
সমগ্র শহর থেকে শোনা গেলো ।
আজ এক টুম্পাকে নিয়ে সমগ্র শহর আলোর মিছিল বের করেছে, টুম্পার কী
দোষ ছিল । টুম্পা জানত এই ওষুধ খেয়ে রেবেকা ঘুমায় নিয়মিত, তাই হয়তো
কাওসারকে খাওয়াছিল ভালোর জন্য । মদ খেলে শরীর ও মন ভালো থাকে কে
এই কথাটি টুম্পার মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিল ? নিশ্চয়ই রেবেকার স্বামী । তাই
হয় তো টুম্পা ভেবেছিল যে মদ খেয়ে বাবা-মার মন ও শরীর ভালো থাকে ,সেই
মদ খেলে হয় তো ছেলের শরীরও সুস্থ থাকবে । আজ আধুনিকতা শুধুই
আধুনিকতাই আমাদের দেয় নাই, গৃহকর্তা সন্তান আর গৃহিনী বাচ্চা নেই,
বাচ্চা হয়েছে যেন কাজের মেয়ের, স্বভাব চরিত্রেও কাজের মেয়ে। হবেই না
বা কেন। জন্মের পর থেকে কাজের মেয়েই একমাত্র সাথি। শুক্রাণু আমার
আর ডিম্বাণু তোমার, বাচ্চা টা কেবল কাজের মেয়ের ।

শাবলু শাহাবউদ্দিন
শিক্ষার্থী
ইংরেজি বিভাগ
চতুর্থ বর্ষ
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
পাবনা, বাংলাদেশ ।

 

CBALO/আপন ইসলাম

সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ©2017-2025 (এটি গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ) অনলাইন নিবন্ধন আবেদনকৃত। আবেদন নম্বর- ২১৮৮।