সোমবার , ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৩১শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল || ২৩শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

যারা ধর্ষকের ফাঁসি চায়; তারাও বিশ্বাস করে ধর্ষণের কারণ মেয়েরাই : তসলিমা

প্রকাশিত হয়েছে- সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক:বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা গত দু’দিন ধরে ধর্ষণের প্রতিবাদ করছে। ধর্ষণটা সারা বছর চলে। প্রতিবাদটা কিন্তু বরাবরই সিজনাল। অভিনেতা অনন্ত জলিল নাকি ধর্ষণের জন্য ধর্ষককে নয়, মেয়েদের দোষ দিয়েছেন। এ কি নতুন কিছু? ছেলেমেয়েরা অবশ্য অনন্ত জলিলের ওপর ক্ষেপেছে। অনন্ত জলিলের মতটাই, মানি বা না-মানি, প্রায় সকলেরই মত। অনন্ত জলিল চাপে পড়ে ক্ষমা চেয়েছেন। ওই ক্ষমা তিনি অন্তর থেকে চাননি।

তার স্বতস্ফূর্ত প্রথম বক্তব্যই তার অন্তরের কথা, যা তিনি বিশ্বাস করেন। ক্ষমা চাওয়ার পরও বিশ্বাস করেন। স্রোতের অনুকূলেই যেতে হয় বলে গিয়েছেন। অভিনেতা মোশারফ করিমকে ঠিক এর উলটো কথা বলার অপরাধে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল। উনি বলেছিলেন পোশাকের কারণে ধর্ষণ ঘটে না। ওই মন্তব্য করার পর মোশারফ করিমকেও চাপের মুখে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল। হ্যাঁ, সত্য বলার জন্য তিনি ক্ষমা চেয়েছিলেন। সংশোধন করে মোশারফ করিম যা বলেছিলেন তা হলো পোশাকের কারণেই ধর্ষণ ঘটে।

ঘটনাটি কবে ঘটেছিল? দু বছর/ তিন বছর আগে? এই ক’দিনে দেশ কি এত ভালো হয়ে গেল যে অনন্ত জলিলকে ক্ষমা চাইতে হয় মেয়েদের পোশাকের কারণে ধর্ষণ ঘটে বলার জন্য? না, দেশ আগের মতো নষ্টই আছে, আগের মতোই নারীবিদ্বেষী। শুধু কিছু লোকের প্রতিবাদের বাই উঠেছে বলে মনে হচ্ছে দেশ বদলে গেছে। দেশের কিছু বদলায়নি, কাল থেকেই আবার পুরোদমে ধর্ষণ শুরু হবে।

এখনও হচ্ছে ধর্ষণ, আমরা খবর পাচ্ছি না। ঘরে ঘরে স্বামীরা কি স্ত্রীদের আজ ধর্ষণ করছেন না? নিশ্চয়ই করছেন। ধর্ষণ করার অধিকার, স্বামীরা বিশ্বাস করেন, তাদের আছে। সব বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক, মন্ত্রী, মহামন্ত্রী, সমাজপতি প্রমুখও বিশ্বাস করেন আছে। আছে মনে করেন বলেই তো জোর জবরদস্তি স্ত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করা আইনের চোখে আজও ধর্ষণ বলে গণ্য হয় না।

যারা ধর্ষককে ফাঁসি দেওয়া, ধর্ষকের ধর্ষদণ্ড কর্তন করা, ধর্ষককে ক্রশফায়ারে মেরে ফেলা ইত্যাদির জন্য চিৎকার করছে, তাদের অধিকাংশই খুব গোপনে বিশ্বাস করে ধর্ষণের কারণ মেয়েরাই। মেয়েরা যদি সংযত হয়ে চলাফেরা করতো, যদি ঠিকঠাক পোশাক পরতো, রাতে একা না বেরোতো, তাহলে ধর্ষণ হতো না। তাদের কেউ কেউ যে সুযোগ পেলে ধর্ষণ করবে না এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই।

বাংলাদেশের বড় বড় বুদ্ধিজীবীই বিশ্বাস করেন ধর্ষণে। বিশ্বাস করেন মেয়েদের না মানে হ্যাঁ, বিশ্বাস করেন একটু জোর না করলে যৌন সঙ্গমে আনন্দ নেই। সাধারণ মানুষ ব্যতিক্রম হলে কতটাই বা হবে! তবু হোক প্রতিবাদ। এইসব প্রতিবাদের ফলে, মুশকিলটা হলো, ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড জারি করে সরকার তড়িঘড়ি দায়মুক্ত হবে। ধর্ষণের মূল কারণগুলোর চর্চা চলতেই থাকবে সমাজে। তাতে সরকারের কিচ্ছু যাবে আসবে না।

-তসলিমা নাসরিনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ থেকে

সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ©2017-2025 (এটি গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ) অনলাইন নিবন্ধন আবেদনকৃত। আবেদন নম্বর- ২১৮৮।