শনিবার , ৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২২শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল || ১৪ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন: পপুলার ভোটে বিজয়ী মানেই প্রেসিডেন্ট নন!

প্রকাশিত হয়েছে- রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক:ধরা যাক, কোনো একজন প্রার্থী  সারাদেশ থেকে ৫০ লাখ ভোট বেশি পেয়েছেন। এরপরও তিনিই  যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হবেন এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। এর কারণ দেশটির সংবিধানে জুড়ে দেয়া অন্যতম একটি শর্ত। প্রেসিডেন্ট হতে হলে একজন প্রার্থীকে অবশ্যই ইলেক্টরাল কলেজ ভোটে বিজয়ী হতে হয়। আর এতে দেশজুড়ে ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে অন্তত ২৭০টি ভোট পেতেই হবে।

২৩০ বছরের ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে এমনটি হয়েছে পাঁচবার। পপুলার ভোটে জয়ী হয়েও প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি ওই নির্বাচনগুলোর প্রার্থীরা। এই তো ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটন পেয়েছিলেন মোট ভোটের ৪৮. ২ শতাংশ। অন্যদিকে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভোট ছিল ৪৬.১ শতাংশ। ট্রাম্পের তুলনায় হিলারি ক্লিনটন ২৮ লাখ ৬৪ হাজার, ৯৭৪ ভোট বেশি পেয়েছিলেন। এরপরও প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কেন? কারণ হিলারি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট কম পেয়েছিলেন। গত নির্বাচনে হিলারি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেয়েছিলেন ২২৭টি। আর ট্রাম্পের ভোট ছিল ৩০৪। ফলে পপুলার ভোটে জিতেও প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি সাবেক ফার্স্ট লেডি ও সেক্রেটারি অব স্টেট।

সাউথ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটির জার্নালিজম অ্যান্ড কমিউনিকেশন্সের অধ্যাপক ড. শফিকুর রহমান পুরো বিষয়টির ব্যাখ্যা করেন। তিনি জানান, প্রতিটি স্টেটে জনসংখ্যা যাই হোক সিনেটর থাকেন দুজন করে। তবে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টিটিভসের সদস্য বা কংগ্রেসম্যান থাকেন জনসংখ্যার ভিত্তিতে। ফলে হাউজের সদস্য কোনো স্টেটে মাত্র একজন, কোনো স্টেটে অনেক বেশি। এই যেমন ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫৩ এবং নিউইয়র্কে ২৭ জন হাউজের সদস্য থাকলেও দুটি স্টেটেই সিনেটর কিন্তু দুজন করেই। একটি স্টেটের সিনেট ও হাউজের সদস্য সংখ্যার যোগফল হচ্ছে ইলেক্টোরাল কলেজ।

অধ্যাপক ড. শফিকুর রহমান আরো জানান, যদিও যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি কোনো স্টেট নয়, এরপরও ১৯৬১ সালে হওয়া সংবিধানের ২৩তম সংশোধনী অনুযায়ী এখানে তিনটি ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট রয়েছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা একটি স্টেটে নির্ধারন করে দেয়া ইলেক্টরদের নির্বাচিত করেন। অর্থাৎ, রিপাবলিকান দল এবং ডেমোক্রেট দল নিজেদের ইলেক্টর নির্বাচন করেন। এক্ষেত্রে দলের প্রতি তাদের আনুগত্য ও অন্যান্য বিষয়কে বিবেচনায় নেয়া হয়। বাংলাদেশ ল সোসাইটি, নিউইয়র্কের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আলী বাবুল বলেন, তাই বলে পপুলার ভোটের কোনো গুরুত্ব নেই, এমন ভাবলে চলবে না। একটি স্টেটে পপুলার ভোটে বিজয়ী হলেই কেবল ওই স্টেটের সবগুলো ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পাবেন প্রার্থী। মানে নিয়ম অনুযায়ী, একটি স্টেটে পপুলার ভোটে বিজয়ী প্রার্থী সবগুলো ইলেক্টরাল কলেজ ভোট পেয়ে যান।

অধ্যাপক ড. শফিকুর রহমান জানান, এই ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের কারণেই কিন্তু ব্যাটেলগ্রাউন্ডখ্যাত সুইং স্টেটগুলোর ভোট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কারণ ওইসব স্টেটই শেষ পর্যন্ত জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে দেন। এবারো তেমনটি ঘটবে বলে মনে করেন ৪২ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারি এই শিক্ষক।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ধরুন ক্যালিফোর্নিয়া ও নিউইয়র্ক নিশ্চিতভাবেই ডেমোক্রেটিক স্টেট হওয়ায় বাইডেন পাবেন। স্টেট দুটোতে যথাক্রমে ৫৫ ও ২৯টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট রয়েছে। অন্যদিকে টেক্সাসে ৩৮টি নিশ্চিতভাবেই যাবে ট্রাম্পের পক্ষে। এমন আরও নিশ্চিত ভোট দুই দলেরই রয়েছে। কিন্তু ফল নির্ধারণ করবে ফ্লোরিডা, পেন্সিলভেনিয়া, মিশিগান, নর্থ ও সাউথ ক্যারোলিনা, উইসকনসিনের মতো সুইং স্টেটগুলো।

ফ্লোরিডায় ২০১৬ সালে জয় পেয়েছিলেন ট্রাম্প। সেখানে ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট রয়েছে ২৯টি। একই সাথে পেন্সিলভেনিয়ায় ২০, মিশিগানে ১৬ই ভোট রয়েছে। এই দুটি স্টেটেও জয় পেয়েছিলেন ট্রাম্প। ফলে এসব স্টেট জো বাইডেন নিতে ব্যর্থ হলে তার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করেন অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আলী বাবুল।

নির্বাচনে ফল নির্ধারণকারী এই ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি নিয়ে অনেক সমালোচনা রয়েছে। বেশ কয়েকবার এই পদ্ধতি বাতিলের কথা উঠলেও তা হয়ে ওঠেনি। বিশেষ করে ২০১৬ সালে হিলারির পরাজয়ের পর এই পদ্ধতি প্রশ্নের মুখে পড়েছিল জোড়ালোভাবে। তখন অন্তত ১৫টি স্টেট এই পদ্ধতি সংস্কারের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু নানা বাধ্যবাধবতায় সেটা করা যায়নি বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে নিউইয়র্ক টাইমস সম্প্রতি একটি নিবন্ধে উল্লেখ করেছে, এবারো পপুলার ভোটে হেরে গিয়ে কেবল ইলেক্টোরাল কলেজের কারণে প্রেসিডেন্ট হয়ে যেতে পারেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যে কারণে বিভিন্ন জরিপে এগিয়ে থেকেও এবার হালকাভাবে নিচ্ছে জো বাইডেনের প্রচার শিবির। বিশেষ করে তারা সুইং স্টেটগুলোর দিকে জোড়ালো নজর রাখছে তারা। বাইডেনের প্রচার ব্যবস্থাপক  জেন ও’ম্যালি ডিলন সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, নির্বাচন জরিপের চেয়েও বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ©2017-2025 (এটি গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ) অনলাইন নিবন্ধন আবেদনকৃত। আবেদন নম্বর- ২১৮৮।