হিমেল চন্দ্র রায়,ষ্টাফ রিপোর্টার:
বিভিন্ন চটকদার উক্তির দ্বারা চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ভুক্তভোগীর দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথমে সাময়িক বরখাস্ত ও পরে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় স্থায়ী ভাবে চাকুরী হারালেন নীলফামারী ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কেয়ারটেকার নুর মোহাম্মদ।
ভুক্তভোগীর দায়ের করা অভিযোগে জানা যায়, অভিযুক্ত কেয়ারটেকার নুর মোহাম্মদ ভোক্তভোগীকে বিভিন্ন ধরণের চটকদার উক্তি দ্বারা চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। অবশেষে চাকুরী দিতে না পারায় বিভিন্ন ভাবে টাল বাহানা করতে থাকে এই কেয়ারটেকার নুর মোহাম্মদ। পরিশেষে বিভিন্ন চাপের মুখে পড়ে ধাপে ধাপে ৫ লক্ষ টাকা ফেরত করলেও, বাকী টাকা পরিশোধের নিমিত্বে ভুক্তভোগীকে একটি চেক প্রদান করেন নুর মোহাম্মদ। ভুক্তভোগী উক্ত পাওনা টাকা প্রাপ্ত চেকটির মাধ্যমে উত্তোলনের নিমিত্বে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে গেলে, অপর্যাপ্ত ফান্ড এর কারণে চেকটির বিরুদ্ধে ডিসঅনার স্লিপ প্রদান করেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ভুক্তভোগী ওই ডিসঅনার স্লিপসহকারে অভিযুক্ত নুর মোহাম্মদকে অবগত করলে, নুর মোহাম্মদ ভুক্তভোগীর পাওনা টাকা দিতে পুনরায় টালবাহানা শুরু করলে, পাওনা টাকা উত্তোলনের নিমিত্বে বিজ্ঞ আদালতে একটি মামলাসহ নীলফামারী ইসলামিক ফাউন্ডেশনে লিখিত অভিযোগ আনায়ন করেন ভুক্তভোগী ।
এদিকে, ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গঠন হয় তদন্ত কমিটি। তদন্ত শেষে অভিযুক্ত কেয়ারটেকার এর বিরুদ্ধে চাকুরী দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আত্মসাথের ঘটনাটির প্রমান পেয়ে স্থায়ী ভাবে চাকুরী থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম, আগারগাও, শেরে বাংলা নগর ঢাকা এর উপ-পরিচালক (কার্যক্রম)।
কথা হয়, নীলফামারী ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর উপ-পরিচালক (ডিডি) মারুফ রায়হান এর সাথে, তিনি জানান, “নুর মোহাম্মদ নীলফামারী ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আওতাধীনে সদর উপজেলার চাঁদেরহাট সাধারণ রিসোর্স সেন্টারের কেয়ারটেকার ছিলেন। আমি নীলফামারী জেলায় যোগদান করার পূর্বেই তার বিরুদ্ধে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে টাকা আত্মসাথের অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী একটি পরিবার। সেটি তদন্ত করেছে আমার উর্ধতন কর্তৃপক্ষ। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাকে চাকুরী হতে অব্যাহতি দেয় আমার উর্ধতন কর্তৃপক্ষ”। কেয়ারটেকার নুর মোহাম্মদ কর্তৃক আয়োজিত ‘এক লক্ষ টাকা দিতে না পারায় চাকুরী হারালেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কেয়ারটেকার’ ব্যানারে এমন মন্তব্য লিখে সাংবাদিকদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করার বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি বলেন, “কেয়ারটেকার নুর মোহাম্মদ সাংবাদিকদের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এমন বক্তব্য মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আমি বিষ্মিত এবং সামাজিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই তার বিরুদ্ধে খুব শিঘ্রই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
বিষয়টি নিয়ে অভিযোগকারী শরিফা আক্তার এর সাথে কথা হলে, তিনি সাংবাদিকদের জানান, “২০০৬ সালে কেয়ারটেকার নুর মোহাম্মদ এর সাথে আমার ভাইয়ের মাধ্যমে আমার পরিচয় ঘটে। এক পর্যায়ে নুর মোহাম্মদ আমাদের আত্মীয়তায় পরিনত হয়। সেই সুবাদে নুর মোহাম্মদ আমাকে চাকুরী পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে, আমার বরের কাছ থেকে একযোগে ৯ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করে। টাকা গ্রহণের অনেক দিন অতিবাহিত হলেও, চাকুরী দিতে না পারায় আমি ও আমার বর আমাদের প্রদেয় পাওনা টাকা ফেরত চাই। তৎপ্রেক্ষিতে নুর মোহাম্মদ ধাপে ধাপে আমাকে ৫ লক্ষ টাকা প্রদান করলেও, বাকী টাকা পরিশোধের নিমিত্বে তার স্ত্রীর নামীয় একটি চেক প্রদান করে। আমি পাওনা টাকা উত্তোলনের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে গেলে, পর্যাপ্ত ফান্ড না থাকায় চেকটি ডিসঅনার করেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে নুর মোহাম্মদ আবারও টাকা ফেরত প্রদানে টালবাহানা করলে, আমার পাওনা টাকা উত্তোলনের নিমিত্বে আমি বিজ্ঞ আদালতে একটি মামলা দায়ের করি, যার নম্বর এস,সি ৮২৯/১৯। মামলাটি বর্তমানে বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। কেয়ারটেকার নুর মোহাম্মদ আমাকেসহ আমার স্বামীকে প্রলোভন দেখিয়ে আমার টাকা আত্মসাৎ এর হীন মানসিকতায় লিপ্ত হওয়ায় আমি তার (নুর মোহাম্মদ) বিরুদ্ধে উপ-পরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, নীলফামারী বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ করলে, অভিযোগটি তদন্ত সাপেক্ষে নুর মোহাম্মদ এর উপর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কেয়ারটেকার নুর মোহাম্মদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করবেন না বলে সাংবাদিকদের সাফ জানিয়ে দিয়ে বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান।
CBALO/আপন ইসলাম