শুক্রবার , ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - হেমন্তকাল || ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

সমাজ সংস্কারে ইসলামের মূলনীতি ; সাইয়েদ মুহাম্মদ রাবে হাসানি নদভি

প্রকাশিত হয়েছে- সোমবার, ৫ অক্টোবর, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক:সামাজিক জীবনে পতনের অর্থ মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি ও সদিচ্ছার অভাব। যখন মানুষের সুবুদ্ধি ও সদিচ্ছা দুর্বল হয়, তখনই সে মন্দের প্রতি ধাবিত হয়। যা সমাজজীবনকে নষ্ট করে, মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে বস্তুগত ও আত্মিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে; বরং যখন কোনো মন্দ বিষয় কোনো জাতির ভেতর ছড়িয়ে পড়ে তা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ধ্বংসের কারণ হয়। পবিত্র কোরআনের বহু জায়গায় সামাজিক স্খলনের কারণ এবং তা থেকে মুক্তি লাভের উপায় বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন— ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদের ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দিচ্ছেন। তিনি নিষেধ করছেন অশ্লীলতা, অসৎ কাজ ও সীমালঙ্ঘন; তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যেন তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করো।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯০)

উল্লিখিত আয়াতে সামাজিক পতনকে তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। এক. অশ্লীলতা বা নির্লজ্জতা, দুই. মন্দ কাজ—যাতে সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তিন. সীমালঙ্ঘন ও অবাধ্যতা। যেমন—হত্যা, চুরি, ডাকাতি, সমাজ ও রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা ইত্যাদি। এই তিন প্রকার অন্যায় ও পাপ সব ধর্ম ও সমাজে সমানভাবে নিন্দনীয়। প্রকৃতপক্ষে কাজগুলো মন্দই। ধর্ম ও মনুষ্যত্বের বিচারেও তা পাপ ও ঘৃণ্য। যদি এই তিন শ্রেণির অপরাধ বৈধতা পায়, তবে মানুষের পারস্পরিক অধিকার; জীবন, সম্পদ ও সম্ভ্রম নিরাপদ থাকবে না। কোরআন এসব পাপ ও মন্দ স্বভাবের বিপরীতে ভারসাম্যপূর্ণ মানবীয় গুণাবলি অর্জনের কথা বলেছে। এসব গুণের প্রসার ও চর্চার মাধ্যমেই ইসলাম সমাজসংস্কারের কথা বলে এবং সমাজকে স্খলনের হাত থেকে রক্ষা করে। কোরআনে বর্ণিত এমন কিছু গুণের বর্ণনা তুলে ধরা হলো।

এক. আল্লাহভীতি : তাকওয়া বা আল্লাহভীতি হলো জীবন যাপনে সৎ ও পবিত্র হওয়া। আল্লাহভীতি মানুষকে ন্যায়বিচার ও ইনসাফ, চারিত্রিক পবিত্রতা, বিনয় ও বিনম্রতা, ভারসাম্য ও মধ্যপন্থা, সততা ও সৃষ্টির প্রতি দয়াশীল হতে শেখায়। কোনো মানুষের ভেতর আল্লাহভীতি না থাকলে সে লোভ-লালসা, অশ্লীলতা, অপব্যয়, সুদ, ঘুষ, মিথ্যাচার, ওজনে কম দেওয়া, পরনিন্দার মতো মন্দ কাজে লিপ্ত হয়। কোরআন এসব কাজকে অশ্লীলতা ও মন্দ কাজের শ্রেণিভুক্ত করেছে। এসব মন্দ কাজের চিকিৎসাও ইসলাম দিয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ।’ (সুরা : আনকাবুত,   আয়াত : ৪৫)

দুই. লজ্জা ও শালীনতা : অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতার চিকিৎসা লজ্জা ও শালীনতা। ইসলাম লজ্জা ও শালীনতার নির্দেশ দিয়েছে, তবে সত্য প্রকাশে নয়। মানুষ লজ্জা করবে পাপ ও অন্যায় কাজে, যাতে সমাজ থেকে মন্দ দূর হয়। সমাজে লজ্জা ও শালীনতার চর্চা না থাকলে সেখানে মানুষ যা খুশি করতে পারে। নামাজ একই সঙ্গে মানুষের ভেতর লজ্জাবোধ বাড়ায় এবং মন্দ কাজ থেকে দূরে রাখে।

তিন. ন্যায়বিচার : মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র ন্যায়ানুগ হওয়া আবশ্যক। ইনসাফ বিবেকের শক্তি ও ভালো কাজের দীপ্তি। মানুষ যখন প্রবৃত্তির ভারে নিষ্প্রভ হতে থাকে, তখন ন্যায়ানুগ হওয়া প্রয়োজন। অবশ্য কিছু মন্দ কাজ এমন, যার কারণে আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহ ছিনিয়ে নেন, যা মানুষকে আল্লাহর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করে, ফলে সে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে ব্যর্থ হয়। যেমন—শিরক। যে ব্যক্তি শিরকে লিপ্ত হয়, সে চিরদিনের জন্য আল্লাহর অনুগ্রহ হারিয়ে ফেলে—যদি না সে তাওবা করে এবং নতুন করে ঈমান আনে। এ জন্য ইসলাম সব মিথ্যা উপাস্যকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং একত্ববাদের আহ্বান জানিয়েছে।

চার. মন্দের বিপরীতে ভালো : সমাজসংস্কারে কোরআনের আরেকটি মূলনীতি হলো মন্দের পরিবর্তে ভালো করা, ভালো করতে উৎসাহিত করা। ইরশাদ হয়েছে, ‘ভালো ও মন্দ কখনো সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত করো ভালো দ্বারা। ফলে তোমার সঙ্গে যার শত্রুতা রয়েছে সে হয়ে যাবে তোর অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো।’ (সুরা : হা-মিম সাজদা, আয়াত : ৩৪)

অর্থাৎ ভালো ও মন্দ কখনো সমান নয়। কেউ মন্দ কাজ করলে তার বিপরীতে তার সঙ্গে ভালো করতে হবে। কেননা মূর্খদের উপেক্ষা করা এবং তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করা পুণ্যের কাজ। আল্লাহ ভালো আচরণের প্রতিদান নষ্ট করেন না; বরং ভালো আচরণের মাধ্যমে সমাজের মন্দ প্রবণতা দূর হয়। তাই সমাজসংস্কারে ক্ষমা ও উপেক্ষার সঙ্গে কাজ করতে হবে। এতেই সমাজের বহু মন্দ প্রবণতা দূর হবে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই ভালো কাজগুলো মন্দগুলোকে দূর করে।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ১১৪)

মন্দের পরিবর্তে ভালো দ্বারা নিজেকে সুশোভিত করার বহু দৃষ্টান্ত পবিত্র কোরআনে রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘রহমানের বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের যখন মূর্খ লোকেরা সম্বোধন করে, তখন তারা বলে সালাম। … যখন তারা ব্যয় করে, তখন অপব্যয় করে না, কার্পণ্যও করে না; বরং তারা আছে এই দুইয়ের মধ্যে মধ্যম পন্থায়।’ (সুরা : ফোরকান, আয়াত : ৬৩ ও ৬৭)

এ ছাড়া সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ইসলাম যেসব গুণ অর্জন করতে বলে এর মধ্যে আছে ইখলাস, তাওয়াক্কুল, সবর ও শোকর। ইখলাস হলো শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা। তাওয়াক্কুল আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখা। সবর হলো সব আশা ও নিরাশায় আল্লাহমুখী থাকা এবং তাঁর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করা। আর শোকর হলো আল্লাহ ও মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ।

তামিরে হায়াত থেকে

মো. আবদুল মজিদ মোল্লার ভাষান্তর

৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস

সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ©2017-2025 (এটি গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ) অনলাইন নিবন্ধন আবেদনকৃত। আবেদন নম্বর- ২১৮৮।