বৃহস্পতিবার , ৪ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২০শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল || ১২ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

হাথরসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, নজিরবিহীন চাপে যোগি আদিত্যনাথ

প্রকাশিত হয়েছে- শনিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক:সাংবাদিকদের তো নয়ই, রাজ্যসভা-লোকসভার বিরোধী সাংসদদের পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশের হাথরসের দলিত পরিবারটির ধারে-কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছে পুলিশ।

মুখ্যমন্ত্রী যোগি আদিত্যনাথ ঘোষণা দিয়েছেন, তার রাজ্যে ‘মা-বোনদের’ সঙ্গে অশালীন আচরণ করে ছাড় পাবে না কেউ। অভিযুক্তদের তিনি এমন শাস্তি দেবেন, যা আগামী প্রজন্মের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

পরে তদন্ত দলের সুপারিশ মেনে হাথরসের এসপি এবং চার পুলিশকে বরখাস্ত করেছে যোগি আদিত্যনাথ সরকার। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা পাল্টা বলেছেন, কয়েক জন আজ্ঞাবহকে সরিয়ে লাভ নেই। দেশবাসী এখন নির্দেশদাতাদের এবং মুখ্যমন্ত্রী যইগ আদিত্যনাথের পদত্যাগ দেখতে চায়।

বিরোধী নেতানেত্রীদের সঙ্গে অসব্য আচরণ বজায় রেখেছে যোগির প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী তা নিয়ে কথা বলছেন না। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ যা করেছে, কার্যত তারই পুনরাবৃত্তি হল তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে।

মমতা ব্যানার্জি দলের নেতাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, শুক্রবার যত দ্রুত সম্ভব হাথরসের নির্যাতিতার পরিবারের কাছে পৌঁছাতে হবে। উত্তরপ্রদেশের পুলিশ যাতে আগাম সতর্ক হয়ে পথরোধ করতে না পারে, সেজন্য যথাসম্ভব গোপনীয়তা বজায় রেখে গতকাল সকালে পৃথক চারটি গাড়িতে দিল্লি থেকে বুল গড়হী গ্রামের উদ্দেশে রওনা হন তৃণমূলের তিন বর্তমান এবং এক সাবেক সাংসদ। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। নির্যাতিতার পরিবারের কাছে পৌঁছাতে পারেননি ডেরেক ও’ব্রায়েন, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রতিমা মণ্ডল এবং মমতা ঠাকুর।

গ্রামে ঢোকার মুখে তাদের আটকে দেওয়া হয়, ধস্তাধস্তিও হয়। এক পুলিশ কর্মকর্তা ধাক্কা মারেন প্রতিমাকে। তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেকও ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে যান।

পুরো ঘটনার প্রতিবাদে তৃণমূলের নেতারা পদযাত্রা করে হাথরস থানায় যান এবং ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। ডেরেক জানান, হাথরস থানায় তাদের করা অভিযোগের কপি পাঠানো হবে লোকসভার স্পিকারকে।

নারী সাংসদরা আজ গায়ে জড়িয়েছিলেন, ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও— লজ্জা’ স্লোগান লেখা সাদা চাদর। তাৎপর্যপূর্ণভাবে তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের তিন জন নারী সদস্যের একজন ছিলেন তফসিলি জাতি এবং একজন জনজাতিভুক্ত।

ডেরেক বলেন, একজন নারী সাংসদের গায়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তা হাত দেওয়ার সাহস পায় কিভাবে? আমি এই প্রশ্ন তোলায় আমাকেই ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হলো। জঙ্গলের রাজত্ব চলছে যোগির উত্তরপ্রদেশে। আমরা নেত্রীর নির্দেশে নির্যাতিতার পরিবারের কাছে যেতে চেয়েছিলাম। শুধু আটকই নয়, চূড়ান্ত হেনস্থা করেছে পুলিশ।

দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা— তিন ঘণ্টা সেখানে অবস্থান ধর্মঘট করেন তৃণমূল সাংসদরা। এসপি নেতা অখিলেশ সিংহ যাদব এবং রামগোপাল যাদব ফোনে কথা বলেন ডেরেকের সঙ্গে।

নির্যাতিতার পরিবারের কাছে থেকে মোবাইলও নিয়ে নেওয়া হয়েছে, যাতে তারা বাইরে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারেন।

হাথরসের নির্যাতিতার মৃত্যু আর তড়িঘড়ি তার মরদেহ পুলিশ পুড়িয়ে ফেলার পর থেকেই প্রবল চাপে যোগি প্রশাসন। আবার হাথরসের উচ্চবর্ণের বাসিন্দারা মহাপঞ্চায়েত ডেকে গ্রেপ্তার হওয়া দুষ্কৃতিদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেছে।

উচ্চবর্ণের বাসিন্দাদের বক্তব্য, পুলিশ যখন বলছে ধর্ষণের ঘটনা  ঘটেনি, কাউকে আটক করে রাখাও চলবে না। এই চাপানউতোরের মধ্যে দাহের ৪৮ ঘণ্টা পরেও নিভে যাওয়া চিতায় পড়ে রয়েছে নির্যাতিতার অস্থি। পরিবারের কাউকে তা বিসর্জনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। পাশে কেরোসিনের জার, হাতশুদ্ধির আধখালি বোতল।

হাথরসের পর উত্তরপ্রদেশে নাবালিকা ও কিশোরী ধর্ষণের পর পর কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে। রাজ্যের নারী সুরক্ষা নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা।

তিনি হরিজন সম্প্রদায়ের একটি মন্দিরে প্রার্থনায় অংশ নেন। পরে টুইটে বলেন, কয়েক জন আজ্ঞাবহ পাহারাদারকে সাসপেন্ড করে কী বোঝাতে চাইছেন যোগি। যাদের নির্দেশে এই কাজ করা হয়েছে, তাদের সরাতে পারলে সরান। আপনি নিজে ইস্তফা দিন। গোটা দেশ আজ আপনার ইস্তফা দেখতে চাইছে।

দিল্লি থেকে লখনৌ— বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনীতির নেতা-নেত্রীরা।

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই দিল্লির যন্তর মন্তরের সামনে গতকাল বিক্ষোভ-সমাবেশে অংশ নেন বহু মানুষ। আইনজীবী তথা সমাজকর্মী প্রশান্ত ভূষণ ওই সমাবেশে বলেন, উত্তরপ্রদেশে এখন গুন্ডারাজ চলছে। বিরোধী, সংবাদমাধ্যম কাউকে হাথরসে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। নির্যাতিতার পরিবারের কাছ থেকে মোবাইল ফোনটাও কেড়ে নেওয়া হয়েছে, যাতে তারা কারো সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পারেন।

শিবসেনার সঞ্জয় রাউত যোগী প্রশাসনকে কটাক্ষ করে বলেন, রাহুল গান্ধীর সঙ্গে আমাদের মতের অমিল থাকতে পারে, কিন্তু এক জন সর্বভারতীয় নেতাকে যইগর পুলিশ যেভাবে কলার ধরে হেনস্থা করেছে, মনে হচ্ছে এ দেশে এখন গণতন্ত্রের গণধর্ষণ চলছে।

সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরিও বিরোধী নেতা ও সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের ওপর উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বর্বরতার নিন্দা করে বলেন, যোগিরাজ্যে মানবাধিকার বিপন্ন।

নিজের দলের নেতা-নেত্রীদের কাছেও এখন কটাক্ষ শুনতে হচ্ছে যোগিকে। নির্যাতিতার পরিবার তথা গোটা গ্রাম পুলিশ ঘিরে রাখায় গোটা দেশের কাছে অন্য বার্তা যাচ্ছে বলে যোগিকে বিঁধেছেন তারই দলের নেত্রী উমা ভারতী।

এক লিখিত বার্তায় তিনি যোগিকে বলেছেন, আমরা রামরাজ্য গঠনের স্বপ্ন দেখি। কয়েক দিন আগেই রামমন্দিরের শিলান্যাস হয়েছে। কিন্তু আপনার পুলিশ যেভাবে ওই নিপীড়িত পরিবার তথা গোটা গ্রামকে নজরবন্দি করে রেখেছে, তাতে গোটা দেশের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে।

সূত্র : আনন্দবাজার

সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ©2017-2025 (এটি গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ) অনলাইন নিবন্ধন আবেদনকৃত। আবেদন নম্বর- ২১৮৮।