সোমবার , ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৩১শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল || ২৩শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

আমি না হয় বোকাই ছিলাম, বোকাই আছি : তসলিমা

প্রকাশিত হয়েছে- শুক্রবার, ২ অক্টোবর, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক:মাঝে মাঝে মনে হয় আমার চেয়ে বেশি বাংলাকে কেউ ভালোবাসে না। বাংলাকে ভালোবেসে আমি ইউরোপ-আমেরিকা ত্যাগ করেছিলাম। এমন নয় যে ইউরোপ-আমেরিকায় আমি নিতান্তই এক নোবডি ছিলাম। তখন আমার বই ছাপাচ্ছে ইউরোপ আমেরিকার বড় বড় প্রকাশনী। তখন আমার দু’কথা শোনার জন্য লোকে টিকিট কেটে সেমিনারে যায়। তখন আমি খবরের কাগজের প্রথম পাতায়। তখন আমি নিরাপত্তা প্রহরী বেষ্টিত। এমন সময় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমাকে যেহেতু বাংলাদেশে ফিরতে দেওয়া হচ্ছে না, আমি পশ্চিম বঙ্গে বাস করবো।

আমার সিদ্ধান্ত হয়তো ভুল ছিল, সিদ্ধান্তে আবেগ ছিল শতকরা নিরানব্বই ভাগ, আর যুক্তি ছিল এক ভাগ- সে আমি জানি। কিন্তু যে করেই হোক, আমি আমার স্বপ্ন পুরণ করেছি। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে একখানা ফেলোশিপ পেয়েছিলাম, সেটি শেষ করেই , ইউরোপ-আমেরিকাকে গুডবাই বলে আমি কলকাতায় বাস করতে শুরু করেছি। তখন, আশ্চর্য, যে বাঙালিরা আমার মাঝে মাঝে এসে কলকাতায় সপ্তাহ দু’সপ্তাহ থাকায় উচ্ছ্বসিত ছিল, তাদের অনেকে আর উচ্ছ্বসিত নয়। আমি তখন আর আকর্ষণীয় কিছু নই। আমি তখন তাদের মতোই গড়িয়াহাটে বাজার করা, তাদের মতোই কলেজ স্ট্রিটে হাঁটা, বা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খাওয়া পাশের বাড়ির কেউ।

আমি তো পাশের বাড়ির কেউই হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে এড়িয়ে চলা তো চাইনি, আমাকে একঘরে করা তো চাইনি। বাংলাকে ভালোবেসে কলকাতায় এসে বাস করাটা অনেকের কাছে বোকামো মনে হয়েছে। ঘরবাড়ি ছিল প্যারিসে, প্যারিস থেকে হার্ভার্ডে গিয়ে ফেলোশিপ করছি, এ শুনে আমার কাছে আসতে যাদের আনন্দ হতো, তাদের অনেকের আনন্দই দেখেছি নিভে গেছে যখন আমি তাদের মতো কেউ হয়ে গেলাম। আমার জনপ্রিয়তা রাতারাতি কমে গেল। তাই বলে বাংলা এবং বাংলা ভাষা থেকে আমার ভালোবাসা কিন্তু উবে যায়নি। আমি আরও আঁকড়ে রইলাম বাংলাকে। বাংলা থেকে নষ্ট রাজনীতি আমাকে চিরবিদেয় দিয়ে দেওয়ার পরও।

লক্ষ করেছি ব্যাক্তি নয়, তার ব্যাক্তিত্ব নয়, তার ভাবনা চিন্তা নয়, সে কোথায় বাস করে, তার ওপর তাকে শ্রদ্ধা করাটা নির্ভর করে। ইউরোপ আমেরিকার কথা বাদ দিচ্ছি। কলকাতার যে বাঙালি ব্যাঙ্গালোরে বা বোম্বেয় বাস করে, তাদের মূল্যটা বেশি । আবার ওদিকে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে গঞ্জে যারা বাস করে, তাদের কাছে বড় শহরে অর্থাৎ কলকাতায় বাস করা মানুষের মূল্য বেশি। এ শুধু পশ্চিমবঙ্গের কাহিনী নয়, বাংলাদেশেরও একই কাহিনী।

বাংলাদেশের প্রায় সবাই দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার জন্য অস্থির। আমেরিকাকে উঠতে বসতে গালি দিলেও আমেরিকায় বাস করার সুযোগ পেলে বাঙালি হাতে স্বর্গ পায়। বাংলা বাদ দিয়ে কেউ অন্য ভাষায় কথা বলতে পারলে তাকে বিদ্বান এবং বুদ্ধিমান বলে মনে করা হয়। তাই বলি, বাংলাকে খুব কম বাঙালিই ভালোবাসে। আমি না হয় বোকাই ছিলাম, বোকাই আছি। দুঃখ এ কারণে একফোঁটা নেই। ভারতবর্ষে বাস করাটা বিশাল এক চ্যালেঞ্জ। পায়ের তলায় মাটি বলতে কিছু নেই। তারপরও বাংলা যে দেশের অনেক ভাষার একটি, সে দেশকে দেশ বলে মনে হয় বলে বাস করি। এও হয়তো বোকামো। ওই যে বললাম বোকাই ছিলাম, বোকাই আছি, এতে দুঃখ নেই।

-তসলিমা নাসরিনের স্ট্যাটাস থেকে

সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ©2017-2025 (এটি গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ) অনলাইন নিবন্ধন আবেদনকৃত। আবেদন নম্বর- ২১৮৮।