অবৈধ দখলদার ও ভেজাল কারবারিদের আতঙ্ক ফরিদপুরের এসিল্যান্ড সানাউল মোর্শেদ
“৯৬ মোবাইল কোর্টে কোটি টাকার অবৈধ পণ্য জব্দ, উদ্ধার ১৮ একরের বেশি সরকারি জমি”
পাবনার ফরিদপুর উপজেলায় অবৈধ দখলদার ও ভেজাল কারবারিদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালিয়ে ব্যাপক আলোচনায় এসেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সানাউল মোর্শেদ। যোগদানের পর থেকে টানা মোবাইল কোর্ট ও বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে তিনি এলাকায় অবৈধ দখল, ভেজাল খাদ্য উৎপাদন এবং মৎস্য সম্পদ ধ্বংসকারী চক্রের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
জানা গেছে, পাবনা জেলা শহর থেকে প্রায় ৫৬ কিলোমিটার দূরের ফরিদপুর উপজেলা কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদে সমৃদ্ধ একটি জনপদ। বাথানসমৃদ্ধ এই এলাকায় দুধ, ঘি ও দুগ্ধজাত পণ্যের সুখ্যাতি থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে এর সুযোগ নিয়ে গড়ে উঠেছিল নকল দুধ, ভেজাল ঘি, চিজ, গুড়সহ বিভিন্ন ভেজাল পণ্য উৎপাদনের কারখানা। পাশাপাশি চলনবিল সংলগ্ন এলাকায় অবৈধ চায়না দুয়ারী জাল তৈরির কারখানা, সরকারি খাস জমি ও জলমহাল দখল করে অপরাধের অভয়ারণ্য গড়ে তোলে একটি প্রভাবশালী চক্র।
আরোও জানা গেছে, সানাউল মোর্শেদ ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ফরিদপুর উপজেলায় এসিল্যান্ড হিসেবে যোগদানের পর থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন আইনে ৯৬টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। এসব অভিযানে ২৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং ২১৮ জনকে অর্থদণ্ড প্রদান করে প্রায় ৩১ লাখ ২২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইনে ডেমরা, রতনপুর ও সোনাহারা এলাকায় পরিচালিত অভিযানে প্রায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা মূল্যের কয়েক হাজার মিটার অবৈধ চায়না দুয়ারী জাল জব্দ করে ধ্বংস করেছেন এবং সংশ্লিষ্ট কারখানা গুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন। এছাড়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে নকল দুধ ও ভেজাল ঘি উৎপাদনের দায়ে একাধিক কারখানা সিলগালা এবং জেল-জরিমানা করা হয়েছে।
এছাড়াও ভূমি ব্যবস্থাপনায়ও দৃশ্যমান সাফল্য এসেছে। পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১৮ একরের বেশি সরকারি খাস জমি, খেলার মাঠ, কৃষিজমি ও খাল অবৈধ দখলমুক্ত করেছেন যার বাজারমূল্য প্রায় ১৩ কোটি টাকা। পৌরসভার একমাত্র খাল দখলমুক্ত ও পুনঃখননের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার সমস্যারও সমাধান হয়েছে।
এছাড়া বনওয়ারিনগর ও তোহা বাজারে ফুটপাত ও বাজার দখলমুক্ত করে যানজট নিরসন, হাট পেরিফেরি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ২৫ বছরের বিশৃঙ্খলা দূর করা এবং প্রায় ১৫ লাখ টাকা বকেয়া রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। গত ১৫ মাসে ১২ হাজারের বেশি নামজারি ও বিবিধ মামলা হয়রানিমুক্তভাবে নিষ্পত্তি করা হয়। পাশাপাশি প্রায় ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ভূমি উন্নয়ন কর ও ১৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ভিপি লিজমানি আদায় করা হয়েছে।
ফরিদপুর পৌরসভা ও পুঙ্গলি ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি আধুনিক ডিজিটাল সেবা চালু, সড়কবাতি, পরিচ্ছন্নতা, মশক নিধন, পার্ক ও খেলার মাঠ সংস্কারসহ নানা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছেন। পৌরবাসীর মতে, গত তিন দশকে এত উন্নয়ন একসঙ্গে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সানাউল মোর্শেদ বলেন, “আমি চাই অবহেলিত ফরিদপুর উপজেলা সর্বদিক দিয়ে এগিয়ে যাক। সাধারণ মানুষ যেন ভূমি সেবা পেতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয়, সে বিষয়ে আমি কঠোর নজরদারি রাখছি। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অপরাধ দমন অব্যাহত থাকবে, তবে সমাজের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই অপরাধ নির্মূল সম্ভব।”
স্থানীয়দের ভাষ্য, কর্মনিষ্ঠ ও নির্ভীক এই কর্মকর্তা একদিকে যেমন অপরাধীদের জন্য আতঙ্ক, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের কাছে হয়ে উঠেছেন ভরসার প্রতীক।