কুয়াশায় ঢাকা সকাল, হাড় কাঁপানো শীত আর থমকে যাওয়া জনজীবন দিনাজপুরের বীরগঞ্জে শীত যেন এবার আরও নির্মম রূপ নিয়েছে। ভোরের আলো ফোটার আগেই কাজে বের হওয়ার কথা থাকলেও তীব্র ঠান্ডায় অনেক শ্রমজীবী মানুষ দেরিতে ঘর ছাড়ছেন। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন অসহায়, গরিব, দিনমজুর ও পথে-ঘাটে আশ্রয় নেওয়া ছিন্নমূল মানুষগুলো। এই কঠিন বাস্তবতায় মানবিকতার উষ্ণ আলো ছড়িয়ে দিতে এগিয়ে আসে ‘সিগনেচার ৯৪’ ব্যাচের বন্ধুরা বন্ধুত্বের স্মৃতি, ভালোবাসা আর দায়বদ্ধতাকে সঙ্গে নিয়ে।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে বীরগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে প্রায় দুই শতাধিক শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। দিনের আলোতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি এই মানবিক উদ্যোগ। রাত নামার পরও পৌর শহরের বিভিন্ন ফটক ও রাস্তার পাশে আশ্রয় নেওয়া ভবঘুরে ও অসহায় মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয় শীতের উষ্ণ উপহার।
শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে সহকারী অধ্যাপক মো. শামীম আকতার সজীব-এর সভাপতিত্বে এবং ব্যাংকার (এসপিও) মো. হারুনুর রশিদ কাঞ্চন-এর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ৬নং নিজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান আনিস,
বিশিষ্ট সমাজসেবক ও কালের কণ্ঠ বীরগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি সোহেল আহমেদ, আসাদুজ্জামান চৌধুরী মামুন,
ব্যাংকার মো. শফিকুল ইসলাম শফিকসহ ‘সিগনেচার ৯৪’ ব্যাচের অন্যান্য বন্ধুরা।
বক্তারা জানান, আজ ২৬ ডিসেম্বর ‘সিগনেচার ৯৪’ ব্যাচের বন্ধু আবু হাসনাত সোহাগ-এর ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় এই দিনটিকে স্মরণ করতেই এই ব্যতিক্রমী আয়োজন। একই সঙ্গে ৯৪ ব্যাচের প্রয়াত অন্যান্য বন্ধুদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়।
বক্তারা বলেন,“এই শীতবস্ত্র বিতরণ শুধু একটি সামাজিক কর্মসূচি নয় এটি আমাদের বন্ধুত্বের স্মৃতি, ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতার বহিঃপ্রকাশ। মহান আল্লাহ যেন বন্ধু আবু হাসনাত সোহাগসহ আমাদের সকল প্রয়াত বন্ধুকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন এজন্য সকলে দোয়া করবেন।
তাঁরা আরও বলেন, শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোই প্রকৃত মানবতা। সমাজের সামর্থ্যবান মানুষরা এগিয়ে এলে এই কনকনে শীতেও অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানো সম্ভব। ‘সিগনেচার ৯৪’ ব্যাচের এই উদ্যোগ অন্যদের মানবিক কাজে উদ্বুদ্ধ করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন বক্তারা।
শীতবস্ত্র পেয়ে কাজল গ্রামের বাসিন্দা শরবালা আবেগভরা কণ্ঠে বলেন,“এই শীতে আমাদের মতো গরিব মানুষের কষ্ট কেউ বুঝতে চায় না। অনেক রাত ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে কাটে। আজ এই শীতবস্ত্র পেয়ে মনে হচ্ছে কেউ আমাদের কথা ভেবেছে। যারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ভগমান তাদের ভালো রাখুন।”
শীতবস্ত্র হাতে পেয়ে অসহায় মানুষগুলোর চোখেমুখে ফুটে ওঠে স্বস্তি আর কৃতজ্ঞতার হাসি। তাদের কাছে এই সহায়তা শুধু শীত নিবারণের সামগ্রী নয় এটি মানবিক ভালোবাসা, সহমর্মিতা এবং বন্ধুত্বের স্মৃতিকে ধারণ করে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এক উষ্ণ বার্তা।