পাবনা জেলা আদালত চত্বরে চলমান মামলার বাদী ও আইনজীবী মায়া আক্তারকে প্রকাশ্যে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে জামিনপ্রাপ্ত এক আসামি। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার ঘটনার পর বুধবার (৩ ডিসেম্বর) রাতে পাবনা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি। ঘটনায় আদালত প্রাঙ্গণের নিরাপত্তা ও বিচারপ্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
জিডি সূত্রে জানা যায়, নাবালিকা দুই কন্যাকে অপহরণের চেষ্টার অভিযোগে চারজন এজাহারনামীয়সহ ৮–১০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী–৩ (বেড়া-সুজানগর) আদালতে মামলা করেন আইনজীবী মায়া আক্তার। আদালতের নির্দেশে সুজানগর থানা মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন।
এ মামলার ৪নং এজাহারনামীয় আসামি শ্রী বাবলু হালদার (৪৫) মঙ্গলবার আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট শাম্মী আক্তার তার জামিন মঞ্জুর করেন। তবে আদালত থেকে বেরিয়েই বাবলু হালদার প্রধান উকিল বারের সামনে বাদী ও আইনজীবী মায়া আক্তারকে লক্ষ্য করে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং মামলা তুলে না নিলে প্রাণে মারার হুমকি দেন। এ সময় আশপাশের লোকজন তাকে বাধা না দিলে পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারত বলে জানান মায়া।
পরে নিরাপত্তাহীনতা বোধ করে ওই দিন বারের আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি থানায় জিডি করেন।
হুমকির পর নিজের ফেসবুক ওয়ালে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের ক্ষোভ, হতাশা ও নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি তুলে ধরেন আইনজীবী মায়া আক্তার। স্ট্যাটাসে তিনি বলেন—
কোরবানি ঈদের দিন তাঁর নাবালিকা কন্যা ও আরও কয়েকজন শিশুকে অপহরণের চেষ্টা করা হয়। বহু চাপ ও হুমকি সহ্য করেও তিনি মামলার পথে হেঁটেছিলেন, কারণ আইন ও আদালতের প্রতি তাঁর আস্থা ছিল। কিন্তু মামলার গুরুতর ধারাগুলো (৩৪/৩৬৩/৩৯২/৩৯৪/৫১১) থাকা সত্ত্বেও তাঁকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে স্বল্প সময়ে আসামিকে জামিন দেওয়া তাকে হতাশ করেছে। এরপর আদালত চত্বরে প্রকাশ্যে হুমকি, এমনকি রাতে বাড়িতে গিয়েও মামলার বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করা হয় বলে দাবি করেন তিনি।
স্ট্যাটাসে বিচারব্যবস্থার নানা অসঙ্গতি, বিচারকের অভিজ্ঞতার স্বল্পতা এবং সংবেদনশীল মামলায় বাদীর বক্তব্য শোনার বাধ্যবাধকতা না মানার বিষয়ে তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি লিখেছেন, “আমি একজন আইনজীবী হয়েও যদি আদালতের সহযোগিতা না পাই, তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা কী হবে?”
মায়া আক্তারের বক্তব্যে জানা যায়, পুরো মামলাটি নিয়ে আইনজীবী সমাজ, সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারকসহ সবাই অবগত ছিলেন। তবুও গুরুতর অভিযোগের মামলার আসামিকে কোনো কাস্টডি ছাড়াই তাৎক্ষণিক জামিন দেওয়া বিচারপ্রার্থীদের আস্থায় আঘাত করেছে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।
মায়া আক্তার বলেন, আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের কোন ক্ষতি হলে এই দায়ভার আসামীদের সাথে সাথে এই রাষ্ট্রের এবং রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থার। কারণ যে রাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থা ভিকটিম সাপোর্ট দেয় না, সে রাষ্ট্রের অপরাধীর অপরাধ এর দায়ভার রাষ্ট্রের উপরেও বর্তায়।
পাবনা সদর থানার ওসি (তদন্ত) মনিরুজ্জামান মনির জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি যাচাই করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।