সোমবার , ১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - হেমন্তকাল || ১০ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

রুহুল বিলে বাউত উৎসব: মাছ কম, মানুষের আনন্দ বেশি

প্রকাশিত হয়েছে- শনিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৫
ভোরের অন্ধকার ভেদ করে যখন প্রথম আলোটা রুহুল বিলের জলে পড়ে, তখনই শুরু হয় এক অন্যরকম উৎসব। কেউ কাঁধে পলো, কেউ হাতে ঠেলা জাল আবার কারও সঙ্গে বাদাই জাল। মনে হয়, যেন মাছ নয়, মানুষই আজ ধরতে নেমেছে আনন্দের ঢেউ।
পাবনার ভাঙ্গুড়ার রুহুল বিলকে কেন্দ্র করে শনিবার অনুষ্ঠিত হলো বছরজুড়ে প্রতীক্ষিত লোকজ আয়োজন ‘বাউত উৎসব’। উৎসব মানেই তো মানুষের মেলা এখানেও তাই। কিন্তু এবার মাছের চেয়ে মানুষের সংখ্যাই বেশি।
দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষের কোলাহলে বিল যেন শহরের মেলায় রূপ নিল। কুষ্টিয়া, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল কোথা থেকে না এসেছে মানুষ! কেউ দল বেঁধে বাসে, কেউ আবার নিজের মোটরসাইকেল বা ইজিবাইকে।
রাস্তার ধারে সারি সারি বাস দেখে মনে হচ্ছিল এ যেন কোনো কনসার্ট চলছে। অথচ সবাই ছুটছে বিলে মাছ ধরতে, আবার কেউ শুধু দেখতে।
বিলে নেমে কেউ কেউ শোল বা রুই তুলে আনন্দে চিৎকার দিলেও বেশির ভাগের হাতই খালি। তবু মন খারাপ নয়। একে তো এত লোকের একসঙ্গে মাছ ধরা তার ওপর হাসিঠাট্টা, গল্প, উৎসবের আমেজ সব মিলিয়ে মাছের ঘাটতি টেরই পাওয়া যায় না।
সিরাজগঞ্জ থেকে আসা জহির রায়হান বলেন, এত লোক একসঙ্গে মাছ ধরছে মাছ নাই তো কী হইছে! মজা তো কম হইতেছে না।
আর নাটোরের বড়াইগ্রামের আরিফুল ইসলাম বললেন, মাছই যদি লক্ষ্য হতো, তাহলে তো বাজার থেকেই কিনে নিতাম। এখানে আসে মানুষ আনন্দ করতে।
তবে অভিযোগও কম নয়। অনেকেই বলছেন, প্রভাবশালীরা আগেই নিষিদ্ধ জাল ও গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে মাছ নিধন করে ফেলেছে। বিলের পানিতে এখন সেই গন্ধই ভেসে বেড়ায়।
স্থানীয় মৎস্য শিকারি আসলাম আলী ক্ষোভ ঝেড়ে বললেন, আগে আগেই সব মাছ মাইরা লিছে। গ্যাস ট্যাবলেট দিছে। তাই পানি গন্ধ ও মাছ মইড়া গেছে।
বিল দেখতে আসা আনিসুল হকের কণ্ঠেও হতাশা তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে মাছ তো কমবেই সাথে কমে যাবে এ উৎসবের প্রাণও।
বাউত উৎসব শুধু মাছ ধরার আয়োজন নয় এ দেশের লোকজ সংস্কৃতির গভীর শিকড়ের একটি অংশ। শিকারির দল বেঁধে বিলে নামার দৃশ্য, সবাই মিলে খোঁজাখুঁজি, হইচই এ এক অনন্য আনন্দ। শিশু-বৃদ্ধ, ছেলে-মেয়ে সব বয়সী মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে, মাছ হয়তো কমেছে কিন্তু বাঙালির উৎসব-প্রাণ কমেনি।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আলী আজম জানান, উৎসব হোক কিন্তু প্রকৃতির ক্ষতি করে নয়। নিষিদ্ধ জাল বা গ্যাস ট্যাবলেট ব্যবহার করলে আইনগত ব্যবস্থা হবে।
মাছ কম, ঠিক আছে। কিন্তু মানুষের উচ্ছ্বাস, হাসির শব্দ, বিলে নামার সেই মুহূর্তগুলোর আনন্দ এসবের কোনো ঘাটতি নেই। রুহুল বিল যেন আজ প্রমাণ করে দিল এখানে মাছের অভাব হতে পারে, কিন্তু মানুষের মন থেকে উৎসব নামের শব্দটাকে কেড়ে নেওয়া যায় না।

সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ©2017-2025 (এটি গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ) অনলাইন নিবন্ধন আবেদনকৃত। আবেদন নম্বর- ২১৮৮।